আলমডাঙ্গায় প্রকাশ্যে দিবালোকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইমরানকে কুপিয়ে খুন
লাশ নিয়ে উপজেলা শহরে বিক্ষোভ : হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতাকে দিনদুপুরে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। গতকাল শুক্রবার দুপুরে আলমডাঙ্গা শহরের গোবিন্দপুর মাঠপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আল ইমরান আলমডাঙ্গা উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের আবদুল জলিল ওরফে জুড়োনের ছেলে। তিনি আলমডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দলীয় নেতৃবৃন্দ বলছেন তাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হত্যা করেছে। তবে স্থানীয়রা বলেছেন, পূর্ব বিরোধের জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এ ঘটনায় ইমরানের লাশ নিয়ে উপজেলা শহরে বিক্ষোভ করেছে দলীয় নেতাকর্মীসহ এলাকাবাসী। তারা হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
পুলিশ ও এলাকাসূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে আলমডাঙ্গা শহরতলির গোবিন্দপুর মাঠপাড়ায় যাচ্ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আল ইমরান (২৫)। এ সময় কয়েকজন যুবক তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে সটকে পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে দুপুর ১২টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এলাকার কয়েকজন জানান, নিজ গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে মাস চারেক আগে ছোটখাটো বিষয়ে ইমরানের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ওই সময় দু’পক্ষই থানায় পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। পরে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় বিষয়টি থানায় বসে মীমাংসা হয়। বিরোধের জের ধরেই গতকাল শুক্রবার আল ইমরানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকেরই ধারণা।
প্রত্যক্ষদর্শী একই এলাকার আহাদ আলী জানান, ‘আমি এবং ইমরান বেলা ১১টার দিকে আলমডাঙ্গা রেলস্টেশন সংলগ্ন গোবিন্দপুর মাঠপাড়ার খালে মাছ ধরতে যাচ্ছিলাম। এ সময় মাসুদ ও সাকিব নামের দুজন রামদা দিয়ে ইমরানের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তারা ইমরানকে উপর্যুপরি ও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে মোটরসাইকেলযোগে দ্রুত সটকে পড়ে।’ অন্য এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মোটরসাইকেলে এক যুবক এসে পৌরসভার নওদা ব-বিল গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে সাকিব ও দুর্লভপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে মাসুদকে খালপাড়ে দ্রুত নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। এরপর তারা দুজন ইমরানকে রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় কিছুটা দূরত্বে অপরিচিত কয়েকজন যুবককে এলোমেলো হাঁটাচলা করতে দেখা যায়। ইমরানকে কুপিয়ে ফেলে রেখে দুজন হেঁটে গিয়ে তাদেরই মোটরসাইকেলে উঠে কামালপুরের দিকে চলে যায়। আল ইমরানের নিকটাত্মীয়রা জানায়, ইমরানকে মুমূর্ষু অবস্থায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বেলা সাড়ে ৫টার দিকে ইমরানের লাশ আলমডাঙ্গায় পৌঁছুলে দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকার হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। তারা লাশ নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানায়।
নিহত ইমরানের বাবা আব্দুল জলিল বলেন, ‘৪ মাস আগে গ্রামের কয়েকজন ছেলের সঙ্গে ইমরানের দ্বন্দ্ব দেখা দিলে থানায় বসে তা সমঝোতা হয়। আজ একা পেয়ে তারাই কুপিয়ে ইমরানকে হত্যা করেছে।’ আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম রিফাত বলেন, ‘আলমডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন অত্যন্ত নম্র, ভদ্র ও জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তার হত্যাকারীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’ চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ওবায়দুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আল ইমরান খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান; কিন্তু দলের নেতাকর্মীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি কয়েকমাস আগে আলমডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। তবে যারাই এ খুনের সঙ্গে জড়িত তারা সন্ত্রাসী। তাদেরকে দ্রুত গ্রেফতার দাবি করছি।’
আলমডাঙ্গা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, আলমডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আলম ইমরানের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটি টিম কাজ করছে। শুক্রবার বিকেল থেকেই থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, র্যাব, পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা অভিযান অব্যাহত রেখেছে। দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় আনা হবে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। হত্যাকা-ের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তারেক।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ৫টার দিকে আল ইমরানের লাশ কুষ্টিয়া থেকে আলমডাঙ্গায় পৌঁছায়। এ সময় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিফাতের নেতৃত্বে আল ইমরানের লাশ নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এতে দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ যোগ দেয়। বিক্ষোভ মিছিল শেষে শহরের স্বাধীনতা স্তম্ভ মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্মআহ্বায়ক মতিয়ার রহমান মতি, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাফিজুর রহমান মাফি, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ, চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্মআহ্বায়ক ইমরান আহমেদ, আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম টুকুল, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক আলম হোসেনসহ জেলা, উপজেলা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্মআহ্বায়ক মতিয়ার রহমান মতি বলেন, আলমডাঙ্গা থানার ওসি সম্পর্কে নিহত ইমরানের কাছে সুনাম শুনেছি। আলমডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরানের হত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কঠোর আন্দোলনে নামবে।
দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত ইমরানের জানাজায় আলমডাঙ্গা দারুস সালাম ঈদগা ময়দান ও গোবিন্দপুর ম-লপাড়া কবরস্থান ময়দানে ২য় জানাজা শেষে গোবিন্দপুর ম-লপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার জানাজায় অংশগ্রহণ করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ও সাবেক চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্মআহ্বায়ক মতিয়ার রহমান মতি, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাফিজুর রহমান মাফি, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিফাত, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ, আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম টুকুল, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক আলম হোসেন, সদস্য রাজ্জাক, হিরোক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ জেলা, উপজেলা ও পৌর নেতাকর্মীরা। এদিকে মিছিল থেকে আলমডাঙ্গা ফাতেমা টাওয়ারে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে টাওয়ারের মালিক মনজু হোসেন থানায় অভিযোগ করেন।