একগুচ্ছ ইস্যুতে মাঠের রাজনীতিতে নতুন মোড় : রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তনের হাওয়া

স্টাফ রিপোর্টার: জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী তরুণদের সমন্বয়ে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ, জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচন আগে-পরে হওয়া নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের মতানৈক্য এবং ভিন্ন রাজনৈতিক দলে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতাকর্মীর আশ্রয়ের চেষ্টাসহ একগুচ্ছ ইস্যুতে মাঠের রাজনীতি নতুন মোড় নিয়েছে। যার প্রভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্র্বতী সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচন যে নিশ্চিত সুষ্ঠু হবে- জনমনে সে আস্থা তৈরি হতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোও এ ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেছে। বিগত সময়ের মতো ‘দিনের ভোট রাতে’ হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না বলে নির্বাচন কমিশনও কঠোর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সব মিলিয়ে ভোটারের রায়েই জয়-পরাজয় নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই রাজনৈতিক নেতাদের আগামীতে পেশিশক্তি প্রদর্শনে তৎপরতা দেখানোর চেয়ে জনসমর্থন জোগাড়ের ইস্যুতে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা ভাবছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে তাদের প্রস্তুতির আভাসও এরই মধ্যে পাওয়া গেছে। ঢাকা মহানগরীর একটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী এক নেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মত ‘১০টা গুন্ডা, ২০টা হোন্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা’ এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হওয়ার সুযোগ আর নেই। ভোট ডাকাতি, ব্যালট ছিনতাই কিংবা কারচুপির কোনো সুযোগও আগামীতে থাকছে না। তাই ভোটে জিততে হলে প্রার্থীদের ভোটারের দ্বারে দ্বারেই যেতে হবে। তাই সবার মতো তিনিও ভোটারদের আস্থা অর্জনেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। একই সঙ্গে তার কর্মীদেরও এ বিষটিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানান এই প্রবীণ রাজনীতিক। এদিকে জাতীয় নির্বাচনের ২ আগে শেখ হাসিনাসহ গণহত্যায় অভিযুক্তদের বিচার, সংস্কার ও স্থানীয় ভোট আয়োজনের দাবি জানানো জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচন ইস্যুতে দেশের প্রধান দল বিএনপির মতানৈক্য থাকলেও সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে আশাবাদী এ দলটির শীর্ষ নেতারাও। তাই সংসদ নির্বাচন আগে হোক, কিংবা স্থানীয় নির্বাচন আগে হোক- ভোটারদের আস্থা ও সমর্থন জোগাড়ে ইতোমধ্যেই তৎপর হয়ে উঠেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তারা ইতোমধ্যে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছেন। স্থানীয়ভাবে কিছু আসনের প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। তবে, তারা বিএনপির মতো নির্বাচনের জন্য কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়ার পক্ষে নয়। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ভাষ্য, ‘নো ইলেকশন উইদাউট রিফর্মস’। কেননা, নির্বাচনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান ও বিভাগ জড়িত, সেগুলোর সংস্কার না করেই জাতীয় সংসদের নির্বাচন করা হলে তা অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না। গত তিনটি নির্বাচনে জনগণ যে ভোট দিতে পারেনি, সেই নির্বাচনেরই পুনরাবৃত্তি ঘটার শঙ্কা রয়েছে। তাই সব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রেখে মাঠের রাজনীতির ঘুঁটি সাজাচ্ছেন তারা। অন্যদিকে, সদ্য ভোটের রাজনীতির মাঠে পা রাখা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ভোটারের আস্থা অর্জনের মিশনে নেমেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে ভোটের অধিকারবঞ্চিত জনগণকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের ধারা উপহার দিতে চাইছে। দলের নীতিনির্ধারকদের আকাক্সক্ষা, স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জুলাইয়ের আন্দোলনে আপামর ছাত্র-জনতা যেভাবে মরণপণে ঝাঁপিয়ে পড়ে জয় ছিনিয়ে এনেছে, ঠিক তেমনি আগামীর নির্বাচনে যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে দেশে সুষ্ঠু রাজনীতির ধারা ফিরিয়ে আনবে। আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে যোগ্যপ্রার্থী মনোনীত করতে নীতিনির্ধারকরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে বলে দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে, সদ্য আত্মপ্রকাশ করা এনসিপি নির্বাচনের আগে সংস্কারের পক্ষে জোরালো মত দিয়েছে। দলের হাইকমান্ড মনে করছে, দেশে সংস্কার আনতে হলে সবার আগে সংবিধান সংস্কার প্রয়োজন। সংবিধান সংস্কার না করে জাতীয় নির্বাচন করা হলে সংস্কারের লক্ষ্য ব্যাহত হবে। তাই, আগে গণপরিষদ নির্বাচন করে সংবিধান সংস্কার করতে হবে। এরপর নতুন সংবিধানের আলোকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। সংশ্লিষ্টদের অভিমত, সংস্কার না করে সংসদ নির্বাচন দিলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে। এছাড়া, বর্তমান সংবিধান বহাল রেখে জাতীয় নির্বাচন দেওয়া হলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই, নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য আগে গণপরিষদের নির্বাচন হতে হবে। তবে, জাতীয় সংসদ কিংবা স্থানীয় নির্বাচন যেটিই আগে-পরে হোক না কেন, তাতে বিএনপি ও জামায়াতের মতো সুপ্রতিষ্ঠিত দলগুলোর বিপক্ষে লড়াই করে এগিয়ে থাকা জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষে কঠিন হবে বলে মনে করেন রাজনীতিকরা। তাদের ভাষ্য, বিপস্নবের ডাক সাড়া দেয়ার সঙ্গে ভোটের ব্যালটে সীল মারার ইস্যুটির ব্যাপক ফারাক রয়েছে। তাই সদ্য গঠিত এনসিপির পক্ষে ভোটের লড়াইয়ে নির্বিঘেœ জয়ী হওয়া চ্যালেঞ্জিং হবে। আর এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই তাদের ভোটের মাঠের প্রস্তুতি নিতে হবে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তিনটি বিতর্কিত ও সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে