স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী নেতাকর্মীরা। কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন এ নিয়ে এলাকায় চলছে জল্পনা-কল্পনা। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে বর্তমান চেয়ারম্যানসহ ১৬ নেতাকর্মী আবেদন করেছেন। অপরদিকে কুড়–লগাছি ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যানসহ ৯ নেতাকর্মী দলীয় মনোনয়ন পেতে আবেদন করেছেন। আবেদনকারীরা সবাই দলের ত্যাগী নেতা। তবে আবেদনকারীদের মধ্যে কয়েকজন গতবারের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। অতীতের নির্বাচন অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই মনে করছেন দলীয় হাইকমান্ডের কাছে সমর্থন আদায় করতে পারলে নৌকা প্রতীক নিয়ে ও অন্যান্য পদে দলীয় আনূকূল্য পেলে বিজয় সুনিশ্চিত। তাই এ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সুকৌশলে দৌড়ঝাপ শুরু করে দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা উর্ধ্বতন নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে নিজ নিজ পক্ষে শক্তিশালী সমর্থক বলয় তৈরি করে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ব্যস্ত রয়েছেন। এছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করতে না পারলেও নানা কৌশলে জনগণের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করছেন। আবার অনেকেই মনোনয়ন ক্রয় করতে মোটা অংকের টাকা জোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা মনে করেন যে, মোটা অংকের টাকা দিয়ে মনোনয়ন ক্রয় করে নৌকার টিকেট বাগিয়ে নিতে পারলেই বিজয় সুনিশ্চিত। এমন ভাবনা থেকেই তারা টাকার জোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে গেছেন। এদিকে দলীয় সূত্র জানিয়েছে, অতীতে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তাদেরকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে না। স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে দল থেকে মনোনীত প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা ‘বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এবার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্র বলছে, দলীয় প্রার্থীর বাইরে কেউ নির্বাচন করলে আজীবনের মতো দল থেকে বহিষ্কার হতে পারেন এবং কখনো নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন না। নেতারা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। অনেকটা ছাড় দেয়া হয়েছে। দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে সম্মান জানাতে বলা হলেও কার্যত তা কোনো কাজে আসেনি। যে কারণে কঠোর সিদ্ধান্ত ছাড়া উপায় থাকছে না। দলীয় মনোনয়নের বিপক্ষে গিয়ে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে স্থানীয় রাজনীতির গ্রুপিং, সাংগঠনিক কোন্দল, দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়া, চেইন ইন কমান্ড ভেঙে পড়াকে কারণ হিসেবে মানছেন নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন কমিটি পুনর্গঠন না হওয়ায় উপজেলা, ইউনিয়নের মতো তৃণমূলে কোন্দল বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন ১৬জন। তারা হলেন দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বর্তমান চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান ভুট্ট। তিনি গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তবে এর আগে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শফিক উর রহমান। তিনি হরিরামপুর গ্রামের মৃত সুরাত আলীর ছেলে। শফিক উর রহমান বি.কম (বিএড)। অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক। দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজির আহমেদ। তিনি কানাইডাঙ্গা গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে। নজির আহমেদ এইচএসসি পাস। নজির আহমেদ বেকারি ব্যবসায়ী। দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মোহা. আব্দুস সালাম। তিনি কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের মৃত সুরমান আলী বিশ্বাসের ছেলে। তিনি এইচএসসি পাসি। সালামেরও আছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাহিদুর রহমান মুকুল। তিনি দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কোমরপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত মফিজুর রহমানের ছেলে। জাহিদুর রহমান মুকুল এলএলবি (অনার্স)। দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ১নং সিনিয়র সহসভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. আব্দুল করিম বিশ্বাস। তিনি শিবনগর গ্রামের রহিম বকস বিশ্বাসের ছেলে। তিনি এসএসসি পাস। গতবারের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। এবার তিনি দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন। দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. সহিদুল