আলমডাঙ্গায় দাঁতের চিকিৎসা নিতে গিয়ে যুবকের মৃত্যু : দুই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
মর্ডাণ ডেন্টাল ক্লিনিক সিলগালা : ফাতেমা ক্লিনিকে অপারেশন বন্ধের নির্দেশ
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গায় দাঁতের চিকিৎসা নিয়ে এসে রুবেল হোসেন (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২৬ নভেম্বর শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি টিম মর্ডাণ ডেন্টাল সার্জারি ক্লিনিক ও ফাতেমা ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটার পরিদর্শন করেন। পরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগীদের চিকিৎসা করার দায়ে মর্ডাণ ডেন্টাল সার্জারি ক্লিনিক সিলগালা ও অনুমোদনের চেয়ে বেশি রোগী রাখার দায়ে ফাতেমা টাওয়ারের অপারেশন বন্ধ রাখার নির্শেন প্রদান করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গার পাইকপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে রুবেল আহমেদ জনি অগ্রণী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে খুলনায় চাকরী করেন। পাশাপাশি বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কয়েক বছর ধরে তার দাঁতের মাড়িতে সংক্রমণ রোগে আক্রমণ করে। বেশকিছুদিন ধরে তার দাঁতের মাড়িতে পুঁজ জমে। তিনি এই সংক্রমণ চিকিৎসার জন্য আলমডাঙ্গার মর্ডাণ ডেন্টাল সার্জারি ক্লিনিকের ওরাল এন্ড ম্যাক্সিলোপেসিয়াল সার্জারি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাক্তার আব্দুল হান্নানের কাছে আসেন। তিনি রোগীর চোয়ালের নীচে পুঁজ জমে থাকার কারণে শ্বাসনালী বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে নিশ্চিন্ত হন। রোগীর চিকিৎসার জন্য চোয়াল অবশ করার এক পর্যায়ে প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হলে রোগীকে দ্রুত স্থানীয় ফাতেমা ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালানো হয়। পরে অ্যানেসথেশিয়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আব্দুস সালামকে ঘটনাস্থলে ডাকা হয়। এরপর ডেকে নেয়া হয় নাক কান গলা সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার খালিদ মাহমুদকে। তৎক্ষণে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। তিনি এসময় শ্বাসপ্রশ্বাস একেবারেই নিতে পারছিলেন না। এ সময় শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার জন্য শ্বাসনালী (ট্রাক্সওসটমি) ফুটো করে কৃত্রিমভাবে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়। এতেও কাজ হয়নি। রোগীর পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়। ওই পরিস্থিতিতে রোগীকে অক্সিজেন দিয়ে কুষ্টিয়া মান্নান হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে ২৬ নভেম্বর শনিবার চুয়াডাঙ্গার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম মর্ডাণ ডেন্টাল সার্জারি ক্লিনিক ও ফাতেমা ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটার পরিদর্শনে আসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নূর, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ সাঈদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. নাজনিন সুলতানা কনা, আলমডাঙ্গা থানার এসআই পলাশ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগীদের চিকিৎসার অভিযোগে মর্ডাণ ডেন্টাল সার্জারি ক্লিনিক সিলগালা করে দেন। একই সময় প্রতিনিধি দল আলমডাঙ্গার ফাতেমা টাওয়ারে ফাতেমা ক্লিনিকে গিয়ে দেখেন অনুমোদন চেয়ে বেশি রোগী চিকিৎসা ও অপারেশ করার দায়ে ফাতেমা ক্লিনিকে অপারেশন বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেন।
এদিকে দাঁতের সংক্রমণ চিকিৎসার সময় শ^াসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করার জন্য শ্বাসনালী ফুটো করে কৃত্রিমভাবে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যবস্থাকালে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।