উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি : ঝিনাইদহ ও মুজিবনগরে বজ্রপাতে দু’কৃষকের মৃত্যু

চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশ এলাকায় বৃষ্টি : জীবননগর ও দত্তনগর ফার্মে কাল বৈশাখী ঝড় ও শিলা-বৃষ্টির আঘাত

স্টাফ রিপোর্টার: গতকাল চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে চারিদিকে আকাশ মেঘে ঢাকা পড়ে অন্ধকার নেমে আসে। এরপর শুরু হয় বৃষ্টি। এছাড়াও জীবননগর ও দত্তনগর ফার্ম এলাকায় কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে বীজ ধান, আম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বিদ্যাধরপুর গ্রামে বজ্রপাতে শাহাবুদ্দিন নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। ঝিনাইদহের কুবিরখালীতে বজ্রাঘাতে সুজন আহমেদ (২৮) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে বুধবার রাতের ১০ মিনিটের কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা-বৃষ্টিতে বিএডিসির দত্তনগর কৃষি ফার্মের ৫টি বীজ উৎপাদন খামারের ১১৫৫ একর ক্ষেতের বীজধান মাটির সাথে মিশে গেছে। এছাড়াও আমসহ ব্যাপক ক্ষতিসাধান হয়েছে ভুট্টাসহ উঠতি ফসলের।

বিএডিসির দত্তনগরের ৫টি বীজ উৎপাদন খামারের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১১ কোটি টাকা। এছাড়াও যাদবপুর, গঙ্গাদাসপুর, পাথিলা, সুটিয়া, সোন্দাহ, করিমপুর ও তারানিবাস মাঠের ২৫ হেক্টর জমির ধান শিলা-বৃষ্টির কবলে পড়েছে। এর মধ্যে ১০ হেক্টর জমির ধান মাটির সাথে মিশে গেছে। খবর পেয়ে বিএডিসির অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাাপক (খামার) ফখরুল হাসান প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ গতকাল বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্ত ৫টি খামারের বীজ ধানের ক্ষেত পরিদর্শন করেন।

বিএডিসির পাথিলা বীজ উৎপাদন খামারের উপপরিচালক মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন মোল্লা জানান, ধান কাটা চলছে। এ অবস্থার মধ্যে বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা-বৃষ্টিতে তার খামারের ২৬৬.৩২ একর জমির ধান সম্পূর্ণরূপে মাটির সাথে মিশে গেছে। এর মধ্যে ব্রি ধান-২৮ ২একর, ব্রি ধান-৫০ ১৫একর, ব্রি ধান-৬৩ ৭ একর, ব্রি ধান-৮৯ ২০একর, বঙ্গবন্ধু-১০০ ২০একর, ব্রি ধান-৯২ ৪৭একর. ব্রি ধান-৭৪ ১২একর এসএলএসএইচ ১৩৮.৩২একর। তিনি জানান এসকল ক্ষেত হতে এক ছটাক ধীন বীজও সংগ্রহ করার মত অবস্থা নেই। ক্ষতির পরিমাণ ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা। মথুরা খামারের উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান তার খামারের ২৭৮একর, গোকুলনগর খামারে উপপরিচালক জাহিদুল ইসলাম জানান তার খামারের ৩৯২ একর, করিঞ্চা খামারের উপপরিচালক মামুনুর রহমান জানান তার খামারের ১৫২ একর ও কুশাডাঙ্গা খামারের উপপরিচালক রেজাউল করিম জানান তার খামারের ৯৫ একর জমির বীজ ধানের ক্ষতি হয়েছে। দত্তনগর ফার্মের জয়েন্ট ডাইরেক্টর মো. কামরুজ্জামান শাহিন জানান, পাথিলা খামারসহ ৫টি খামারের ১১৫৫ একর জমির ধান বিনষ্ট হয়েছে। সবমিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১১ কোটি টাকা।

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখতে পরিদর্শনে আসা বিএডিসির অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (খামার) ফখরুল হাসান প্রধান বলেন, শিলা-বৃষ্টিতে পাকা ধানের শতভাগ ক্ষতিসাধন হয়েছে। বীজ ধান ক্ষেতের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে আগামীতে কিছুটা হলেও উফসি ও হাইব্রিড জাতের বীজের সংকট তৈরি হবে। জীবননগর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আতিকুল আলম জানান, ঝড় ও শিলা-বৃষ্টিতে ২৫ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১০ হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়েছে। সেই সাথে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে আম ও উঠতি ফসলের। সুটিয়া গ্রামের ধান চাষি আব্দুর রহমান জানান ঝড় ও শিলা-বৃষ্টিতে তার ৬ বিঘা জমির ধান মাটির সাথে মিশে গেছে।

