করোনা আক্রান্ত আরও দুজনসহ ৪ জনের মৃত্যু : নতুন শনাক্ত ৪২

চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্যের সাথে বাস্তবে মৃতের সংখ্যা মিলছে না : কমেছে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত আরও দুজনসহ উপসর্গ মারা গেছেন ৪ জন। বুধবার স্বাস্থ্য বিভাগ অবশ্য চুয়াডাঙ্গায় করোনায় মৃতের সংখ্যা দেখিয়েছে ১ জন। একইভাবে গত পরশু মঙ্গলবার করোনা আক্রান্ত ৪ জনসহ উপসর্গ নিয়ে মারা যান ৫ জন। এ ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য বিভাগের দেখানো হিসেবে গড়বড় পাওয়া গেছে। ওইদিন স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে বলা, করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২ জন। ফলে বাস্তবের সাথে স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া মৃতের সংখ্যায় অমিল পাওয়া যাচ্ছে প্রায় প্রতিদিন।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ গতকাল বুধবার নমুনা সংগ্রহ করেছে ১৮৪ জনের। এদিন নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে ১৮৮ জনের। এর মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী ৪২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা দাঁঝড়িয়েছে ৫ হাজার ৯শ ৫১ জন। বুধবার ১৪ জন সুস্থতা পেয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট সুস্থ হলেন ৩ হাজার ৮শ ৪৪ জন। বর্তমানে সক্রিয় রোগীর মধ্যে হাসপাতালে ৯৯ জন ও বাড়িতে ১ হাজার ৮শ, ৩৪ জন রোগী রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গতকাল বুধবার রাতে স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জেলায় মৃতের সংখ্যা ১৭৪ জন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গার বাইরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন। বুধবার নতুন শনাক্তকৃত ৪২ জনের মধ্যে আলমডাঙ্গা উপজেলারই ২১ জন। সদর উপজেলার ১০ জন। দামুড়হুদা উপজেলার ৮ জন ও জীবননগর উপজেলার ৩ জন।
প্রাপ্ত তথ্য মতে গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত তথা কোভিড-১৯ আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুরের ৫৮ বছরের একজন পুরুষ। তিনি ২৪ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হন। বুধবার রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। হোগলডাঙ্গা গ্রামের ৬০ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধা বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে নেয়া হয়। র‌্যাপিড এন্টিটেস্টে তারও করোনা পজিটিভ হয়। রাতে তিনি মারা যান। এছাড়াও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদহ গ্রামের ৮৫ বছরের একজন বৃদ্ধ। ২৭ জুলাই তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। উপসর্গে ভুগছিলেন তিনি। বুধবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। যদিও তার নমুনা নিয়ে র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্টে নেগেটিভ আসে। তবুও তিনি উপসর্গে ভুগছিলেন বলেই হলুদ জোনে রেখে চিকিৎসা চলছিলো। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শাহপুর গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ ২৬ জুলাই দুপুরে হাসপাতালে আসেন। তিনিও করোনা উপসর্গে ভুগছিলেন। তাকেও হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। বুধবার রাত ৯টার দিকে তিনি মারা যান। করোনা আক্রান্ত দুজন ও উপসর্গ নিয়ে দুজন মোট ৪ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেলেও স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে জানানো হয়েছে, এদিন মারা গেছেন একজন। কোন একজন ব্যক্তির নাম স্বাস্থ্য বিভাগের নথিভুক্ত হয়েছে তা অবশ্য নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি। এছাড়া গত পরশু মঙ্গলবার স্বাস্থ্য বিভাগ করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানালেও ওইদিন ৪ জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। এদের মধ্যে দামুড়হুদার বইচিতলার ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা মারা যান। তাকে ১৯ জুলাই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। নমুনা পরীক্ষা করে তার রিপোর্ট কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়। রেডজোনে নিয়ে চিকিৎসা চলছিলো। ২৭ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান। ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ডপাড়ার ৬৪ বছর বয়ষী এক বৃদ্ধ মারা যান। তাকে গত ১৬ জুলাই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। নমুনা পরীক্ষা করে তার রিপোর্ট কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়। মঙ্গলবার মধ্যরাতে তিনি মারা যান। সুমিরদিয়ার ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে হাসপাতালের রেডজোনেই মারা যান। তাকে ভর্তি করা হয় গত ২৩ জুলাই। নমুনা পরীক্ষা করে ওইদিনই পজিটিভ হয়। আলমডাঙ্গা ফুলবগাদি গ্রামের ৭২ বছর বয়সী বৃদ্ধকে ১৯ জুলাই সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিনই নমুনা পরীক্ষা করে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। মারা গেলেন ২৭ জুলাই ভোরে। এছাড়াও ওইদিন উপসর্গ নিয়ে মারা যান আলমডাঙ্গা উপজেলা উপজেলার বাড়াদি গ্রামের ৫০ বছর বয়ষী এক নারী। ২৬ জুলাই তাকে সর্দি কাশি শ^াসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে তিনি মারা যান। এদিন উপসর্গে একজনসহ মৃতের সংখ্যা ৫ জন। অথচ স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে ওইদিন মৃতের সংখ্যা দুজন। কেনো? এ প্রশ্নের জবাবে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাতেহ আকরামের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুজনের নমুনা পরীক্ষার কোর্ডের সাথে অমিল থাকার কারণে দুজনকে করোনা আক্রান্তের মৃত্যু বলে দেখানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত: বুধবার স্বাস্থ্য বিভাগ নতুন ১৮৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে। এ নিয়ে মোট ২১ হাজার ৮শ ৬৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বুধবার ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মোট ২১ হাজার ৭শ ২৮ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। শনাক্ত হয়েছেন নতুন ৪২ জনসহ মোট ৫ হাজার ৯শ ৫১ জন। সুস্থ হয়েছেন নতুন ১৪ জনকে নিয়ে মোট ৩ হাজার ৮শ ৪৪ জন। নতুন শনাক্ত ৪২ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ১০ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ২১ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ৮ জন ও জীবননগর উপজেলার ৩ জন। এ পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার স্বাস্ব্য কর্মীদের মধ্যে ৮৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ৭১ জন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More