এখনও জমেনি ঈদের বাজার, আশানুরুপ ক্রেতা না পেয়ে হতাশায় চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ীরা

স্টাফ রিপোর্টার: আজ ১৬ রমজান। পবিত্র ঈদুল ফিতর আসতে বাকি আর মাত্র ১৪ দিন। ঈদকে সামনে রেখে যার যার সামর্থ অনুযায়ী ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়ে দোকান সাজিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখনও জমে ওঠেনি চুয়াডাঙ্গায় ঈদ বাজারের কেনাকাটা। হতাশা নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রমজানের শেষ ১০ দিনে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশাবাদী বিক্রেতারা। গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা শহরের বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে-ক্রেতাদের আশানুরুপ তেমন ভিড় নেই। গত বছরের তুলনায় এ বছর ক্রেতা উপস্থিতি ও বেচাকেনা অনেকটা ঢিলেঢালা। ঈদ ও পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বাড়তি চাপ সামাল দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু আশানুরুপ কেনাকাটা না থাকায় হতাশ ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ উপলক্ষ্যে প্রতিবছরই বাজারে নতুন ডিজাইনের পোশাক আসে এবং এ সময় বেচাবিক্রিও অনেক বেশি হয়। সেই আশায় অধিক পুঁজি খাটিয়ে চাহিদা অনুমান করে আমরা মালামাল ক্রয় করি। হঠাৎ জামা-কাপড়, জুতাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এ বছর ক্রেতা খুবই কম। কিছু ক্রেতা আসলেও তারা দাম শুনে পণ্য না কিনে চলে যাচ্ছেন। বেশি দাম দিয়ে পণ্য কেনার কারণে আমরাও কম দামে ছাড়তে পারছি না। তবে শেষ ১০ রমজানে বেচা বিক্রি বাড়বে বলে আশাবাদী আমরা। চুয়াডাঙ্গা নিউ মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী একরামুল হক বলেন, ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও এ বছর ক্রেতাদের তেমন ভিড় দেখা যাচ্ছে না। ঈদে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় থাকবে বলে বিভিন্ন ক্যাটাগরীর মালামাল ক্রয় করে রেখেছি। গত বছরের তুলনায় পোশাকের দাম বেড়েছে অনেক বেশি। গত বছর ৪ হাজার টাকার উপরে থ্রি-পিস ছিলো না বললেই চলে। সেই একই থ্রি-পিস এ বছর দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায়। আমাদের কিছু পরিচিত কাস্টমার আছে যারা প্রতি বছর আমাদের এখান থেকে ক্রয় করে তাদেরকেও এখনও মার্কেটে আসতে দেখিনি। তবে এখনও কয়েকটা দিন সামনে আছে, শেষের কয়েকটা দিন বেচা কেনা জমে উঠে বলে আমরা আশাবাদী। চুয়াডাঙ্গা শহরের পুরাতন গলির কাপড় ব্যবসায়ী বাপন কুমার বলেন, বর্তমানে বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। যার কারণে পোশাক খাতে এর একটা বড় প্রভাব পড়েছে। শাড়ি, থ্রি-পিস, ছিট কাপড় সব কিছুরই দাম বেড়েছে এ বছর। গত বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি কম হচ্ছে ঠিকই কিন্তু একেবারে যে বিক্রি হচ্ছে না তা না। ভারতীয় পোশাকের চাহিদা এ বছর বেশি।

চুয়াডাঙ্গা নিউ মার্কেটের তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী প্রবীর সাহা বলেন, প্রত্যেকটা দোকানি তাদের চাহিদা অনুমান করে আগে থেকেই মালামাল কিনে রাখে। শবে বরাতের আগে বেচাবিক্রি মোটামুটি ভালো দেখে আমাদের ধারণা ছিলো এ বছর ঈদের সময় বেচাবিক্রি বাড়বে। সে হিসেব করেই আমরা অনেক মালামাল কিনে রেখেছি বিক্রয়ের জন্যে। ঈদ ও পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে অনেক বেচাকেনা হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেই তুলনায় এ বছর বেচাকেনা তেমন নেই।  চুয়াডাঙ্গা শহরের শপিং মল আব্দুল্লাহ সিটির জুতা ব্যবসায়ী সাকিব হোসেন বলেন, প্রতি বছরই ঈদ সামনে রেখে বেচা বিক্রি স্বাভাবিক ভাবেই বৃদ্ধি পায়। সে অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতিও থাকে ভালোই। বাড়তি চাপ সামাল দেয়ার জন্য বাড়তি কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। এ বছরও আমাদের প্রস্তুতি সেই ভাবেই ছিলো। কিন্তু ক্রেতা উপস্থিতি খুবই কম এ বছর। সন্ধ্যার পর থেকে রাত পর্যন্ত একটু ভিড় থাকলেও দাম শোনার পর কেনার আগ্রহ পাচ্ছেন না অনেকেই।

চুয়াডাঙ্গা নিউ মার্কেটে আসা ক্রেতা শামীম রেজা বলেন, এসেছিলাম পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদের পোশাক কিনতে। এ বছর যা দাম তাতে করে শুধু বাচ্চাদের জন্যই কিনবো। স্বল্প আয়ে পরিবারের সবার জন্য পোশাক কেনা সম্ভব হচ্ছে না। অপর ক্রেতা মাহমুদ হোসেন বলেন, রোজার শুরু থেকেই সবগুলো মার্কেট ঘুরে ঘুরে দেখছি। এ বছর প্রতিটি জিনিসের দামই বাড়তি। অনেক সময় জামা প্যান্ট পছন্দ হচ্ছে কিন্তু দামে হচ্ছে না। বেশ কিছু দোকান ঘুরে পছন্দ মত জিনিস ও দামে মিলে গেলে কিনে রাখছি। চুয়াডাঙ্গা নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আকরাম আলী বলেন, প্রতিবছর ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের মার্কেট মুখি হওয়া এবং প্রতিটি দোকানে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যেতো কিন্তু এ বছর তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও এখনও আশানুরুপ ক্রেতার উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে না। রমজানের শেষ কয়েকটা দিন বিক্রি বাড়বে কি না বলা মুশকিল। তবে বিক্রি করতে না পারলে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে ব্যবসায়ীদের।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, আমরা বাজার ঘুরে দেখেছি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ কোনো পণ্যেরই তেমন সংকট নেই। ব্যবসায়ীরা যেন কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা করতে না পারে সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি। রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে যাতে কোন অসাধু ব্যবসায়ী ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা না করতে পারে সেজন্য বাজার মনিটরিং ও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব অভিযানে অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি, মূল্য তালিকা না থাকা, ক্রয় ভাউচার সংরক্ষণ না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক, স্বাভাবিক, স্থিতিশীল এবং সরবারহ নিশ্চিত করতে এ ধরনের তদারকী নিয়মিত অব্যাহত থাকবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More