চুয়াডাঙ্গার খাদ্য গুদামে আসা গমের ট্রাকে মিললো ২৮ বস্তা বালু
কারসাজির অভিযোগ অস্বীকার চালকদের : তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় খুলনা থেকে আসা বিদেশি গমের ভেতর মিলেছে ২৮ বস্তা বালু। উদ্ধার হয়েছে ইট-সিমেন্টের জমানো চাঁই (চাঙড়) ও ইট। ডিজিটাল স্কেলে ট্রাকসহ গম মেপে চুয়াডাঙ্গায় পাঠানোর আগে এ কারসাজি করা হয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা খাদ্য বিভাগে রীতিমতো ঝড় উঠেছে। রোববার ভোরে আসা ছয় ট্রাক গমের ভেতর এসব বালু, সিমেন্ট-বালুর জমানো চাঙড় ও ইট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই ছয়টি ট্রাকসহ ট্রাকের চালক ও হেলপারকে আটকে রাখা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। কারা কিভাবে গমের বস্তার ভেতরে বালুর বস্তা দিলো তা নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় তোলপাড় অবস্থা। তবে যারাই এ কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জেলা খাদ্য বিভাগ জানিয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনার চার নম্বর ঘাট থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার খাদ্যগুদামে বিদেশ থেকে আমদানি করা তিনশ’ টন গম আসার কথা। দ্বিতীয় চালানে রোববার ভোরে ১০০টন গম আসে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা খাদ্যগুদামে। খুলনার ৪নং ঘাট থেকে এসব গমের বস্তা ছয়টি ট্রাকে লোড করা হয়। সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্যগুদামে গম আনলোডের সময় একটি ট্রাকে গমের বস্তার সারিতে বালুভর্তি ৭টি বস্তা পাওয়া যায়। এরপর থেকেই নড়েচড়ে বসে জেলার খাদ্য বিভাগ। দুপুরে ট্রাকগুলো আনলোড করার সময় পাওয়া যায় একে একে বালুভোঝাই ২৮টি বস্তা। এছাড়া সিমেন্ট ও খোয়ার জমানো ছয়টি চাঁই বা চাঙড় ও দুটি ইটও পাওয়া যায়। চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্য গুদামের শ্রমিক মুক্তার আলী বলেন, ‘আমরা প্রথমে একটি ট্রাকে কয়েকটি বালুর বস্তা পাই। এরপরই আমাদের সন্দেহ হয়। এ সময় সব ট্রাকেই কমবেশি বালুর বস্তা উদ্ধার হতে থাকে। শেষমেশ ২৮ বস্তা বালু পাই আমরা।’ একটি ট্রাকের (চট্ট-মেট্রো ১১-৭৮৯৪) চালক রাব্বী হোসেন ও হেলপার মেহেদী হাসান বলেন, ‘খুলনায় গমের ট্রাক লোড হওয়ার পর আমরা সরাসরি চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে এসেছি। ইট-পাথর বা বালু কিভাবে ট্রাকে উঠেছে তা আমরা জানি না। এ বিষয়ে কিছুই বলতেও পারবো না।’ চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, ‘গমের বস্তা লোড হওয়ার পর খুলনা থেকে ব্রিজ স্কেলে ওজন শেষে চালান করে দেয়া হয়। চালান অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গায় আবারও ওজনের পর বস্তা আনলোড করা হয়। এ সময় গমের পরিবর্তে ২৮টি বস্তায় বালু পাওয়া যায়। বর্তমানে গমের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ২৮ বস্তা গম গোপনে সরিয়ে তার বদলে বালু ভরে দিয়েছে বলে ধারণা করছি। ২৮ বস্তা বালু, সিমেন্ট-বালুর চাঙড় ও ইটের যা ওজন তা দেখে ধারণা করছি প্রায় এক লাখ টাকা মূল্যের গম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ট্রাক থেকে। তবে সব ট্রাক আনলোড হলে পুরো হিসাবটা মেলানো যাবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খুলনার সরকার এন্টারপ্রাইজ, জোনাকি এন্টার প্রাইজ ও সানরাইজ এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা সদর গোডাউনে মোট ৩০০টন গম পাঠানোর কথা ছিল। সেই অনুযায়ী প্রথম কিস্তির ১০০ টন গম আসে শুক্রবার। দ্বিতীয় কিস্তির ১০০ টন গম রোববার ভোরে চুয়াডাঙ্গায় আসে। কিন্তু গমের ভেতর বালুর বস্তা দেখে রীতিমতো ভড়কে যান এখানকার কর্মকর্তারা। এ ঘটনার পর ছয়টি ট্রাক এবং ট্রাকের চালক ও হেলাপারকে নিজেদের আটকে রাখা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক একেএম শহিদুল হক শাহীন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে জানিয়েছি। তারা আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবে কাজ করবো। তারা সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে ছয়টি ট্রাক এবং তার চালক ও হেলপারকে ছাড়া হবে না। আমরা প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো। তিনি আরও বলেন, গম পরিবহনের ঠিকাদার বা ড্রাইভার ও হেলপারদের যে কেউ গম নামিয়ে নিয়ে বালু বা পাথর তুলে দিয়েছে ট্রাকে। ঠিকাদার যদি এ কা-ের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তাদের লাইসেন্স বাতিল হবে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আরও বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্তের জন্য দুপুরেই তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির সদস্যরা হলেন আলমডাঙ্গা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল হামিদ, চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্য গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও জেলা কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক সানজিদা বানু। তারা আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। এরপর দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার সুপারিশ করা হবে।’