উপসর্গ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তির পরপরই বৃদ্ধের মৃত্যু : শনাক্ত আরও ১৩
দামুড়হুদার সীমান্তবর্তী এলাকায় বাড়ছে সংক্রমণ : অধিক সংক্রমিত গ্রামে নমুনা সংগ্রহ ক্যাম্প
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পরপরই এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আইসোলেশন ইউনিটের হলুদ জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া ওই বৃদ্ধ দামুড়হুদা উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের বাসিন্দা। এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গার ১৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে পৌছায়। এদিন ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ দিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা দু’হাজার পুঁজতে বাকি মাত্র একজন। বর্তমানে সক্রীয় রোগীর সংখ্যা ১১২ জন। এছাড়া গত পরশু সোমবার পাওয়া চুয়াডাঙ্গার ১১২ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে শনাক্ত হওয়া ১৮ জনের মধ্যে দামুড়হুদা উপজেলারই ১৩ জন। বর্তমানে সক্রিয় ১১২ জনের মধ্যে দামুড়হুদার ৫৩ জন। অপরদিকে, দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামের ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে জ্বর, সর্দি, কাশি তথা করোনার উপসর্গ। বিশেষ করে কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামের মধ্যে ১১টি গ্রামেই ছড়িয়ে পড়েছে করোনার সংক্রমণ। তবে প্রত্যন্ত ওই অঞ্চলে যেমন মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্য বিধি তেমনই করা হচ্ছে না নমুনা পরীক্ষাও।
এদিকে, এলাকায় নতুন করে যাতে আক্রান্তের সংখ্যা না বাড়ে সে বিষয়ে করণীয় নিয়ে গত সোমবার দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদে কোভিড-১৯ উপজেলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সংক্রমিত এলাকায় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনাসহ আজ বুধবার সকাল ৯টায় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্যবিভাগ, পুলিশবাহিনী সকলের সমন্বয়ে শিবনগর, হরিরামপুর এলাকায় স্যাম্পল কালেকশন ক্যাম্প করা হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে যান দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী কুতুবপুর গ্রামের মৃত হুরমত আলীর ছেলে খোদা বকস্ (৭৫)। করোনার উপসর্গ থাকায় তাকে আইসোলেশন ইউনিটের হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। ১০ মিনিটের মাথায় সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খোদা বকস্রে মৃত্যু হয়। গতরাতেই তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে দাফনের নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গার ১৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে পৌছায়। তার মধ্যে ১৩ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। নতুন শনাক্ত করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলার ৭ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১ জন এবং দামুড়হুদা উপজেলার ৫ জন। সদর উপজেলার ৭ জনের মধ্যে পৌর এলাকার মুক্তিপাড়ার একজন, গোরস্তানপাড়ার দুজন, হাসপাতালপাড়ার একজন, সদর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের একজন এবং চুয়াডাঙ্গায় কোয়ারেন্টিনে থাকা ঝিনাইদহের শৈলকূপার এক ও টাঙ্গাইল জেলার একজন। গতকাল শনাক্ত হওয়া ১৩ জনসহ জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১ হাজার ৯শ’ ৯৯ জনে। তারমধ্যে গতকাল দুজনসহ সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮শ’ ১৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬৮ জনের। বর্তমানে সক্রিয় রোগী রয়েছেন ১১২ জন। তারা নিজ বাড়িতে তথা হোম আইসোলেশন এবং হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অপরদিকে, দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় কোভিড-১৯ রোগী বাড়ছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে যেমন স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই, তেমন নমুনা পরীক্ষাও করাতে চাচ্ছেন না কেউ। অথচ করোনার উপসর্গ নিয়ে গতকাল একজনসহ এক সপ্তাহের ব্যবধানে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সচেতন মহল। গত সোমবারের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে করোনা আক্রান্ত সক্রিয় ১০১ জন রোগীর মধ্যে ৪৮ জনই ছিলেন দামুড়হুদার উপজেলার। গতকাল মঙ্গলবার আরও ৫ জন শনাক্ত হয়। উপজেলার সীমান্তবর্তী মুন্সীপুর, কুতুবপুর, কুড়–লগাছি, কার্পাসডাঙ্গা, ঝাঝাডাঙ্গা, নাস্তিপুর, বলদিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষের মধ্যে জ্বর, ঠা-া ও কাশিসহ কোভিডের নানা উপসর্গ দেখা দিয়েছে। ব্যাপক হারে উপসর্গ দেখা দিলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে নারাজ এখানকার বাসিন্দারা।