একমাত্র সন্তানের জন্য ফল কিনে বাড়ি ফেরা হলো না দম্পতির
চুয়াডাঙ্গা থেকে মোটরসাইকেলযোগে মেহেরপুরে ফেরার পথে হাতিকাটায় দুর্ঘটনা
স্টাফ রিপোর্টার: শখের ফ্রিজ কিনে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আব্দুল্লাহ আল মাসুম ও হাফিজা খাতুন লিভা নামের এক দম্পতি। আহত হয়েছেন আরও দুজন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার হাতিকাটা মোড়ে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহতরা হলেন আব্দুল্লাহ আল মাসুম (৩০) ও তার স্ত্রী হাফিজা খাতুন লিভা (২৫)। আব্দুল্লাহ আল মাসুম মেহেরপুর সদর উপজেলার গহরপুর গ্রামের মৃত আদম আলী মাস্টারের ছেলে। তিনি গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ছিলেন। নিহত দম্পতির মিথিলা নামে পাঁচ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, মাসুম ও তার স্ত্রী হাফিজা খাতুন ওরফে লিভা বিকেলে ফ্রিজ কেনার জন্য চুয়াডাঙ্গায় আসেন। ফ্রিজ কেনা শেষে সন্ধ্যার আগে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার পথে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের হাতিকাটা মোড়ে পৌঁছুলে একটি পাখিভ্যানকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এ সময় আলমসাধুটি একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়ে হাতিকাটা বাজারের শাহাঙ্গীর হোসেনের চায়ের দোকানে ঢুকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন মোটরসাইকেল চালক আব্দুল্লাহ আল মাসুম। আহত হন নিহত মাসুমের স্ত্রী হাফিজা খাতুন লিভা লিভা (২৫), আলমসাধু চালক সদর উপজেলার টেইপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে সজিব আলী (১৪) ও হাতিকাটা গ্রামের মৃত ইলাহি মোল্লার ছেলে ছেলুন মোল্লা (৪০)। তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেয় চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাইদুজ্জামান জানান, আহতদের মধ্যে লিভা খাতুনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতাল রেফার করা হয়েছে। সেখানে নেয়ার পথে আলমডাঙ্গায় পৌঁছুলে মারা যান তিনি। অন্যদের সদর হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তারা আশঙ্কামুক্ত। নিহত আব্দুল্লাহ আল মাসুমের বড় ভাই মাহাবুব হোসেন জানান, দুপুরে চুয়াডাঙ্গায় ফ্রিজ কিনতে এসেছিলো আব্দুল্লাহ আল মাসুম ও তার স্ত্রী লিভা খাতুন। ফ্রিজ কিনে ভ্যানে তুলে দিয়ে বিগ বাজারে বাজারও করছিলো তারা। একমাত্র মেয়ে মিথিলা খাতুনের (৫) জন্য ফলও কিনেছিলো মাসুম ও লিভা। কিন্তু তাদের হাতে আর ফল খাওয়া হলো না মেয়ে মিথিলার।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান জানান, আবেদনের প্রেক্ষিতে নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়ায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কবলে পড়া ইট বোঝাই আলমসাধুটি আটক করে থানায় নেয়া হয়েছে।
নিহত মাসুম ও হাফিজা খাতুন ওরফে লিভার ৭ বছরের বিবাহিত জীবনে তাদের ঘরে ৫ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। যার নাম মিথি। দুর্ঘটনার সময় মিথি তার নানারবাড়ি মেহেরপুর সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে ছিলো। নিহত হাফিজা খাতুন ওরফে লিভা সোনাপুর গ্রামের আব্দুল হামিদের বড় মেয়ে। এছাড়া নিহত মাসুম গহরপুর বাজারের মাসুম গার্মেন্টেসের মালিক। দুর্ঘটনার পর পাশাপাশি দুইটি গ্রামে শোকের মাতম চলছে।