এক ইঞ্চি মাটিও আর বিক্রি হতে দেবো না : জীবন দিয়ে এ মাটি রক্ষা করবো
জীবননগর বসতবাড়ি ও কৃষি জমি বাঁচাতে মাটি বিক্রি বন্ধে এলাকাবাসীর মানববন্ধন
জীবননগর ব্যুরো: জীবননগরে ভৈরব নদ খনন কাজ শেষ হওয়ার আগেই নদীর পাড় বাঁধানো মাটি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। নদের পাড়ের মাটি বিক্রির কারণে এর তীরে বসবাসরত বাসিন্দারা নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে তাদের বসত-ভিটা ও কৃষি জমি হারানোর আশঙ্কা করছে। ফলে তারা মাটি বিক্রি বন্ধে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ভৈরব খননে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী কিছু নেতা রাতের আঁধারে ভৈরবের পাড় বাঁধা মাটি সরকারি অনুমতির দোহাই দিয়ে কেটে বিক্রি করছেন ইটভাটায়। স্থানীয় জনতা পাড় বাঁধানো মাটি বিক্রি বন্ধে সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাঁকা জোড়া ব্রিজ এলাকাবাসী ভৈরব নদের পাড়ে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেয়। মানববন্ধন হতে বলা হয়েছে তারা নদীর পাড়ে হতে আর এক ইঞ্চিও মাটির নিয়ে যেতে দেবে না। জীবন দিয়ে হলেও তারা মাটি রক্ষা করবেন।
এদিকে মানববন্ধন পালনের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকেলের পূর্বেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মানববন্ধন পন্ড করার চেষ্টা করে। কিন্তু নদীর দুই পাড়ের বিক্ষুব্ধ শত শত মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেয়।
জানা যায়, জীবননগর উপজেলায় যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে ভৈরব নদ খনন কাজ চলমান রয়েছে নদী খননের মাটি দুই পাশের পাড় বাঁধার কাজ চলছে রীতিমত। ভৈরবের বাঁকা জোড়া ব্রিজ থেকে কুলতলা পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার অংশের নদী খননের কাজ কাগজে কলমে শেষ হওয়ার আগেই পাড় বাধা মাটি বিক্রির অনুমতি দেয় প্রশাসন। খনন কাজের সাব-ঠিকাদার সামসুল ইসলাম ৮ লাখ টাকা দিয়ে পাড় বাধানো মাটি বিক্রির উৎসবে মাতেন। ওই ঠিকাদারের নেতৃত্বে বাঁকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান, বাঁকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন ফরজ রাতের আঁধারে বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি বিক্রি করছেন।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া আলীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল হাশেম সরকার বলেন, ভৈরব নদ খননের সাব ঠিকাদার সামসুল ইসলাম দুইপাড়ের ৬ কিলোমিটার অংশের পাড় বাঁধা মাটি বিক্রি করছেন। এভাবে নদীর পাড় বাঁধা মাটি যদি বিক্রি হয়ে যায় তাহলে বর্ষায় দু’পাশ ভেঙে আমাদের ঘর বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আমাদের দাবি নদীর মাটি যেনো বিক্রি না হয়। যেখান কার মাটি সেখানেই থাকবে এই মাটি কোনোভাবে বিক্রি হতে দেবো না।
তিনি বলেন, সাব ঠিকাদার সামসুল বলেছেন ইএনও’র মাধ্যমে মাটি কিনেছি। বাঁধা দিলে ক্ষতি হয়ে যাবে। তার কথামতো পুলিশ আমাদের মানববন্ধন করতে নিষেধ করে। কিন্তু তারপরও গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই কর্মসূচি পালন করেছে।
আলীপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন দেওয়ান বলেন, আমাদের নদীর পাড় বাঁধা মাটি রাতের আঁধারে বিক্রি করছেন সাব-ঠিকাদার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। আমরা কোনোভাবেই এই মাটি নিয়ে যেতে দেবো না।
রঘুনন্দনপুর গ্রামের আলী হোসেন বলেন, জীবন থাকতে এক ছটাক মাটি নিয়ে যেতে দেবো না। প্রয়োজনে দুই পাশের মানুষ নদীর পাড় বাঁচাতে নিজেদের জীবন দিতে প্রস্তুত।
এ ব্যাপারে সাব ঠিকাদার সামসুল ইসলাম জানান, সরকারি নিয়ম মেনে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছ থেকে মাটি কিনেছি। কে কী বললো তাতে কিছু যায় আসে না। এ ব্যাপারে ইউএনও’র সাথে কথা বলেন।
এ বিষয়ে বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান সাংবাদিকদের বলেন, নদীর মাটি বিক্রির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে পাড় বাধার পর চল্লিশ শতাংশ উদ্বৃত্ত মাটি বিক্রির একটি অনুমতি পত্র দেয়। সেই মোতাবেক ৮ লাখ টাকায় সরকারি কোষাগারে জমা নিয়ে মাটি কাটার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোর পানি উন্নয়র বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলামের ফোনে একাধিক বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।