গুম-খুন করে এই দল স্বৈরাচারী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছিল- এমন অভিযোগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা বা নির্বাচন থেকে দূরে রাখার দাবি আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। তবে এ সব বিষয় মাথায় রেখেই দলের মাঠপর্যায়ের অনেক নেতা দ্রুত রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরতে চাইছেন। যদিও মামলা, হামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে প্রথম সারির বেশিরভাগ নেতা এখনো আত্মগোপনে রয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা জানান, শিগগিরই আওয়ামী লীগ ভোটের রাজনীতির মাঠে ফিরবে, সে সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। তবে, চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে ভোটের রাজনীতিতে তারা যাতে কিছুটা হলেও প্রভাব বিস্তার করতে পারে সে পথ খোঁজার চেষ্টা করছে। কেননা, আগামীর নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াত কিংবা সদ্য গঠিত এনসিপিসহ ভোটের রাজনীতিতে আলোচনায় থাকা কোনো দলের পক্ষে কাজ না করতে পারে, তাহলে ভোটের পর তাদের এলাকায় ফিরে আসাও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তাই তারা ভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের শেল্টারে মাঠের রাজনীতিতে স্বক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে-যা রাজনীতির গতানুগতিক ধারায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন এনেছে। অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের মতে, মাঠের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে দীর্ঘ প্রায় আড়াই দশকের জোটসঙ্গী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন ইস্যুর মতানৈক্যে। এছাড়া, সংস্কার, আনুপাতিক হারে নির্বাচন পদ্ধতি ইস্যুতে দল দুটির মধ্যে মতপার্থক্য, নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট, ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরসহ নানা বিষয়ে দূরত্ব বাড়ায় রাজনীতির ধারা নতুন বাঁক নিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার অন্যতম দাবিদার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বিএনপিকে। দলটির নেতাকর্মীরাও এ ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। এজন্য দলটি চাচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করুক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের দাবি করছে দলটি। অপরদিকে, জামায়াতে ইসলামী চাচ্ছে প্রয়োজনীয় সব সংস্কার শেষ করে নির্বাচন হোক। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতার বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য-বিবৃতি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বৈঠকেও তারা দলের পক্ষ থেকে এমন অবস্থান তুলে ধরছেন। এছাড়া, জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কোনটি আগে হবে তা নিয়ে প্রধান দল দুটির মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বিএনপি জোরালভাবেই বলছে যে, আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। অন্যদিকে, জামায়াত চাচ্ছে আগে স্থানীয় নির্বাচন হোক। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনে আমরা একেবারেই একমত নই। রাজনৈতিক বিবেচনায় এটা দেশকে আরও ভঙ্গুর অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। যত দ্রুত জাতীয় নির্বাচন হবে ততই রাজনীতি সহজ হবে, বাংলাদেশের মানুষ স্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে আসবে।’ জাতীয় নির্বাচন কেন এখন জরুরি তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘প্রধানত দুটি কারণে দ্রুত নির্বাচন হওয়াটা জরুরি। একটি হচ্ছে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, আরেকটি হলো গভর্নেন্স (সুশাসন) চালু করা। এখন তো গভর্নেন্সের খুব সমস্যা হচ্ছে। গভর্নেন্স চালু হলেই দেখা যাবে অর্থনীতি বেটার হয়ে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে লেখাপড়া হচ্ছে না, সেটাও ঠিক হবে। একটা নির্বাচিত সরকার না হলে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।’ অপরদিকে, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন যৌক্তিক হবে। জনগণের আকাক্সক্ষা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হোক। জনগণ চায় স্থানীয় সরকার সচল হোক। আমরাও চাই আগে স্থানীয় নির্বাচন হোক।’ এদিকে, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর ইস্যুতেও বিএনপি ও জামায়াত বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে। পিআর হচ্ছে নির্বাচনী ব্যবস্থার এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে আসন বণ্টন হয় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে। আনুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের ঘোর বিরোধী বিএনপি। অপরদিকে, জামায়াতে ইসলামী চায় দেশে আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হোক। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে সুপারিশও করেছে দলটি। অপরদিকে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আগামী দিনে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ অবস্থায় এক সময়ের জোটসঙ্গী দুদল নির্বাচন সামনে রেখে পৃথকভাবে জোট গঠনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ৫ আগস্টপরবর্তী পরিস্থিতিতে ভেদাভেদ ভুলে বেশ কয়েকটি ইসলামী দলের সঙ্গে ইতোমধ্যে মতবিনিময়ও করেছেন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। এদিকে, জোট গঠনে তৎপর বিএনপিও। দলটি যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর পাশাপাশি ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। ইসলামী দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টার অংশ হিসেবে গত ২২ জানুয়ারি খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। এরপর ২৭ জানুয়ারি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীরের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠকে জাতীয় ঐক্যসহ ১০টি বিষয়ে যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা জানান তারা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More