চুয়াডাঙ্গাকে গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত জেলা ঘোষণা করা হবে আজ
চতুর্থধাপে নির্মাণ করা ঘরগুলো দেখতে সরেজমিনে জেলা প্রশাসক
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত জেলার স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। এ উপলক্ষ্যে জেলায় আজ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের উপকারভোগীদের মধ্যে ৬৯টি ঘর আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর করা হবে। এই নিয়ে চারদফায় মোট হস্তান্তরকৃত ঘরের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৯৫টি।
এদিকে জেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণার আগে চতুর্থধাপে নির্মাণ করা ঘরগুলো দেখতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান সহকর্মীদের নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের মর্তুজাপুর পরিদর্শন করেন এবং উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভুইয়া, সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাজহারুল ইসলাম ও কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলি আহম্মেদ হাসানুজ্জামান মানিক উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক জানান, ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় এ জেলায় ‘ক’ শ্রেণির ( ভূমিহীন ও গৃহহীন ) পরিবারের জন্য ৪ দফায় মোট ৬৯৫টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে তিনদফায় ৬২৬টি ঘর উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবার জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠান করে বাকি ৬৯টি পরিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর হস্তান্তরসহ এ জেলাকে ‘ভূমিহীন গৃহহীন’ জেলা হিসেবে ঘোষণা দেয়া হবে। এসব ঘরের জন্য প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন বাছাই এবং কবুলিয়ত ও নামজারী সম্পন্ন করা হয়েছে। উদ্বোধনের আগেই উপকারভোগীদের দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। মর্তুজাপুরে ১০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার নতুন ঘর পেয়েছেন। নতুন ঘর পেয়ে সুকীরন নেছা বলেন, ‘আমাগের আগে এক টুকরো জমিই ছিলো না, অ্যাকন পাকা ঘর আর জমির মালিক। টিউপঅয়েল, পাকা পায়খানা, ঘরে ঘরে কারেন্টের লাইট-ফ্যান, ভাবতিই মনডা ভালো হয়ে যাচ্চে। আমি অ্যাতো খুশি যে বুলে বুজাতি পাইরব না। ঈদির আগেই ঈদির আনন্দ আমাগের পরিবারে।’
এদিকে সুকীরনের কথার সুরে সুর মিলিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রাশিদা খাতুন বলেন, ‘পুধানমন্ত্রী আমাগের ঘর দিয়েচে, ইতি আমরা খুপ খুশি। ১২ বচরের মেয়ে আরিফারে নি আগে অন্যির জমিতি মাটির ঘরে থাকতাম। ঝড়-বিষ্টির দিনি ঘুমাতি পারতাম না। অ্যাকন পাকা দিয়াল, মানান টিনির চাল দিয়া নতুন ঘরে আরাম করে থাকচি। মেয়েডাও খুশি, আমিউ খুশি।’
কোন দফায় ঘরের খরচ কত: আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ১৩৪টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ২ শতক জমিসহ ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয়। সে সময়ে প্রতিটি ঘরের নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছিলো ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে একই বছরের ২০ জুন ১৭৫টি ঘর উপহার দেয়া হয়। যার প্রতিটির নির্মাণ খরচ ধরা হয় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ঘরগুলোকে অধিকতর টেকসই ও জলবায়ু সহিষ্ণু করে গড়ে তুলতে সরকার তৃতীয় পর্যায়ে নকশা পরিবর্তন করে নির্মাণ শেষে ৩১৭টি ঘর ২০২২ সালের ২০ জুলাই হস্তান্তর করা হয়। এই পর্যায়ে উন্নতমানের টিনশেডের আধাপাকা প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা এবং চতুর্থ পর্যায়ে ৬৯টি গৃহের প্রতিটির নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা।