উত্তরের বাতাস বাড়িয়েছে শীতের তীব্রতা : মেলেনি সূর্যের দেখা
ঘন কুয়াশার কারণে কমে গেছে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য
চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে শীতবস্ত্র অব্যাহত
স্টাফ রিপোর্টার: সূর্যের দেখা মেলেনি। কনকনে শীতে কাঁপছে চুয়াডাঙ্গা। কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। কোথাও কোথাও বৃষ্টির মতো ঝরেছে কুয়াশা। হেডলাইট জ্বালিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেছে যানবাহন। হিম বাতাসে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন শিশু, বৃদ্ধ আর ছিন্নমূল মানুষ। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের করছেন অনেকে। হাটে, মাঠে ও নৌবন্দরে কৃষক-শ্রমিকের কাজ করায় বিঘœ ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ব্যবধান মাত্র ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ায় শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার রাত থেকে মৃদু বাতাস বইছে। তীব্র শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউ। শহরের এক রিকশাচালক বলেন, মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় খুব ঠা-া পড়ছে সারাদিনে সূর্য দেখা যায়নি। ঠা-া বাতাসে রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারছে না উল্লেখ করে আবহাওয়াবিদ বলেন, দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশা থাকছে। আবার কুয়াশা কাটতে না কাটতে সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে সূর্যের তাপ কম সময় ধরে পাওয়া যাচ্ছে। কুয়াশা যদি দ্রুত কেটে যেতো তাহলে সূর্যের তাপ বেশি সময় ধরে পাওয়া যেত। সেক্ষেত্রে শীত কম অনুভূত হতো। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়াও শীত বেশি অনুভূত হওয়ার কারণ মনে করছেন আবহাওয়াবিদ শাহীনূর ইসলাম। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা টেকনাফে ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৪ দশমিক ৫ এবং সর্বোচ্চ ছিলো ১৯ দশমিক ৬ ডিগ্রিলসিয়াস। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়নি। তাপমাত্রা আরও কমতে পারি কি না- এ প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়াবিদ শাহীনূর বলেন, কমলেও তা খুব বেশি না, সামান্য কমতে পারে হয়তো।
শ্রমিকরা জানান, কনকনে শীত পড়ছে। তারপরও থেমে নেই কাজ। বাধ্য হয়েই কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বাচ্চারা। এত শীতের মধ্যে স্কুলে যাচ্ছে তারা। হিমেল হাওয়ায় যেনো খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ চরমে। এদিকে সাধারণ মানুষ তীব্র ঠা-ায় ঘর থেকে বের হতে পারেনি। কিন্তু দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের জীবন যেনো সংকীর্ণ হয়ে উঠছে।
এদিকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে ঠা-াজনিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাঁচি-কাশিসহ কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। অপরদিকে শীতের কারণে সারাদিনই গরম পোশাক পরে মানুষজনকে চলাচল করতে দেখা যায়। হাসপাতালেও বাড়ছে রোগীর চাপ। চিকিৎসকরা শীতকালীন রোগবালাই থেকে রক্ষা পেতে গরম পানি পান করাসহ গরম কাপড় ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গায় সকাল থেকে ঘনকুয়াশায় অন্ধকারাচ্ছন্ন আবহাওয়া বিরাজ করছে। কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে গোটা জেলা। সারাদিনি সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘনকুয়াশায় দৃষ্টিসীমা ৫০০ মিটারে নেমে এসেছে। এমতাবস্থায় দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। শীতজনিত কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে।
চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড থাকায় এ জেলায় প্রচন্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। জেলার শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ব্যবধান মাত্র ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়া শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাতাসের আর্দ্রতা ৯৯ শতাংশ। দৃষ্টি সীমা ৫০০ মিটার। এর আগে এদিন সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিলো। ওই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৯৭ শতাংশ। গত ১০ দিন থেকে এ জেলায় ক্রমাগত তাপমাত্রা কমছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকায় সূর্যের দেখা মিলছে না। দিনে শীত কম হলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমে হাঁড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। এর ফলে জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়ছে এবং শীতজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ঠান্ডাজ্বর, কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। গত তিন দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রায় ৩৫০ জন রোগী শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। যা ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ১৫ গুণ। তাছাড়া হাসপাতালে বহিঃবিভাগে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আসাদুর রহমান মালিক বলেন, শীতের তীব্রতা বাড়ার কারণে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শীতজনিত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগী অন্যতম। শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। সেই সঙ্গে তাদের শরীরে গরম কাপড় পরিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। শীতে সকলকেই সচেতন হতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান জানান, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভান্ডার থেকে পাওয়া ২০ হাজার ১০০ কম্বল শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়ে গেছে। আমাদের পক্ষ থেকে আরো ৩০ হাজার কম্বলের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগিরই ওগুলো পাওয়া গেলে বিতরণ করা হবে। তাছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য চিঠি পাঠানো। সেখান থেকেও সাড়া মিলবে।
