বহু গ্রাহকের লগ্নিকৃত অর্থের বিনিময়ে পণ্য পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত
স্টাফ রিপোর্টার: লোভনীয় হ্রাস মূল্যে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য সামগ্রী দেয়ার কথা বলে অগ্রিম কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া বেশ ক’টি ই-কর্মাসের তহবিলের হিসেব নিতে শুরু করেছে সরকার। ইতোমধ্যেই ইভ্যালির ৩৩৯ কোটি টাকার অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। ইভ্যালি ডটকম যে পরিমাণের অগ্রিম টাকা নিয়েছে এবং যে পরিমাণের সম্পদ ইভ্যালির রয়েছে তা দিয়ে মাত্র ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে পারবেন। বাকি গ্রাহক ও মার্চেন্টের পাওনা পরিশোধ করা ওই ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব নয়।
জানা গেছে, গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া অগ্রিম এবং মার্চেন্টের পাওনা ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা ‘আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে’ ই-কমার্স প্লাটফর্ম ইভ্যালির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার কমিশন অনুসন্ধানের বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে এই বিষয়ে অনুসন্ধান করতে দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান দলকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে সংস্থার উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক জানিয়েছেন। অপরদিকে একসূত্র বলেছে, আদিয়ান মার্টসহ বেশ কটা ইন্টারনেট ভিত্তিক অগ্রিম অর্থ নিয়ে অবিশ^াস্য কমমূল্যে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য বিক্রির দেয়ার কথা বলে কোটি কোটি টাকা নিয়েছে, ওসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
‘ইভ্যালির বিষয়ে কমিশনে আগে থেকেই একটি অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আরেকটি নতুন অভিযোগ পাওয়ার পর তা দুই সদস্যের টিমের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং অণুবিভাগ থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগটি ‘সুনির্দিষ্ট’ জানিয়ে এই দুদক কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট হওয়ায় এখন অনুসন্ধান কার্যক্রম গতিশীল হবে।’ এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইভ্যালি ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের মোবাইলফোনে কল দেয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এর আগে গত ৪ জুলাই দুদক চেয়ারম্যানকে দেয়া এক চিঠিতে ইভ্যালি ডটকমের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের চিঠির সঙ্গে ইকমার্স প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৭ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদনও যুক্ত করে দেয়া হয়। দুদকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ইভ্যালির বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করে একটি প্রতিবেদন দেয়। এই প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ১৪ মার্চ দেখা যায়, ইভ্যালি ডটকমের মোট সম্পদ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা (চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা) এবং মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা। ‘উক্ত তারিখে ইভ্যালি ডটকমের গ্রাহকের নিকট দায় ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের নিকট দায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা। গ্রাহকের নিকট থেকে অগ্রিম হিসেবে গৃহিত ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের নিকট থেকে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকার মালামাল গ্রহণের পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির নিকট কমপক্ষে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ ১ হাজার ৯১৪ টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির নিকট সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা। দুদকে পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘ইভ্যালি ডটকমের চলতি সম্পদ দিয়ে মাত্র ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে বা অর্থ ফেরত দিতে পারবে। বাকি গ্রাহক ও মার্চেন্টের পাওনা পরিশোধ করা উক্ত কোম্পানির পক্ষে সম্ভব নয়। ‘তদুপরি গ্রাহক ও মার্চেন্টের নিকট হতে গৃহিত ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ ১৮ হাজার ১৭৮ টাকার কোনো হদিস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে গ্রাহক ও মার্চেন্টের নিকট হতে গৃহিত ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ ১৮ হাজার ১৭৮ টাকা আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের আলোকে ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত করে কোনো আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রাহণের জন্য চিঠিতে দুদককে অনুরোধ করা হয়। এদিকে সম্প্রতি ইভ্যালি ও আদিয়ান মার্টসহ ৭টি ইকমার্সের ব্যাংক হিসেব তলব করা হয়। সূত্র বলেছে, হিসেব তলবের পরই গ্রাহকদের মধ্যে অনেকেই অনিশ্চয়তার প্রহর গুনতে শুরু করেন।