স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তরমুজ কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে আবারো মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এবার পৌর শহরের টাউন ফুটবল মাঠের পাশে নিপুন সাহা (২৫) সাহা নামের এক যুবককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখমের ঘটনা ঘটে। রক্তাক্ত অবস্থায় নিপুন সাহাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আল ইমরাম জুয়েল। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে টাউন মাঠের পাশে এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় আহত নিপুন ও তার পরিবারের সদস্যরা তাৎক্ষনিকভাবে কোন কারণ জানাতে পারেননি। এর আগে, এ ঘটনার জেরে শুক্রবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের বড়বাজার এলাকার ফেরিঘাট রোডে তরমুজ বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম ও বৈদ্যুতিক মিস্ত্রী রুবেলকে দুজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এর মধ্যে আমিনুল ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবারের ঘটনায় আহত নিপুন সাহার বাবার নাম কৃষ্ণ সাহা। বর্তমানে পরিবারসহ টাউন মাঠের পাশে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাবলু দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আমি ডিউটিরত অবস্থায় দেখতে পাই টাউন মাঠের সামনে একজনকে কোপাচ্ছে কয়েকজন যুবক। পরে তাদেরকে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আহত যুবক জানিয়েছেন, জেবু ও তার সহযোগিতা তাকে কুপিয়েছে। এদিকে, ঘটনার পর অর্থাৎ খোদ ডিউটিরত পুলিশের সামনেই নিপুন সাহাকে এলোপাতাড়ি কোপানোর ঘটনায় শহরজুড়ে থমথমে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ডিউটিরত পুলিশ সদস্যরা ঘটনাটি দেখার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে না গেলে হয়তো নিপুনের বড় কোন কিছু হয়ে যেতো বলে ধারণা প্রত্যক্ষদর্শীদের। এরপরই শহরে পুলিশের টহল জোরদার করে। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সামনে এসআই বাবলুসহ তার সঙ্গীয় ফোর্স ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন। এ সময় তাদের অদূরেই টাউন মাঠের সামনে নিপুনকে কোপাতে থাকে কয়েকজন যুবক। বিষয়টি প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে কেউ একজন ডিউটিরত পুলিশ সদস্যদের নজরে দিলে সাথে সাথে এসআই বাবলু বীরের বেশে চিল্লাতে চিল্লাতে দৌড়ে যান এবং তাকে দেখে অভিযুক্তরা পালিয়ে যান। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলেও ধরতে ব্যর্থ হয়। সেখান থেকে পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় আহত নিপুনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত শুক্রবারের ঘটনার দিন আহত আমিরুল ইসলাম দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেছিলেন, শুক্রবার তরমুজ বিক্রি করাকে কেন্দ্র করে ক্রেতার সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়। রাতে মোটরসাইকেলযোগে আমি ও রুবেল ফেরিঘাট রোড হয়ে বড়বাজারে যাওয়ার পথে সেই ক্রেতাসহ কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আমাদের উপর হামলা চালাই। পরে দুজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। তবে অভিযুক্তদের নাম-পরিচয় না জানলেও মুখ পরিচিত তারা। গত শুক্রবারের ঘটনার দিন আহত রুবেল হোসেন দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেছিলেন, আমি মোটরসাইকেলের পিছনে বসেছিলাম। ওরা পিছন থেকে হামলা চালাই। আমি মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গেলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এতে এ ঘটনার কিছুই আমি জানি না। আমিরুলের সঙ্গে ছিলাম এ জন্যে আমাকেও কুপিয়ে জখম করেছে তারা। গত শুক্রবারের ঘটনার দিন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আল ইমরান জুয়েল দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেছিলেন, দুজনের শরীরের বিভিন্নস্থানে ধারাল অস্ত্রের আঘাতের ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে রুবেলকে ভর্তি করা হয়েছে এবং আমিরুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী বা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতের ঘটনায় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোর্শেদ আলম দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ধারাল অস্ত্রের আঘাতে নিপুনের মাথায় গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সবশেষ ঘটনার সম্পর্কে জানতে গতকাল শনিবার রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) খালেদুর রহমান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে মুঠোফোনে বলেন, তরমুজ লালের পরিবর্তে সাদা হওয়া নিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয়। এর জের ধরে প্রথম দিন বিক্রেতাসহ দুজনকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। আবার এরই জের ধরে পরদিন অর্থাৎ গতকাল একই পক্ষের লোকজন নিপুন সাহাকে কুপিয়েছে। রাতেই এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছিল। অভিযুক্তদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.