গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ইনসারুল হক ইন্সুর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছেন জেলা রির্টার্নিং অফিসার। গতকাল মঙ্গলবার জেলা নির্বাচন অফিসে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে এ ঘোষণা দেয়া হয়। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সাবেক মেয়র আহম্মেদ আলী, বিএনপি প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলু, স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়র আশরাফুল ইসলাম, ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী আবু হুরাইরার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রির্টার্নিং অফিসার।
এদিকে যাচাই-বাছাই অনুষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে ভোট প্রদানের নানা দিক ও আইন শৃংখলা পরিস্থিতির বিষয়ে নির্দেশনা দেন রির্টার্নিং অফিসার। নির্বাচনী আচরণবিধি মানাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানিয়েছেন তিনি। যাচাই-বাছাই শেষে মেয়র পদে পাঁচজন ছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১০ জন ও নয়টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৪০ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর সকলেরই মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রির্টানিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা জেলা নির্বাচন অফিসার আহমেদ আলী। মনোনয়ন ফরম যথাযথ পূরণ, প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর তথ্য সঠিক থাকা, হলফনামা এবং অন্যান্য তথ্য সঠিক থাকায় এসব প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন তিনি। অপরদিকে বাতিল হওয়া ইন্সারুল হক ইন্সুর মনোনয়ন ফরমে তিনি কোন দলের কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন তার কিছুই উল্লেখ ছিলো না। এছাড়াও তার প্রস্তাবকারীর স্বাক্ষর নেই এবং স্বাক্ষর বিহীন হলফনামা দাখিল করেছেন। এসব কারনে মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রির্টানিং অফিসার। গাংনী পৌরসভা নির্বাচনে বৈধ ৫৫ প্রার্থীর কারও ঋণ খেলাপি নেই। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকের নামে মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে। তবে কেউ দ-িত নন বিধায় মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে।
যে কারণে মেয়র পদে আশরাফুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বৈধ:
বর্তমান মেয়র আশরাফুল ইসলাম এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ফৌজদারী একটি মামলায় তিনি দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন। উচ্চাদালত থেকে জামিন পান তিনি। যাচাই-বাছাইকালে আশরাফুল ইসলাম বলেন, গত ১০ ডিসেম্বর মহামান্য হাইকোট মামলা থেকে তাকে খালাস দিয়েছেন। ফলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্য। উচ্চাদালতের আদেশের বিষয় তাই যাচাই প্রয়োজন উল্লেখ করে তার মনোনয়নপত্রের বৈধ-অবৈধতার বিষয়টি অপেক্ষমান রেখে মেয়র পদে অন্যান্যদের যাচাই সম্পন্ন করেন রির্টার্নিং অফিসার।
এ বিষয়ে জেলা রির্টার্নিং অফিসার বলেন, আইন অনুযায়ী ফৌজদারী কোন মামলায় কেউ যদি দুই বছরের কেউ সাজাপ্রাপ্ত হন তাহলে জামিনপ্রাপ্তির পাঁচ বছরের পূর্বে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না যদিনা মামলাটি খারিজ হয়। তবে আশরাফুল ইসলামের সাজাপ্রাপ্তির ওই মামলা থেকে মহামান্য হাইকোর্ট তাকে খালাস দিয়েছেন। ফলে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্য। আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে দুপুরে তার মনোনয়নপত্র বৈধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই অনুষ্ঠানে সকল প্রার্থী ছাড়াও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আগামী ২৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পার হলেই প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফা পৌর নির্বাচনে গাংনী পৌরসভার ভোট গ্রহণ করা হবে।
