গাংনীর বামন্দী-তেঁতুলবাড়িয়া সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতদলের তাণ্ডব
পুলিশ ক্যাম্পের অদূরে পথচারীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লুটপাট
গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দী-তেঁতুলবাড়িয়া সড়কে গাছ ফেলে তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতি করেছে একদল সশস্ত্র ডাকাত। গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে আড়াইট পর্যন্ত এ ডাকাতি সংঘঠিত হয়। ডাকাতদল পথচারীদের কাছ থেকে নগদ দেড় লক্ষাধিক টাকা ছিনিয়ে নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, বামন্দী পুলিশ ক্যাম্পের অদূরে পুলিশ বক্সের সামনে সড়কের পাশে অবস্থান নেয় ডাকাতরা। সড়কের পাশের গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে পথচারীদের থামতে বাধ্য করে। এ সময় মোটরসাইকেল, ট্রাক ও স্যালোইঞ্জিন চালিত যানবাহন আটকে এর চালক ও যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পথচারীদের ব্যবহৃত সোনার গয়না ছিনিয়ে নেয়। ঘণ্টা তিনেক ডাকাতের তা-বের পর ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। এ সময় পালিয়ে যায় ডাকাতরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, গেল চার মাস আগে একই স্থানে গাছ ফেলে ডাকাতি হয়েছিলো। বামন্দী থেকে কাজিপুুর ও তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের যাতায়াতের জন্য এই সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। নতুন নির্মিত প্রশস্ত এই রাস্তা কাথুলী হয়ে মেহেরপুর শহর পর্যন্ত সংযুক্ত। ফলে গভীর রাত পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল করে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বামন্দী থেকে দেবীপুর গ্রাম পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা ফাঁকা। যেখানে কোনো বসতি স্থাপনা নেই। ফলে ফাঁকা সড়কে অনেকে হাওয়া উপভোগ করতে যায়। শনিবার রাতে ডাকাতির শুরুতেই বামন্দী এলাকায় বিদ্যুত ছিলো না। এ সময় কয়েক যুবক হাওয়া উপভোগের উদ্দেশ্যে ওই সড়কে যায়। তার আগেই পুলিশ বক্সে পুলিশ সদস্যরা না থাকায় ফাঁকা পেয়ে ডাকাতরা অবস্থান নেয়। বক্সের বিপরীত পাশেও সড়কের পাশে ডাকাতদের কয়েকজন অবস্থান করছিলো। বামন্দী থেকে যাওয়া ওই যুবকদেরকে সড়কের ওপরে গাছ ফেলে থাকতে বাধ্য করে ডাকাতরা। এ সময় অস্ত্রের মুখে প্রথমেই তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনগুলো ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা। এভাবে তিন ঘণ্টা ধরে যারাই ওই সড়কে গেছে তারাই ডাকাতির মুখে পড়ে। ডাকাতরা মোবাইল ফোনগুলো কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে রাখে। ডাকাতি শেষে একটি ব্যাগের মধ্য থেকে স্ব স্ব মোবাইল ফোন ফিরে পান ডাকাতির কবলে পড়া পথচারীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, ডাকাতির শেষ পর্যায়ে করমদি গ্রাম থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স আসছিলো। দেবীপুর গ্রাম পেরিয়ে ঘটনাস্থলে আসার আগে অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন দেন চালক। এতে পুলিশের গাড়ি মনে করে ডাকাতরা সড়ক ছেড়ে রাস্তার পাশে ক্ষেতের মধ্যে অবস্থান নিয়ে পালানোর প্রস্তুতি নেয়। কাছাকাছি আসার পর তারা বুঝতে পারে এটি অ্যাম্বলেন্স। তখন রামদা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে কোপাতে থাকে ডাকাতদের