আসন্ন ডিসেম্বরের মধ্যে খুলনা বিভাগের অন্তর্গত উপজেলা ও পৌরসভা এবং জানুয়ারির মধ্যে সব জেলার সম্মেলন শেষ করতে চায় আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম। পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিভেদ বা দ্বন্দ্বও দূর করতে চান টিমের সদস্যরা। শনিবার বিভাগীয় টিমের বৈঠকে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আমিরুল ইসলাম মিলন, পারভীন জামান কল্পনা ও অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সভা শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত চলে। সভায় খুলনা বিভাগে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা পর্যালোচনা ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বৈঠকে চারটি জেলার সম্মেলনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটির তারিখ আগেই চূড়ান্ত ছিল। বাকি একটি জেলার বর্ধিত সভার তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। সেটির সম্মেলনের তারিখও দ্রুত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সম্মেলনগুলো সফল করতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকব। তাদের কীভাবে আরও ঐক্যবদ্ধ করা যায়, নির্বাচনে কীভাবে জনসমর্থন আরও বাড়ানো যায়-এসব বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করব।
জানা যায়, খুলনা বিভাগে আওয়ামী লীগের ১১টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি রয়েছে। সেগুলো হলো-মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, বাঘেরহাট, খুলনা মহানগর, খুলনা জেলা ও সাতক্ষীরা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগে এবং পরে কুষ্টিয়া, যশোর, নড়াইল, বাঘেরহাট, খুলনা মহানগর, খুলনা জেলা ও সাতক্ষীরা জেলার সম্মেলন হয়েছে। এগুলোর কমিটিও পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। এখনো চারটি জেলায় সম্মেলন বাকি আছে। সেগুলো হলো-মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা। এর মধ্যে তিনটি জেলার সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে আগামী ৮ জানুয়ারি। ২২ সেপ্টেম্বর এই জেলার বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে ১৫ জানুয়ারি। একই সঙ্গে এই জেলার দুই উপজেলা-শৈলকুপা ও কোটচাঁদপুরের সম্মেলন হবে ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর। এছাড়া মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে ৬ ডিসেম্বর। এই জেলার কয়েকটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখও ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। ১৮ নভেম্বর মুজিবনগর উপজেলা, ১৯ নভেম্বর সদর উপজেলা, ২০ নভেম্বর মেহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগ এবং ৫ ডিসেম্বর গাংনী উপজেলা সম্মেলন হবে। খুলনা বিভাগে একমাত্র চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। এ জেলার বর্থিত সভার দিন ক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখান থেকেই চূড়ান্ত হবে সম্মেলনের তারিখ। একই সঙ্গে জেলার মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা শাখাগুলোর সম্মেলনের তারিখ নিয়েও আলোচনা হবে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকের কারণে ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ মাগুরা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলেন না। শনিবারের সভায় ওই বর্ধিত সভাগুলোর আলোচনা ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাকে অবহিত করা হয়। পাশাপাশি বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের বৈঠকে ওই বিভাগের জেলা, উপজেলা, থানা ও পৌর আওয়ামী লীগের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, জেলা সম্মেলনের আগেই উপজেলা, থানা ও পৌরসভার সম্মেলনের কাজ শেষ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আর আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন এবং জানুয়ারির মধ্যে জেলা সম্মেলনগুলো শেষ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় কয়েকটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে, তবে সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এটা করে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে নিজেদের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ বিভেদ বা দ্বন্দ্ব থাকলে সেগুলোও দূর করার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভা শেষে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির অনেকে আছেন, যারা প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগ হতে চান। আমাদের (আওয়ামী লীগ) দরজা-জানালা বন্ধ করার কারণে ওদের (বিএনপির) কমিটিটা এখনো ঠিকে আছে। যদি আমরা দরজাটা খুলে দিতাম কী পরিস্থিতি হতো, এটা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জিজ্ঞেস করুন।
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