ঘাতক জামাইয়ের যাবজ্জীবন ও চার সহযোগির ৭ বছরের কারাদণ্ড
দর্শনায় শাশুড়িকে হত্যা করে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে অপহরণ মামলার রায়
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় সাবেক শাশুড়িকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে জামাইকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় আরও ৪ জনের ৭ বছর করে কারাদ-াদেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ আদালতের জিয়া হায়দার এ রায় ঘোষণা করেন। পরে তাদেরকে জেলা কারাগারে নেয়া হয়। দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন যশোরের চৌগাছা থানার গুয়াতলী গ্রামের মৃত শের আলী ম-লের ছেলে আতিয়ার রহমান। তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। এছাড়া একই গ্রামের মৃত জহর আলী ম-লের ছেলে আব্দুল লতিফ, লিয়াকত আলীর ছেলে মোমিন, মৃত হুজুর আলী ম-লের ছেলে আব্দুল গনি ও একই উপজেলান বাদেখানপুর মাঝপাড়ার মৃত ইসমাইল বিশ্বাসের ছেলে আনোয়ার হোসেন আনুকে ৭ বছর করে কারাদ-াদেশ দেয়া হয়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের দিকে দর্শনা পৌর এলাকার আজমপুর মসজিদপাড়ার আব্দুল কাদেরের একমাত্র মেয়ে জোসনা খাতুনের বিয়ে হয় যশোর চৌগাছা উপজেলার শুয়াকলি গ্রামের শের আলীর ছেলে আতিয়ার রহমানের সাথে। জোসনা ও আতিয়ার সম্পর্কে মামাতো-ফুপাতো ভাই-বোন হলেও নানা কারণে বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে মাদকাসক্তসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিলো জোসনার। বিয়ের বছর চারেকের মাথায় আতিয়ার ও জোসনার বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। সে সময় আতিয়ার ও তার সহযোগিরা জোর পূর্বক জোসনাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। আত্মীয় স্বজনদের সহযোগিতায় জোসনাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। সে থেকে জোসনা ও তারা পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিতো আতিয়ার রহমান।
২০১৪ সালের ২৬ জুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে একটি ছাই রংয়ের মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায় আব্দুল কাদেরের বাড়ির সামনে। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই তালাকপ্রাপ্তা স্বামী আতিয়ার রহমান ও তার অস্ত্রধারী সহযোগিরা কাদেরের বাড়িতে প্রবেশ করে জোরপূর্বক জোসনাকে গাড়ীতে তোলার চেষ্টা চালায়। জোসনার মা তহমিনা বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে জামাই আতিয়ার এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে তাকে। জোসনা ও তহিমনা চিৎকার শুরু করলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসার আগেই তহমিনাকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাইক্রোবাসের চাকার নিচে ফেলে পিষ্ট করে জোসনাকে অস্ত্রের মুখে নিয়ে পালিয়ে যায় আতিয়ার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। প্রতিবেশীরা রক্তাক্ত তহমিনাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নেয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে নেয়ার আগেই রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যান তহমিনা। ওইদিন রাত আড়াইটার দিকে তৎকালীন দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ শিকদার মশিউর রহমান গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে চৌগাছা পাচ নয়না গ্রামের হযরত আলীর বাড়ি থেকে জোসনাকে উদ্ধার করেন। তবে সে রাতে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এ ঘটনায় ওই রাতেই আব্দুল কাদের বাদি হয়ে যশোর চৌগাছার গুয়াতলির পশ্চিমপাড়ার শের আলী ম-লের ছেলে আতিয়ার রহমান (৩৫), একই গ্রামের জহুর আলী মন্ডলের ছেলে আ. লতিফ (৩০), হুজুর আলী ম-লের ছেলে আব্দুল গণি (২৮), লিয়াকত আলীর ছেলে আ. মোমিন (৩০) ও একই উপজেলার বাদেরখান মাঝপাড়ার ইসমাইল বিশ্বাসের ছেলে আনোয়ার হোসেন ওপফে আনু’র (৩৫) বিরুদ্ধে দামুড়হুদা থানায় হত্যা ও অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলার দেড় মাসের মাথায় পুলিশ গ্রেফতার করে আনোয়ার হোসেন আনুকে ও ৩ মাসের মাথায় আদালত চত্বর থেকে গ্রেফতার হয় মামলার প্রধান আসামি আতিয়ার রহমান। মামলাটির তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর আদালতে চার্জশীট দাখিল করে দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন এসআই মিজানুর রহমান। এরপে ১৪ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ ও পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে দীর্ঘ ৮ বছর পর এ মামলায় রায় ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে মামলাটি পরিচালনা করেন পিপি বেলাল হোসেন।