এবতেদায়ি শিক্ষকদের পদযাত্রায় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্জ : ধাওয়া-পালটা ধাওয়ায় শাহবাগ রণক্ষেত্র
স্টাফ রিপোর্টার: চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান নেয়া এবতেদায়ি শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের পালটাপালটি ধাওয়ার একপর্যায়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এ সময় পুলিশকে লাঠিপেটা করতে দেখা গেছে। এতে এক নারীসহ ছয় জন আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার দুপুর পৌনে ১টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে এ ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে এবতেদায়ি শিক্ষকরা ঢাবির চারুকলার সামনে অবস্থান নেন। আহত ব্যক্তিদের দুপুরের দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আহত ব্যক্তিরা হলেন-আনোয়ার হোসেন (৩৫), ফরিদুল ইসলাম (৩০), আমিনুল (৩৫), মিজানুর রহমান (৩৫), বিন্দু ঘোষ (৩০) ও মারুফা আক্তার (২৫)। তারা সবাই এবতেদায়ি শিক্ষক বলে জানা গেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সুপারিশের আলোকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসাগুলো জাতীয়করণের ঘোষণাসহ ছয় দফা দাবিতে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক ঐক্যজোট। তারা স্মারকলিপি দিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে ‘পদযাত্রা’ করেন। এবতেদায়ি শিক্ষকরা জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে শাহবাগ থানার সামনে পৌঁছালে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে। এরপর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এবতেদায়ি শিক্ষকরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দেয়া পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সামনে আগাতে চাইলে তাদের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও জলকামান থেকে পানি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। ঢাকা মেডিক্যালে ঝালকাঠি থেকে আসা দপদপিয়া শেখবাগল মাদরাসার প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবিতে ১৯ তারিখ থেকে প্রেসক্লাবে অবস্থান কর্মসূচি করে আসছিলাম। রোববার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি নিয়ে যাওয়ার পথে শাহবাগ এলাকায় পুলিশ জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠি দিয়ে আমাদের ওপরে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে আমাদের এক নারীসহ ছয়জন মাদরাসার শিক্ষক আহত হন। তাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।’ এবতেদায়ি শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তাদের যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে পুলিশ হামলা চালিয়ে আহত করেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে তারা যাবে না। যে কোনো পরিস্থিতিতে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। রফিকুল ইসলাম নামের এক শিক্ষক বলেন, পুলিশের বাবার বয়সি শিক্ষকরা এখানে আন্দোলনে এসেছেন। তাদের লাঞ্ছিত করা হলো। এটা কেমন বিচার? এই পুলিশ তো হাসিনার পুলিশ। ওপর থেকে দাবি পূরণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যাব না। আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায় করেই যাব। ঢাকা মেডিক্যালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, জরুরি বিভাগের আহত শিক্ষকদের চিকিৎসা চলছে। তবে তাদের অবস্থা গুরুতর নয়। শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। শাহবাগ এলাকায় পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য রয়েছেন। আন্দোলনকারীরা শাহবাগ ছেড়ে বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। এবতেদায়ি শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসা নিবন্ধন স্থগিতাদেশ ২০০৮ প্রত্যাহার করা, রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত কোডবিহীন মাদরাসাগুলো বোর্ড কর্তৃক কোড নম্বরে অন্তর্ভুক্তকরণ, স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসার আলাদা নীতিমালা, পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি, বেতন-ভাতা, নীতিমালা-২০২৫ অনুমোদন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো অফিস সহায়ক নিয়োগের ব্যবস্থা নেয়া ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসায় প্রাক্-প্রাথমিক শ্রেণি খোলা অনুমোদনের ব্যবস্থা নেয়া। শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, তাদের মধ্য থেকে প্রতিনিধিদল পাঠানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো। প্রথমে তারা রাজি হয়নি, পরে তারা রাজি হয়েছেন। বর্তমানে শাহবাগ এলাকার যান চলাচল পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.