হক। তিনি কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের মৃত দিলু ম-লের ছেলে। সহিদুল হক এইচএসসি পাস। গত নির্বাচনে সহিদুল হকও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের মৃত ফজলুল হক বিশ্বাসের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ক্রীড়া বিয়ষক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও জেলা কৃষক লীগ ও স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। মো. সাইফুল ইসলাম এমএ পাস। দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন পীরপুরকুল্লা গ্রামের কিতাব শেখের ছেলে চুল ব্যবসায়ী ফকির মুহাম্মদ। বর্তমানে তিনি ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করছেন। ফকির মুহাম্মদ এসএসসি পাস। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি চুল ব্যবসায়ী মো. লিয়াকত আলী। তিনি কুতুবপুর গ্রামের মৃত নবীছদ্দীন বিশ্বাসের ছেলে। লিয়াকত আলী এসএসসি পাস। দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আলাউদ্দিন। তিনি কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের মৃত কদম আলীর ছেলে। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন মুন্সিপুর গ্রামের মৃত আলিমদ্দীনের ছেলে মো. সহিদুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন বয়রা গ্রামের মৃত আনিছ উদ্দিনের ছেলে মো. নাসির উদ্দিন। তিনি এইচএসসি পাস। বর্তমানে ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন কার্পাডাঙ্গা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শওকত আলী। কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের কেরামত আলী ছেলে জাতীয় শ্রমিক লীগের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সদস্য ও দামুড়হুদা উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি অষ্টম শ্রেণি পাস। দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ক্লিনিক ব্যবসায়ী মো. কামরুজ্জামান রানা। তিনি আরামডাঙ্গা গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে। ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সানাউল কবীর শিরিন। তিনি কোমরপুর গ্রামের রবিউল হকের ছেলে।
কুড়–লগাছি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন ৯ জন। তারা হলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ মো. এনামুল করিম। তিনি গতবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। শাহ মো. এনামুল করিম কুড়–লগাছি গ্রামের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে। বিএ পাস করে ব্যবসায় পরিচালনা করছেন তিনি। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন ধান্যঘরা গ্রামের আব্দুল মালিতার ছেলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ বাহার। গতবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়েও বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। তিনি বর্তমানে কুড়–লগাছি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পাল করছেন। হাবিবুল্লাহ বাহার বিএ পাস করে ব্যবসা করছেন। দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন। তিনি সদাবরী গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে। সরোয়ার হোসেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। পেশায় ব্যবসায়ী। দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসমত আলী। তিনি ধান্যঘরা গ্রামের আবু তাহেরে ছেলে। হাসমত আলী এমএসএস (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) পাস একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন জামান তারিক। তিনি ধান্যঘরা গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে। এসএসসি পাস করে তিনি ব্যবসা করেন। জামান তারিক বর্তমানে কুড়–লগাছি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য কামাল হোসেন। তিনি প্রতাবপুর গ্রামের মৃত শাহতুল্লাহ’র ছেলে। অষ্টম শ্রেণি পাস করে ব্যবসা করেন। গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। দলীয় মনোয়ন চেয়েছেন চন্ডিপুর গ্রামের মৃত আবু সিদ্দিকের ছেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য তারিকুল ইসলাম। তিনি এসএসসি পাস। তারিকুল ইসলাম পেশায় ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন কুড়–লগাছি গ্রামের মৃত আবুল কাসেমের ছেলে কাফি উদ্দিন। আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো পদে না থাকলেও আওয়ামী পরিবারের সদস্য। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন ধান্যঘরা গ্রামের মৃত গরীবুল্লাহ ছেলে আনিছুল হক। তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো পদে না থাকলেও দলের সমর্থন করেন। আনিছুল হক পেশায় শিক্ষক।
পূর্ববর্তী পোস্ট
নির্বাচনে ভরাডুবির আশঙ্কা বিএনপিকে পেয়ে বসেছে: ওবায়দুল কাদের
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