এ জেলায় দেশের কয়েকদিন আগে থেকেই চুয়াডাঙ্গায় ধীরে ধীরে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে সঙ্গে প্রচন্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। এ আবহাওয়া কয়েক অব্যাহত থাকবে।
চুয়াডাঙ্গায় তারাদেবী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। তারাই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা সদরের সরিষাডাঙ্গা রোমেলা খাতুন রহমানিয়া মাদরাসা ও লিল্লাহ বোডিং এবং ভালাইপুর বাজারের অসহায় লেবারদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। ভালাইপুর বাজারে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাবেক চেয়ারম্যান জিল্লুল রহমান, ভালাইপুর মোড় বাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হাজি মো. আমির হোসেনসহ অত্র এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।
এদিকে রাতে চুয়াডাঙ্গা সদরের সরিষাডাঙ্গা রোমেলা খাতুন রহমানিয়া মাদরাসা ও লিল্লাহ বোডিংয়ে অসহায় হত-দরিদ্র ছাত্রদের শীত নিবারনের জন্য তারাদেবী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ করা হয়। এসময় মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মাজুসহ শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন। সরিষাডাঙ্গা রোমেলা খাতুন রহমানিয়া মাদরাসা ও লিল্লাহ বোডিং এবং ভালাইপুর বাজারের অসহায় লেবারদের মাঝে দেড় শতাধিক কম্বল বিতরণ করা হয়। কম্বল বিতরণে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন তারাদেবী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর কবীর শিপলু।
দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে দামুড়হুদা উপজেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সুর্য্যরে দেখা মেলেনি। ফলে তীব্র শীতে শহর ও গ্রামগঞ্জের জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে, রাস্তাঘাটে যানবাহন ও মানুষ চলাচল কমে গেছে। কর্মজীবী মানুষগুলোর মাঝে দুঃচিন্তা বিরাজ করছে। শীতবস্ত্রের অভাবে হত-দরিদ্র মানুষগুলো চরম কষ্টে ছেলে মেয়েদের নিয়ে দিনাতিপাত করছে। বিপণী বিতানে কমে গিয়েছে বেচা-বিক্রি।
জানা গেছে, সারাদিনের ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে দামুড়হুদা উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার গ্রামাঞ্চলের নিম্নআয়ের মানুষ পড়েছে সবচেয়ে বেকায়দায়। মঙ্গলবার দিনভর ছিলো মৃদু কুয়াশার সাথে শীতের তীব্রতা। হঠাৎ আবহাওয়ার এমন পরিবর্তেনে সারাদিন সুর্যের আলোর দেখা মেলেনি। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে কুয়াশাচ্ছন্ন শুরু হয়। নিত্যদিনের চাইতে উপজেলার সড়কগুলো যান চলাচল কম ছিলো সেই সাথে বিপণী-বিতান, কোলাহলপূর্ণ স্থানগুলোতে লোকজন তুলনামূলক অনেক কম ছিলো। সারাদিন কুয়াশা আর তীব্র শীতের কারণে হতদরিদ্র মানুষগুলো আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করেছে। ফুটপাতের সবজি, মাছ, ফলমূল ও শীতের কাপড় ব্যবসায়ীরা বেচা-কেনা না থাকায় তারা দোকান গুছিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। পাখিভ্যান চালক, অটোরিকশা চালকরাও ভাড়ার আশায় আর বসে থাকছেন না। একে একে তারাও ফিরেছেন আপন নিড়ে।
দামুড়হুদা উপজেলা শহরের চৌরাস্তা মোড়ের শহিদুল ইসলাম মার্কেটের পল্লী সু স্টোরের মালিক রিয়ন জোয়ার্দ্দার বলেন, অন্যদিনের চেয়ে আজ মার্কেটে লোকজন অনেক কম এসেছে। যার ফলে বেচা-বিক্রি অনেক খারাপ হয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলার নতুন হাউলী গ্রামের পাখিভ্যান চালক আ. রশিদ বলেন, সারাদিন বসে থেকে ভাড়া হয়নি। দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৫০ টাকার ভাড়া মেরেছি। এভাবে চলতে থাকলে সবচেয়ে বেশী সমস্যা আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের। এবার সরকারি কোনো কম্বলও পাইনি।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা বেগম বলেন, উপজেলাটি ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। আর এই ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাসহ উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারি ভাবে ৪হাজার ২শ পিস কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে আবারও সরকারি কম্বল পেলে জণগণের মাঝে বিতরণ করা হবে।
হাসাদাহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রায়পুর ইউনিয়নের বিভিন্নপাড়া-মহল্লায় বাড়িতে বাড়িতে পর্যায়ক্রমে ৭০০ দুস্থ ও অসহায়দের মাঝে ব্যক্তিগতভাবে কম্বল বিতরণ করেন রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ শাহের ছেলে জীবননগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ-সভাপতি ইমরানুল হাসান নয়ন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রায়পুর ইউনিয়ন যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীগণ।