আওয়ামী লীগ নেতাকে গলা ধাক্কা দেয়ায় দুজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
চুয়াডাঙ্গার ভালাইপুরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এক আসামির আদালতে স্বীকারোক্তি
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় এক নারীর সঙ্গে ঝগড়াকে কেন্দ্র করে দোকান কর্মচারী রিয়নকে বাড়ি থেকে তুলে আনেন কয়রাডাঙ্গার লোকজন। পথে ভালাইপুর বাজারে তাদের সঙ্গে হুচুকপাড়ার লোকজনের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে কয়রাডাঙ্গার অজ্ঞাতনামা একজন হুচুকপাড়ার আওয়ামী লীগ নেতা ছানোয়ারকে গলা ধাক্কা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছানোয়ারের অনুসারী বাঁধন নামের একজন সজল ও মামুনের পেটে ও বুকে ছুরিকাঘাত করেন।
চুয়াডাঙ্গায় সদর উপজেলার ভালাইপুরে গত ২৫ এপ্রিল ছুরিকাঘাতে খুন হন সজল আহমেদ (২৭) ও মামুন অর রশিদ (২৪) নামের দুই তরুণ। হত্যাকা-ের ঘটনায় করা মামলায় বৃহস্পতিবার হৃদয় হোসেন (২৭) নামের এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে তিনি এসব তথ্য জানান। বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. রিপন হোসেন হৃদয়ের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। হৃদয় হোসেন হুচুকপাড়া এলাকার মিলন হোসেনের ছেলে। পেশায় তিনি ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক।
নিহত সজল আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা ইউনিয়নের কয়রাডাঙ্গা গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে। পেশায় তিনি আলমসাধু চালক ছিলেন। আর এনজিওকর্মী মামুন একই গ্রামের আবদুল আজিজের ছেলে। জোড়া খুনের মামলার হুকুমের আসামি ছানোয়ার। তিনি সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের হুচুকপাড়া গ্রামের উসমান আলীর ছেলে এবং আলুকদিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাব্বুর রহমান হৃদয়ের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ২৭ এপ্রিল হুচুকপাড়া থেকে হৃদয়কে গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতারের পর তিনি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে বুধবার তাকে আদালতে তোলা হয়। আলোচিত মামলায় এখন পর্যন্ত মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দুজনকে ঘটনার রাতেই সদর থানা-পুলিশ গ্রেফতার করে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।
সূত্র জানায়, আসামি হৃদয় আদালতকে বলেছেন, ‘২৫ এপ্রিল রাতে শুনতে পান যে চাচাতো ভাই রিয়নকে কয়রাডাঙ্গার লোকেরা তুলে নিয়ে গেছে। শোনার পরপরই তিনি ভালাইপুর গিয়ে দেখেন, উভয়পক্ষের কথা কাটাকাটি চলছে। কয়রাডাঙ্গার সবাই খালি হাতে থাকলেও হুচুকপাড়া গ্রামবাসীদের মধ্যে আমার (হৃদয়ের) হাতে গাছের ডাল, আমিনের হাতে ইট এবং জাহাঙ্গীর, ছানোয়ার, বাঁধন ও বিক্রমের হাতে বাটাম ছিলো। তবে আসামি আকাশ, সাজে, মিঠু, রতন ও ইভান ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তাদের হাতে কিছু ছিলো না। উভয়পক্ষের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে কয়রাডাঙ্গার একজন ছানোয়ারের গলা ধাক্কা দিলে হুচুকপাড়ার লোকজন ক্ষেপে যায়। জাহাঙ্গীর ও বিক্রম লাঠি দিয়ে কয়রাডাঙ্গা গ্রামের কয়েকজনকে পেটান। হৃদয়ের হাত থেকে ডাল নিয়ে আকাশ একজনকে মারধর করেন। একপর্যায়ে বাঁধন ড্যাগার (ছুরি) বের করে একজনের পেটে এবং আরেকজনের বুকে ঢুকিয়ে দেন।’
২৫ এপ্রিল দুপুরে ভালাইপুর বাজারের আশরাফুল বস্ত্রালয়ে ছিটকাপড় কিনতে গিয়ে ছামেনা খাতুন নামের এক নারীর সঙ্গে দরদাম নিয়ে দোকান কর্মচারী রিয়নের তর্কবিতর্ক হয়। ওই তর্কবিতর্ককে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। পরে ছুরিকাঘাতে দুজন নিহত হন। এ ঘটনায় আলুকদিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন, বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানাসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। নিহত মামুনের ভাই স্বপন আলী বাদী হয়ে ২৬ এপ্রিল মামলাটি করেন।