এইচএমপিভি ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এশিয়ায়

ভারত-চীন-জাপান ও হংকংয়ে শনাক্ত : নতুন মহামারির শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার: করোনা মহামারির পর বিশ্বে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে হিউম্যান মেটোপনিউমো ভাইরাস (এইচএমপিভি)। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এ ভাইরাস। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চীনে এইচএমপিভি ভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। পরে সেটি জাপানে শনাক্ত করা হয়। এরপর মালয়েশিয়া ও হংকংয়ে সংক্রমণ ধরা পড়ে। গতকাল সোমবার ভারতে প্রথম এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বেঙ্গালুরুতে একই দিনে দুই শিশুর শরীরে পাওয়া গেছে এইচএমপিভির সংক্রমণ। এর আগে করোনা ভাইরাসটিও চীনের উহানের একটি গবেষণাগার থেকে উদ্ভূত হয়েছিল বলে অনেক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছিলেন। এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, ভাইরাসটি দ্রুত ছড়ালেও ক্ষতিকর না। তবে সচেতন থাকতে হবে।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, এইচএমপিভি রোগটা এত গুরুতর না। আমাদের দেশে আছে। প্রতি বছর পাওয়া যায়। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে করোনার মতো হিউম্যান মেটোপনিউমো ভাইরাসের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। আমরা সতর্ক আছি।
আইসিডিডিআরবি’র একজন কর্মকর্তা বলেন, এইচএমপিভি ভাইরাসটি নিয়ে আইসিডিডিআর,বি ও আইইডিসিআর যৌথভাবে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। এটার প্রতি নজর আছে। আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এই রোগের ক্ষেত্রে সচেতনতা থাকা উচিত। ভাইরাসটি ছড়ায় দ্রুত। তবে তেমন ক্ষতি করে না।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, এইচএমপিভি একটা ভাইরাস। এটা চীনে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের পরে জাপান, ভারত, মালয়েশিয়া ও হংকংয়ে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে এশিয়ার দেশগুলো। ভাইরাসটি দ্রুত ছড়ায়। এটি শ্বাসতন্ত্রের রোগ। কোভিড ও এইচএমপিভি ভাইরাসের মধ্যে তেমন ব্যবধান নেই। শুধুমাত্র মাস্ক পরতে হবে, হাত ধুতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। এর উপসর্গ হলো সর্দি-কাশি-জ্বর ও শ্বাসকষ্ট। শিশু ও বয়স্কদের জন্য ঝুঁকি। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি হলো কিডনি রোগী, ক্যানসারের রোগীসহ যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ ও দুর্বল তাদের জন্য।
এদিকে পরপর দুই জন সংক্রমণের খবর প্রকাশ্যে আসতেই ভারতের কর্ণাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দীনেশ গু-ু রাও গতকাল সোমবার দুপুরে একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। রাজ্যবাসীকে অযথা উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন কর্ণাটকের স্বাস্থ্যসচিব হর্ষ গুপ্তা। দেশটির স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, এই দুই শিশুর কাউকেই সম্প্রতি অন্যত্র ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হয়নি বা তাদের ট্রাভেল হিস্ট্রি নেই। ফলে অন্য কোনো দেশ বা অঞ্চলে গিয়ে ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। স্বাস্থ্য সচিব গুপ্তা জানান, এই ভাইরাস নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। এইচএমপিভি ভারতেও রয়েছে। তবে এই ভাইরাসটির কোনো রূপান্তর হয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। চীনে ভাইরাসটির যে রূপ ছড়িয়ে পড়েছে, সেটির গঠনের বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য নেই। ফলে এটি ভাইরাসের চীনা রূপ নাকি স্বাভাবিক এইচএমপি ভাইরাসের সংক্রমণ, তা এখনো বলা যাচ্ছে না। সাধারণ এইচএমপি ভাইরাস ভারতে অতীতেও দেখা গেছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, চীনের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের ব্যাপক ভিড়। ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, রোগীদের প্রায় প্রত্যেকেই এইচএমপিভিতে আক্রান্ত। চীন সরকার ভাইরাসটি নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্স রোগ প্রতিরোধ বিভাগের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, চীনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এইচএমপিভি ভাইরাস। বিশেষ করে উত্তর চীনে সংক্রমণের হার বেশি। ১৪ বছরের কম বয়সি শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। চীন সরকার ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ব্যাপক ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানা গেছে। স্ক্রিনিং, শনাক্তকরণ এবং বিচ্ছিন্নতা প্রোটোকলের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। জানা গেছে, করোনার মতো এইচএমপিভিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা যায়। হালকা সর্দি-কাশির লক্ষণগুলোর সঙ্গে এটি নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিসের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। এই ভাইরাস বিশেষ করে ছোট শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রভাবিত করছে। রয়টার্সের মতে, ইনফ্লুয়েঞ্জা এ, মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া, রাইনোভাইরাস এবং কোভিড-১৯ এর মতো অন্যান্য ভাইরাসের সংক্রমণও রয়েছে। ক্রমবর্ধমান রোগীর সংখ্যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরো চিন্তার মুখে ফেলে দিচ্ছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More