দামুড়হুদায় ভরা বর্ষা মরসুমেও মাঠ ফেটে চৌচির : বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ
হাবিবুর রহমান: ভরা বর্ষা মরসুমে বৃষ্টির দেখা নেই। মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। মাঠের ফসল নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কৃষককুল। যখন মাঠে ঘাটে খাল বিলে পানিতে ভরপুর থাকার সময় তখন আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণ মাস শুরু হলেও এমন ভরা বর্ষা মরসুমে বৃষ্টির দেখা মিলছে না। আষাড়ের প্রথম দিকে ছিটে ফোঁটা বৃষ্টি দেখা দিলেও তাতে কোনো উপকার আসছে না। বর্ষা মরসুমে উপজেলার মাঠে মাঠে আমন ধান, পাট পেঁপেসহ বিভিন্ন ফসল রয়েছে। এ সময় সাধারণত মাঠের ফসল বৃষ্টি নির্ভর হয়ে থাকে। বৃষ্টি নির্ভর এ সময় আউষ ধান, পাটসহ বিভিন্ন ফসলে সেচযন্ত্রের ব্যবহার খুবই কম হয়ে থাকে। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। বৃষ্টির অপেক্ষায় থেকে ধানক্ষেত শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। খাল-বিল শুকনো ধান নিয়ে যেমন দুঃচিন্তায় তেমনি পাট জাগ দেয়া নিয়েও কৃষকের চিন্তার শেষ নেই।
দামুড়হুদা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলায় এবার আউস ধানের আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৬৪৮ হেক্টর, পাট ৭ হাজার ৬৪৮, পেঁপেঁ ৭৬৩ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও ঝাঁল, কলা ও বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ হয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এবার ক্ষেতে প্রচুর পরিমাণ সেচ দিতে হওয়ায় কৃষকের বাড়তি খরচ হচ্ছে উৎপাদন যেমন ব্যহত হবে। উপজেলার পারদামুড়হুদা গ্রামের কৃষক আব্দুস ছামাদ বলেন, এসময় কোনোবছর জমিতে সেচের প্রয়োজন হয় না। বৃষ্টির পানিতে ধান হয়ে যায়। কিন্তু এবার তার উল্টোটা হচ্ছে। তিনি দেউলি মাঠে দেড় বিঘা জমিতে ব্রি-৪৮ ধান লগিয়েছে। প্রায় ১মাস বয়স হয়ে গেছে। লাগানো পর থেকে বৃষ্টির দেখা নেই। দুইদিন পরপর সেচ দিতে হচ্ছে। এতে যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে মনে হচ্ছ এবার খরচ উঠবে না। দামুড়হুদার মাহাবুবুর রহমান বলেন, তিনি এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। কাটার সময় হয়ে গেছে। অতিরিক্ত ক্ষরায় ক্ষেতে পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে কাটতে পারছে না। জাগ দেয়া নিয়ে দুঃচিন্তায় রয়েছেন।
দামুড়হুদা উপজেলা সদরের মের্সাস ইয়াছিন ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী আবু জায়র বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে ক্ষেতে সেচ দিতে চালানো হচ্ছে মাঠে মাঠে স্যালো ইঞ্জিন। প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড পরিমাণ ডিজেল যা বিগত ১০বছরে এই মরসুমে এতো পরিমাণ তেল বিক্রি হয়নি।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এ মরসুমটি কৃষকদের জন্য বৃষ্টি নির্ভর। মাঠে বিপুল পরিমাণ ধান, পাট, পেঁপে, ঝালসহ বিভিন্ন সবজি রয়েছে। ভরা মরসুমে তাবদাহ চলছে। এতে চাষিদের ধান ক্ষেতে নিয়মিত সেচ দিতে হচ্ছে। এতে করে যেমন উৎপাদন খরচ বাড়বে তেমনি ফলও কম হবে প্রকৃতির কারণে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাটের গ্রথ ভালো হবে না। অতিরিক্ত তাবদাহে উচ্চ জমিতে পাট শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। পাট পচানোর মত খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট কাটতে পারছে না কৃষকেরা। এছাড়াও কলা, পেঁপেসহ সবজি ক্ষেতে নিয়মিত সেচ দিতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ যেমন অনেক বেশি হবে ফলনও কম হবে। এদিকে, অনাবৃষ্টি থেকে বাঁচতে বৃষ্টির আশায় শনিবার উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামে বেলা ১১টার দিকে গ্রামের মাঠে ‘ইসতিসকার’ নামাজ আদায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।