এমবিবিএস পাস না করেও জটিল ও কঠিন রোগের অভিজ্ঞ চিকিৎসক নুরুন নবী ছামদ এ্যানি
স্টাফ রিপোর্টার: নুরুন নবী ছামদ এ্যানি। আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া বাজারের এসএফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত রোগী দেখছেন। চিকিৎসা করেন নাক কান গলা রোগসহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের। তবে তিনি বিশেষজ্ঞ না হলেও নাক কান গলা রোগের অভিজ্ঞ চিকিৎসক। এমবিবিএস-এফসিপিএস চিকিৎসকদের আদলে সাইনবোর্ডে অভিজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে নাম তোলা রয়েছে নুরুন নবী ছামদ এ্যানির।
এমবিবিএস পাস না করেও তিনি সকল রোগের চিকিৎসক। দিচ্ছেন নাক-কান-গলার মত স্পর্শকাতর চিকিৎসাও। ডিপে¬ামা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি তথা ডিএমএফ কোর্স করেই দিচ্ছেন এমবিবিএস এফসিপিএস চিকিৎসকের মত জটিল রোগের চিকিৎসা। যদিও তিনি বিএমডিসির নিবন্ধিত চিকিৎসক নন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল তথা বিএমডিসির নিবন্ধন তো দূরের কথা, নেই এমবিবিএস ডিগ্রিও।
বলা হচ্ছে, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হিজলবাড়িয়া গ্রামের এক সময়ের ওষুধের দোকানদার নুরুন নবী ছামদ এ্যানির কথা। মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে তার নিজ গ্রাম গাংনী উপজেলার হিজলবাড়িয়া গ্রামে ওষুধের দোকান দেন। সে সময় থেকেই তিনি নামের আগে ডাক্তার লিখে বিভিন্ন রোগের পারদর্শী চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেয়া শুরু করেন। সেখানে মেয়াদ উত্তীর্ণ ও অবৈধ ওষুধ বিক্রির অপরাধে গ্রামের লোকজন তার প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) সনদপত্র ছাড়া এমবিবিএস ও বিডিএস পাশ করা কেউ নামের আগে ডাক্তার শব্দটি লিখতে পারবে না। ডাক্তার নাম লিখলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তবে এর তোয়াক্কা না করে গাংনীর এক সময়ের ওষুধ ব্যবসায়ী নুরুন নবী ছামদ এ্যানি হাটবোয়ালিয়াতে গিয়ে নামের আগে ডাক্তার লিখে নিজেকে ডাক্তার হিসেবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নাক, কান, গলা রোগের অভিজ্ঞ চিকিৎসক, বিনা অপারেশনে অশ^ ও নাকের পলিপাস চিকিৎসা করা হয় এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে রোগীদের আকৃষ্ট করছেন তিনি। ডাক্তার না হয়েও ডাক্তার পরিচয় আর নাক, কান ও গলার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। হাতের কাছে ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে এমন সহজ সমাধান মনে করে তার কাছেই ছুটছেন এলাকার সহজ সরল মানুষ। এর মধ্যে তার অপচিকিৎসায় ক্ষতিগ্রস্থ রোগীরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। বিষয়টি গড়িয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ পর্যন্ত। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং দ্রুত এই নামধারী ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
জানা গেছে, গাংনী উপজেলার পাশর্^বর্তী আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া বাজারের অবস্থান। পাশাপাশি তাই দুই উপজেলার মানুষ বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ে হাটবোয়ালিয়াতে যাওয়া আসা করেন। পাশর্^বর্তী এলাকার অবস্থানে সুযোগ নিয়ে নুরুন নবী ছামদ এ্যানি দুই এলাকাতেই প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এলাকার বিভিন্ন স্থানে লটকানো রয়েছে তার বিজ্ঞাপন। এসএফ ডায়গনস্টিক সেন্টার নামে হাটবোয়ালিয়া বাজারের একটি প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে বিজ্ঞাপনের উপরের দিকে। এ বিজ্ঞাপনে বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের নাম রয়েছে। নিচের দিকে রয়েছে নুরুন নবী ছামদ এ্যানির নাম। নামের আগে রয়েছে ডাক্তার আর এর সাথে রয়েছে নানা রকম অভিজ্ঞতা আর চিকিৎসা দিতে পারার যোগ্যতার ফিরিস্তি। যার সবগুলোই ভূয়া বলে সন্দেহ করছেন এলাকার রোগীরা।
অভিযোগে জানা গেছে, নুরুন নবী ছামদ এ্যানি মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে তার নিজ গ্রাম গাংনী উপজেলার হিজলবাড়িয়া গ্রামে ওষুধের দোকান দেন। নামের আগে ডাক্তার লিখে বিভিন্ন রোগের পারদর্শী চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে শুরু করেন। সেখানে মেয়াদ উত্তীর্ণ ও অবৈধ ঔষুধ বিক্রয়ের অপরাধে গ্রামের লোকজন তার প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। তাছাড়াও মাদক সেবনের অভিযোগ তোলেন গ্রামের লোকজন। ডোপ টেস্টে মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তার এলাকারই লোকজন।
অভিযোগে জানা গেছে, অশ^ পায়ু পথের রোগ তাই অনেকেই গোপনে চিকিৎসা নেন। এরই সুযোগ নিয়েছেন নুরুন নবী ছামদ এ্যানি। নিয়মিত ওষুধ সেবন করে মানুষ আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এক রোগ সারাতে গিয়ে তারা নানা জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিপিটি সার্টিফিকেট না থাকলেও ফিজিও থেরাপি দিচ্ছে। কিন্তু মানুষের সাথে প্রতারণা করা ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলা এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। তাই গ্রামের সাধারণ ভুক্তভোগীরাও অভিযোগ করার সাহস করেন না।
অভিযোগে জানা গেছে, তার গ্রামের লোকজন এসব অপকর্মের বাধা দেয়ায় নতুন কৌশল নেয় এ্যানি। তার শশুরবাড়ি হাটবোয়ালিয়া এলাকায়। এ সুযোগ নিয়ে এসএফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে বসেন এবং সেখানেই নতুন পরিচয়ে নামের পাশে ডাক্তার লেখা আর বিভিন্ন অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে সাধারণ রোগীদের টানতে থাকেন।
জানতে চাইলে নুরুন নবী ছামদ এ্যানি বলেন, আমি সব ধরণের রোগীর জিবি প্র্যাক্টিস করি। আমি উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। ডাক্তার লিখতে পারিনা তার পরও পরিচিতির জন্য লিখি। আর গরীব রোগীদের জন্য অনেক সময় কিছু করতে হয় বলে স্বীকার করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে মাদকের যে অভিযোগ তা মিথ্যা বলেও দাবি করেন তিনি।
আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি সাব অ্যাসিস্টেন্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) হিসেবে পলিপাস, অশে^র চিকিৎসা করতে পারেন না। নামের আগে ডা. লিখতে পারবেন না। ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, এসএফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে আমি এটার বিষয়ে খোঁজ নেবো। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।