কেরুজ ডিস্টিলারিতে বিয়ার কারখানাসহ অচিরেই চালু হবে সব চিনিকল

ডোঙায় আখ নিক্ষেপের মধ্যদিয়ে মাড়াই মরসুমের উদ্বোধনকালে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন

দর্শনা অফিস: কোনো প্রকার আলোচনা পর্ব ছাড়াই কেরুজ চিনিকলের ২০২১-২২ আখ মাড়াই মরসুম উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে অনেকটাই সাদা-মাটা পরিবেশে মিলের কেন কেরিয়ার চত্বরে শুধু মাত্র দোয়া মোনাজাতের মধ্যদিয়ে এবারের মরসুম শুরু করেছে। ডোঙায় আখ নিক্ষেপের পর সাংবাদিকদের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, কেরুজ চিনিকল একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এ অঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক চালিক শক্তি হিসেবে রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। সরকারের মূল্যবান এ সম্ভবকে আধুনিকায়নের কাজ চলছে বেশ জোড়েসোরে। এ প্রতিষ্ঠানটি আরো লাভজনকে রূপ দিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বিয়ার উৎপাদনের। অচিরেই মিলের ডিস্টিলারিতে বিয়ার কারখানা নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। ঢাকায় ফিরে এ নিয়ে কাজ শুরু করবো আমরা। দেশের কোনো চিনিকলই স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়নি। চিনিকলগুলো আধুনিকায়নের জন্য সাময়িকভাবে আখ মাড়াই কার্যক্রম রাখা হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব আধুনিকায়নের মধ্যদিয়ে সকল চিনিকল সচল করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার কৃষি পন্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুবিধা ও সেবা দিচ্ছে। কৃষি বিপ্লব ঘটাতে সরকার নানামুখি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পর্যায়ক্রমে যেমন আখের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে, তেমনি আখচাষিদের সকল সুযোগ-সুবিধা তাদের দৌরগোড়ে পৌছানো হচ্ছে। তাই এ অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখতে বেশি বেশি আখচাষের বিকল্প নেই। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আর্ন্তজাতিক বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দব্যের মূল্য বৃদ্ধি হলে, দেশের বাজারেও তা বৃদ্ধি পায়। তবে আমদানি নির্ভর সকল দ্রব্যাদি সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে উপজেলা পর্যায়ে টিসিবি কার্যক্রম শুরু করবে সরকার। আগামী ৩ মাসের মধ্যে ৫ শতাধিক টিসিবি ট্রাক নামানো হবে।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, শেখ হাসিনা সরকার শিল্প বান্ধব সরকার। শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এ সরকারের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য জনপ্রিয় জননেতা হাজি আলী আজগার টগর বলেন, দীর্ঘ ৮৪ বছর কেরুজ চিনিকল এ অঞ্চলকে আলোকিত করে রেখেছে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করেছে চুয়াডাঙ্গাকে। তাই এ মিলটিকে টিকিয়ে রাখতে বেশি বেশি আখচাষের কোনো বিকল্প নেই। কেরুজ চিনিকল আপনার-আমার প্রাণের সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই। তাই আসুন আজ থেকেই আখচাষে ঝুকে পড়ি, বাচিয়ে রাখি মূল্যবান সম্পদটি। আরো উপস্থিত ছিলেন শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান অপু। পরে কেরুজ চিনিকলের বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন শেষে ট্রেনিং কমপ্লেক্সে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে মিলিত হন অতিথিরা। শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে এ বৈঠকে দেশের ১৫টি চিনিকলের কর্মকর্তা ও আখচাষিদের সাথে আলোচনা করেন অতিথিরা। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. মুন্না বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুদীপ্ত কুমার সিংহ, দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ এএইচএম লুৎফুল কবির, দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ ফেরদৌস ওয়াহিদ। এছাড়াও ছিলেন কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন, মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) গিয়াস উদ্দিন, মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) সাইফুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারি) ফিদাহ হাসান বাদশা, কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শেখ শাহাব উদ্দিন। এ বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন অতিথিবৃন্দ। এদিকে শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে যশোর বিমান বন্দর থেকে গাড়ি বহর যোগে কেরুজ চিনিকলে পৌছান অতিথিরা। কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অতিথিদের অভ্যার্থনা ও ফুলেল শুভেচ্ছা দেয়া হয়েছে। মিলের অতিথি ভবনে তাদের গার্ড অফ অনার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতি বছরের মতো এ বছরের শ্রেষ্ঠ আখচাষিদের সম্মাননা স্মারক ও আর্থিক উপহার তুলে দেন অতিথিরা। গতকালই সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে কেরুজ ত্যাগ করেছেন প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। আজ শনিবার ঢাকার উদ্দেশ্যে কেরুজ ত্যাগ করবেন শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী, সচিব ও চেয়ারম্যান। কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এ মরসুমে সর্বমোট ৪ হাজার ৬২৭ একর জমির আখ মাড়াই করা হবে। যার মধ্যে কেরুজ নিজস্ব জমির পরিমাণ মাত্র ৯৮৯ একর ও কৃষকের জমিতে আখ রয়েছে ৩ হাজার ৬৩৮ একর। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মাত্র ৪৪ দিনে ৫০ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করা হবে সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিকটন। চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক শূন্য। অন্যদিকে এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমেই শুরু হয় ইক্ষু রোপণ মরসুমের কার্যক্রম। এবারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার একর জমিতে আখ রোপণের। এর মধ্যে চিনিকলের নিজস্ব জমির পরিমাণ ১৫৮৫ একর ও ৮৯১৫ একর জমি কৃষকের। গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা সাড়ে ৩ মাসে আখ রোপণ হয়েছে মাত্র ১১৯১ একর জমিতে। এর মধ্যে চিনিকলের জমি ৪৩৬ ও ৭৫৫ একর কৃষকের জমিতে আখ রোপণ করা হয়েছে। তবে সর্বকালে সবচে কম আখ মাড়াই করা হবে এবারের মরসুমে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More