কয়েকজন। চালক দিশেহারা হয়ে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পেছন দিকে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে সে দেবীপুর গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে পুলিশে কল দেয়। এর পরেই ডাকাতরা পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানায়, এক সময় এই স্থানটি ডাকাতির স্থান হিসেবে পরিচিত ছিলো। কিন্তু বেশ কয়েক বছর এমন ডাকাতির ঘটনা না থাকায় পুলিশের টহলও কমেছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে ডাকাতরা। ক্যাম্পের কয়েকশ গজ দূরে এমন দূর্ধর্ষ ডাকাতি হতে পারে তাও অনুমান ছিলো না পথচারীদের। তাই ঝুঁকিপূর্ণ এই স্থানসহ গাংনী উপজেলার অন্যান্য ডাকাতি প্রবণ এলাকায় পুলিশ টহল বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে এলাকার বিভিন্ন মানুষ।
বামন্দী বাজারের সাবান আলীর ছেলে মাইক্রোবাস চালক রাজিব হোসেন বলেন, ‘সড়কের ওপর একটি গাছ ফেলে রাখে ডাকাতদল। আর একটি ট্রাক আটকিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখে। আমি রাজশাহী থেকে রোগী নিয়ে করমদী গ্রামে রেখে বামন্দী আসার পথে ডাকাত দলের কবলে পড়ি।’ এ সময় তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও মাইক্রোবাসের গ্লাস ভেঙে দেয় ডাকাতরা।
দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় সাংবাদিক জাহিদ মাহমুদ বলেন, ‘মোটরসাইকেল যোগে বামন্দী বাজার থেকে রাত ১১টার দিকে নিজবাড়ি দেবীপুর যাওয়ার পথে ডাকাতদল পথরোধ করে নগদ টাকা ও মোবাইলফোন কেড়ে নেয়। পরে রাস্তার পাশে থাকা একটি ট্রাকের ভেতর বসিয়ে রাখে।’ তিনি জানান, ট্রাকের ভেতর আরও অন্তত ১৫ জন পথচারীকে আটকিয়ে রাখে ডাকাতদল। খবর পেয়ে রাত ২টার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।
ব্রজপুর গ্রামের আব্দুস সালাম ও তার ভাইরাভাই ফিরোজ আলী বলেন, ‘আমরা বামন্দীর একটি ক্লিনিকে রোগী রেখে রাতে দেবীপুর গ্রামে আমাদের শ্বশুর আবু বক্করের বাড়ি যাচ্ছিলাম। বামন্দী-দেবীপুর সড়কের মাঝামাঝি পৌঁছুলে ডাকাতদল আমাদের পথ আটকে দেয়। এ সময় আমাদের দুজনের কাছে থাকা ২৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।’ তারা বলেন, তেঁতুলবাড়িয়া ইউপি সদস্য করমদী গ্রামের আব্দুল ওহাবও ডাকাতের কবলে পড়েন। ডাকাত দল প্রথমেই আমাদের মোবাইল নিয়ে নেয় এ কারণে আমরা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।
বামন্দী ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. হিরক আলী বলেন, ডাকাতির ঘটনা বেড়েই চলেছে। রাতে আরও পুলিশি টহল বাড়াতে হবে।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, গাংনী উপজেলার বামন্দী-করমদী সড়কের দেবীপুর মাঠের মধ্যে পুলিশ বক্সের পাশেই একটি কাঁঠাল গাছ কেটে ফেলে সড়ক অবরোধ করে ১০/১২ জনের একটি ডাকাতদল। পথচারীদের আটকে রেখে টাকাসহ অন্যান্য সামগ্রী ছিনিয়ে নিয়েছে। পরে বামন্দী পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছুলে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। এ সময় ডাকাতদের হাতে আটকদের উদ্ধার করা হয়েছে। ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে। গতকাল রোববার সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
প্রসঙ্গত: চার মাস আগে অর্থাৎ ২০ মে রাতে একইভাবে ওই স্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় ডাকাতরা ছিনিয়ে নেয় পথচারীদের কাছে থাকা টাকা ও স্বর্ণলাঙ্কার।