গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনীতে আবারো ‘অ্যানথ্রাক্স’ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় অনেক রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে, আবার অনেকে এখনও চিকিসৎসাধীন। অনেকে লোকলজ্জায় অ্যানথ্রাক্সের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন দিনের পর দিন। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, ইতোমধ্যেই খামারি ও পশু পালনকারীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সচেতন করা হয়েছে। গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসে ১৭৬ জন রোগী অ্যানথ্রাক্সের ক্ষত নিয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ রোগী ৮৯ জন এবং নারী রোগী ৮৭ জন। সীমান্ত এলাকা কাজিপুর, হাড়াভাঙ্গা, তেতুলবাড়িয়া, কাথুলীও ভাটপাড়া এলাকায় অ্যানথ্রাক্সের প্রাদুর্ভাব বেশি লক্ষণীয়।
২০২১ সালে একই এলাকায় অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হন ৪১৭ জন। তাদের মধ্যে নারী ২২৯ জন এবং পুরুষ ১৮৮ জন। চলতি বছর পুরুষের চেয়ে নারী রোগীর সংখ্যা বেশি। রোগাক্রান্ত পশুর মাংস স্পর্শ ও মাটির সংস্পর্শে এই রোগ গরু ও মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
অ্যানথাক্স রোগে আক্রান্ত হয়ে গাংনী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ভাটপাড়া গ্রামের জিয়ারুল চৌধুরী জানান, কয়েক দিন আগে তার পালিত একটি ছাগল অসুস্থ হয়ে পড়ে। ছাগলটি জবাই করে মাংস নাড়াচাড়া করি। কয়েক ঘণ্টা পর আমার একটি হাতে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। কিছু সময়ের মধ্যেই ফোসকা ও ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আমি সঙ্গে সঙ্গে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। তিনি আরও বলেন, আমার পরিস্থিতি ভালো না দেখে চিকিৎসক কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে এক সপ্তাহ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। তবে এখনো পুরো সুস্থ হতে পারিনি। আমার আক্রান্ত হাতটি এখনো আগুনে পুড়ে ঝলসে যাওয়ার মতো অবস্থা। একই গ্রামের চা-দোকানি আব্দুল আলিম জানান, তিনি মাঝেমধ্যে কসাইয়ের কাজ করেন। প্রতিবেশী একজনের অসুস্থ ছাগল জবাই করি এবং মাংস নাড়াচাড়া করে আমার দুটি আঙুলে ক্ষত হয়। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে এখন সুস্থ আছি। ওই গ্রামের কালোবুড়ি ও রাবেয়া খাতুন বলেন, আমি ছাগল ও গরু পালন করে সংসার চালাই। দুজনের বাড়িতে ১০ থেকে ১২টি ছাগল ছিলো। এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি ছাগল একবার চিৎকার দিয়ে মারা গেছে। জবাই করার সময় হয়নি। এতে আমাদের অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। পরে পশু চিকিৎসকদের জানালে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান তারা। পরে মৃত ছাগল মাটির নিচে পুঁতে রাখি।
উপজেলা পলাশী পাড়া গ্রামের সোনিয়া ও গোপাল নগর গ্রামের শিখা বলেন, বাড়িতে ছাগল জবাই করে মাংস কাটতে কাটতে আমার দুই হাত জ্বালাপোড়া শুরু করে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ক্ষত সৃষ্টি হলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। এতে আমাকে বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকতে হয়েছে। কাজিপুর গ্রামের জুবায়েদ ও কল্যাণপুর গ্রামের ওমর আলী আক্রান্ত হন গুরুর মাংস কাটতে গিয়ে। তারাও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকেই অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হলেও লোকলজ্জার ভয়ে বা না বুঝে চিকিৎসা নিচ্ছেন না। আবার কারও পশু আক্রান্ত হলেও তা গোপন রেখে মাংস বিক্রি করছেন। তবে আক্রান্ত অনেক রোগীই জানান, তারা আজও জানেন না অ্যানথ্রাক্স কী। জানলে সাবধানতা অবলম্বন করতেন। অ্যানথ্রাক্স সম্পর্কে তাদের কেউ কিছু জানায়নি। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক আদিলা আফরোজ বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সচেতন করা হচ্ছে। যেহেতু পশুর মাংস থেকে এই রোগ ছড়াচ্ছে, সেহেতু প্রাণিসম্পদ বিভাগের গ্রাম-মহল্লায় জনসচেতনতা ও অ্যানথ্রাক্স বিষয়ে জানানো প্রয়োজন। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। চিকিৎসা নিলে অ্যানথ্যাক্স ভালো হয়। মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, গরু-ছাগল ও মাটির সংস্পর্শের কারণে মানুষ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু গাংনী উপজেলায় এর প্রাদুর্ভাব বেশি। গেল বছর দু-একটি গ্রামে রোগী শনাক্ত হয়েছিলো। এ বছর বেশ কয়েকটি গ্রামে দেখা দিয়েছে। আমরা মানুষকে আক্রান্ত গবাদিপশু জবাই করতে নিষেধ করছি এবং সচেতনতা তৈরি করছি তাদের মধ্যে।