সংরক্ষিত মহিলা ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের বৈধ প্রার্থী: ১নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মিজানুর রহমান (মদন), সাবেক কাউন্সিলর সামসুদ্দীন, আলমগীর হোসেন, সুজন আলী ও সাইফুজ্জামান। ২নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মিজানুর রহমান ও সাবেক কাউন্সিলর আলেহিম এবং মোকলেছুর রহমান। ৩নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান, সামিউল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, আব্দুল লতিফ ও মোঃ বুলু। ৪নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আছের উদ্দীন ও মিজানুর রহমান। ৫নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর বাবুল আকতার, সাবেক কাউন্সিলর আতিয়ার রহমান, বজলু ও ইয়ামিন আলী বাবলু। ৬নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর নবীর উদ্দীন, শাহীনুজ্জামান, নাসির উদ্দীন, মোখলেছুর রহমান, মনিরুজ্জামান, সাইদুর রহমান, রবিউল ইসলাম ও আজির উদ্দীন। ৭নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর বদরুল আলম, সানোয়ার হোসেন, মকছেদ আলী ও মুতালেব হোসেন। ৮নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর শাহিদুল ইসলাম, সাবেক মেম্বার মোকলেছুর রহমান, হাফিজুল ইসলাম ও আকতারুল। ৯নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর এনামুল হক, আব্দুল জলিল, মোমিনুল ইসলাম, জাকির হোসেন ও রাশিদুল ইসলাম।
সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩টি ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মোট ১০ জন। এদের মধ্যে সংরক্ষিত ১নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ফিরোজা খাতুন ও সাবেক কাউন্সিলর পারভীন আক্তার। ২নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ঝর্না খাতুন, আনোয়ারা খাতুন ও বর্তমান কাউন্সিলর মলিদা খাতুন। সংরক্ষিত ৩নং ওয়ার্ডে মানজিরা খাতুন, মমতাজ বেগম, সাজেদা খাতুন, কানিজ ফাতেমা ও বর্তমান কাউন্সিলর পারভীনা খাতুন।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যানার-পোস্টার অপসারণের নির্দেশ : গাংনী পৌরসভা এলাকায় নির্বাচন বিষয়ে প্রদর্শন করা সকল ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড, পোস্টার অপসারণে ২৪ ঘন্টা সময় দিয়েছেন রির্টার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা জেলা নির্বাচন অফিসার আহমেদ আলী। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে নিজ কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই অনুষ্ঠানে প্রার্থীদের প্রতি তিনি এ নির্দেশনা দেন। পৌরসভা নির্বাচনে আচরণবিধি অমান্য করে এসব বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড ও পোস্টার, ব্যানার টাঙানো থাকলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
জনসভা ও শো-ডাউনে নিষেধাজ্ঞা : পৌরসভা নির্বাচনী আরচণ বিধি অনুযায়ী পথসভা ও ঘরোয়া সভা ছাড়া জনসভা এবং মোটর সাইকেল শো-ডাউন করা যাবে না বলে উল্লেখ করেন রির্টার্নিং অফিসার। তিনি প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, গাংনীতে ইতোমধ্যে মিছিল শো-ডাউন করা হয়েছে। যা অত্যান্ত দুঃখজনক। আমরা চায় না কাউকে দ- দিতে। গাংনীবাসী আইন শৃংখলা মেনে চলবেন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, কোনো প্রার্থী ঘরোয়া ও পথসভা করতে চাইলে ২৪ ঘণ্টা আগে থানায় লিখিত অবগত করবেন। যাতে পুলিশ সেখানে নিরাপত্তা দিতে পারে। ৫টির বেশি মোটরসাইকেল একসাথে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত হলে সেটি শো-ডাউন হিসেবে গণ্য হয়। নির্বাচনী আচরণ বিধি দেখভালের জন্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন বলেও জানান তিনি। প্রচারণা: গাংনী পৌরসভা এলাকা খুব বড় নয় উল্লেখ করে রিটার্নিং অফিসার বলেন, একজন প্রার্থী মাত্র একটি মাইক প্রচারের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন। যা প্রচারণার জন্য যথেষ্ট। তবে উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে কোনো অবস্থায় শব্দ দূষণ সৃষ্টি করা যাবে না। দুপুর ২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত মাইকে প্রচারণা চালানো যাবে।