মুজিবনগর প্রতিনিধি  জানিয়েছেন, মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বিদ্যাধরপুর গ্রামে বজ্রপাতে শাহাবুদ্দিন (৩৭) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে বিদ্যাধরপুর গ্রামের মাঠে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহাবুদ্দিন মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর ইউনিয়নের বিদ্যাধরপুর গ্রামের মৃত্যু আলী হোসেনের ছেলে। জানা গেছে, ঘটনার সময় শাহাবুদ্দিনসহ কয়েকজন কৃষক মাঠে কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে দারিয়াপুর লাউ গড়ার মাঠ নামক স্থানে পৌঁছুলে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। ঝড় বৃষ্টি চলার সময় বজ্রপাতে আঘাত হানে। এ সময় বজ্রপাতে শাহাবুদ্দিন ঘটনাস্থলে নিহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী একই গ্রামের হাবিবুর জানান, তারা ৩ জন মাঠের কাজ শেষ করে বাড়িতে আসার সময় দারিয়াপুর লাউ গড়ার মাঠ নামক স্থানে পৌঁছুলে বজ্রপাতে আঘাত আনলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা তার লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মুজিবনগর থানা পুলিশ। নিহত শাহাবুদ্দিনের স্ত্রীসহ ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে।

বাজার গোপালপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের কুবিরখালীতে বজ্রাঘাতে সুজন আহমেদ (২৮) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ওই গ্রামের মাঠে এই ঘটনা ঘটেছে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের কুবিরখালী গ্রামের খালপাড়ার রমিজ উদ্দিনের ছেলে এক সন্তানের জনক সুজন আহমেদ পেশায় কৃষক ও কৃষি শ্রমিক। গতকাল বৃহস্পতিবার পাশে গান্না ইউনিয়নের কালুহাটি গ্রামে সকালে ধানকাটা শ্রমিকের কাজ করতে যায়। দুপুরে বাড়িতে ফিরে এসে গ্রামের মাঠে নিজের জমিতে কেটে রাখা ধানের হালা বেঁধে বাড়িতে ফিরে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরই আকাশে মেঘ ও বজ্রসহ বৃষ্টি পাতের শুরু হয়। সেই সময়ে সুজন আহমেদ বেঁধে জাউলি দিয়ে রাখা ধানের গাদা পলিথিন কাগজ দিয়ে ঢেকে বাড়িতে ফেরার পথে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়। সুজনের এমন অকালমৃত্যুতে নিকটজন ও পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কালবৈশাখী ঝড়ে এবং শিলাবৃষ্টিতে ঝিনাইদহের মহেশপুরে উঠতি বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বুধবার (২৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে হঠাৎ করে শুরু হওয়া ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে লিচু, আম, ভুট্টা ও বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক।

সরেজমিনের ঘুরে দেখা যায়, বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বরূপপুর, আজমপুর, মান্দারবাড়িয়া, নাটিমা ইউনিয়ন ও পৌরসভাধীন বিভিন্ন গ্রামের ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় ও একই সঙ্গে শিলাবৃষ্টিসহ মুসলধারায় বৃষ্টি হয়। এতে ওই এলাকার কৃষকের জমির পাকা ধান শিলার আঘাতে ঝরে পড়েছে ও ঝড়ে আধা পাকা ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে।

মহেশপুর পৌর এলাকার বোয়ালিয়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘শিলা বৃষ্টিতে তাদের ১৬ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়েছে। শুধু খড় ছাড়া কিছুই নেই।’ শংকহুদা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক বাহাজ্জেল হোসেন জানান, অন্যের সাড়ে ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে তিনি এবার বোরো ধান চাষ করেছেন। ফলন ভালোই হয়েছিল। কিন্তু ঝড় আর শিলা বৃষ্টিতে তার সব ধান ঝরে গেছে। একই অবস্থাা ওই এলাকার শত শত কৃষকের।

মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা জানান, চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে ২১ হাজার ৭’শ ৬০ হেক্টর জমিতে এরমধ্যে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ১৪শ হেক্টর জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More