নজরুল ইসলাম: ধান বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য শস্য। এ দেশ বিশ্বের ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর ভিত্তি করে দেশের ধান উৎপাদনের তিনটি মরসুম লক্ষ্য করা যায় আউশ, আমন ও বোরো। ধান যে জাতেরই হোক না কেন তার রঙ সবুজ। পাকার আগমুহূর্তে হলদে থেকে সোনালী রঙ। যদিও আগে থেকেই বেগুনি রঙের ধান চাষের কথা অনেকেই জেনে গেছে। তারপরও শখের বসে চুয়াডাঙ্গার দোস্ত গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ছাদেক আলী প্রধান এক বিঘা জমিতে করেছেন বেগুনি রঙের ধানচাষ। প্রতিদিনই ছাদেক আলীর বেগুনি রঙের ধানের জমি দেখতে যায় উৎসুক চাষিরা। ২৭টি ধান বীজ থেকে পর্যায়ক্রমে বীজ তৈরী করে এক বিঘা ধানচাষ করেছেন চাষি ছাদেক আলী।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের দোস্ত গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ছাদেক আলী প্রধান বাড়ির সামনের মাঠে জৈষ্ঠ্য মাসের শেষের দিকে রোপণ করেন এক বিঘা বেগুনি রঙের ধানের চারা। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, চারপাশে সবুজ বোরো ধানের মাঝে বেগুনি ধানের জমি সত্যি দেখার মতো। সাধারণ জাতের ধানের চেয়ে এই ধানের একটি ছড়ায় ২৫ থেকে ২৭টি কুশি গজিয়েছে। ব্যতিক্রমী এই বেগুনি রঙয়ের ধান চাষ করে এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন ছাদেক আলী। ছাদেক আলী জানান, গতবছর ঝিনাইদহে বেগুনি রঙের ধানচাষ হচ্ছে জানতে পেরে জনৈক চাষির মাঠে যায়। তখন ওই চাষির ধান কেবল পাকা পাকা ভাব হয়েছে। ভাগ্যক্রমে ধানচাষির সাথে দেখা মেলে না। ওই কৃষকের জমিতে ধান দেখতে গিয়ে একটি ধানের শীষ হাতে করে নিয়ে আসি। যাতে ধান ছিলো মাত্র ২৭টি। সেই বীজ দিয়ে গত শীতে বীজতলা তৈরী করি। সেই চারা লাগায়। যা থেকে ১০ কেজি ধান উৎপাদন হয়। সেই ধান পুনরায় বীজতলায় ফেলে চারা তৈরী করি। সেই চারা দিয়ে জৈষ্ঠ্য মাসের শেষের দিকে ১ বিঘা জমি লাগিয়েছি। যদিও এখনও ধান পেকে ঘরে আসতে ভাদ্রমাস লেগে যাবে। আসলে শখের বশে বেগুনি রঙের ধান দেখতে গিয়ে একটি ধানের শীষ হাতে করে নিয়ে আসা এবং আজ এ পর্যন্ত। ধান ঘরে না উঠতেই অনেকেই বীজ নেবার জন্য বলে রেখেছে। গ্রামের চাষি আবু সালেহ, মিজানুর, খালেক, আত্তাব, জমির, রাশেদ, রহিমসহ অনেকেই বলেন, গতানুগতিক ধান চাষ নিয়ে কারো মনে তেমন কেনো কৌতুহল নেই। তবে ছাদেকের বেগুনি রঙের ধানের জমি দেখতে প্রতিদিনই লোক আসে। ছাদেকের কাছ থেকে বীজ নিয়ে অন্তত একবার চাষ করার ইচ্ছা আছে।
সূত্রে জানা যায়, বেগুনি জাতের এই ধান থেকে উৎপাদিত চালের ভাত ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এই বেগুনি ধান এক সময় চীন দেশে চাষাবাদ হতো। ধনাঢ্য পরিবারের খাবার হিসেবে গণ্য এই বেগুনি ধান স¤পর্কে অনেকে মনে করতেন, বেগুনি ধানের চাল খেলে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা যায়।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলী হাসান বলেন, আমি যখন ২০০৯ সালে দত্তনগর কৃষি খামারে ছিলাম তখন কয়েকটি চারা নিয়ে পরীক্ষামূলক চাষ করি। প্রতি বছরই ওই খামারে এ ধানের চাষ অল্প পরিসরে হয়ে থাকে। যেখান থেকে বীজ নিয়ে ঝিনইদহ এবং রংপুর এলাকায় চাষ হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের চাষিরা খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যে এ ধানের চাষ করে থাকে। তবে এ জেলাতে পারিবারিক খাদ্য শস্য উৎপাদনের লক্ষ্যে এ ধানের চাষ এখনও শুরু হয়নি। শখের বসত হয়তো কেউ লাগিয়ে থাকতে পারে। জেলাতে কতটুকু বেগুনি রঙের ধানচাষ হয়েছে এমন কোনো তথ্য জানা নেই। চাল দেখতে একটু বেগুনি রঙের হবে। সচরাচর আমরা যে রঙের চাল দেখে থাকি তেমনটি নয়।