অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন করতে গিয়ে পায়ুপথের নালী কাটলেন চিকিৎসক

মেহেরপুরে চিকিৎসকের ভুলে জীবন যেতে বসেছে বৃদ্ধ কুদ্দুস আলীর

স্টাফ রিপোর্টার: মেহেরপুরে চিকিৎসকের ভুলে জীবন যেতে বসেছে বৃদ্ধ কুদ্দুস আলীর (৭০)। অ্যাপেন্ডিক্সের অপারেশন করতে গিয়ে তার পায়ুপথের নালী কেটে ফেলেছেন এক চিকিৎসক। পরবর্তীকালে ফের অস্ত্রোপচার করেও সুস্থ হতে পারেননি তিনি। বর্তমানে অর্থসংকটে নিরুপায় হয়ে নিজ বাসায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন কুদ্দুস আলী। তিনি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের বাওট গ্রামের বাসিন্দা।

জানা গেছে, হালকা পেটে যন্ত্রণা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন কুদ্দুস। পরীক্ষা করে জানা যায়, তার অ্যাপেন্ডিক্সের অপারেশন করতে হবে। গত ২ মার্চ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে মেহেরপুর শহরের মেহেরপুর ক্লিনিকের ডা. মিজানুর রহমান তার অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন করেন। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরদিন অসুস্থ হয়ে পড়লে ৫ মার্চ কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

কুষ্টিয়ায় গেলে ভুল চিকিৎসার কথা জানতে পারে আবদুল কুদ্দুসের পরিবার। ভুলে তার মলদ্বারের পথ কেটে গেছে বলে জানিয়ে ফের অস্ত্রোপচার করেন কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক। তবে অপারেশন করলেও এখনো সুস্থ হতে পারেননি কুদ্দুস। চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পেরে এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তিনি।

কুদ্দুস আলীর মেয়ে শিউলি খাতুন বলেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আমার বাবার পেটে ব্যথা শুরু হলে গাংনীর রাজা ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অ্যাপেন্ডিসাইটিস শনাক্ত হয়। বাবাকে আমার ফুফুর পরামর্শে মেহেরপুর ক্লিনিকে ভর্তি করি। ২ মার্চ ক্লিনিকে ডা. মিজানুর রহমান আমার বাবার অপারেশন করেন। অপারেশনের পর ক্লিনিকে ভর্তি থাকাবস্থায় আমার বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তখন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বাবাকে চিকিৎসা না দিয়ে জোর করে রেফার করে দেয়। পরে বাবাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সার্জন ডা. ইমরান আমার বাবার দ্বিতীয় দফা অপারেশন করেন। অপারেশন শেষে তিনি জানান, প্রথম অপারেশনটি ভুল ছিল, অ্যাপেন্ডিক্সের নালী কাটার পরিবর্তে পায়খানার নালী কেটেছেন চিকিৎসক। আমার বাবা এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।

কুদ্দুস আলীর ছেলে জামাল উদ্দীন বলেন, বাবার চিকিৎসার জন্য প্রতিদিন ৫/৬ হাজার টাকা করে খরচ হচ্ছিলো; যা আমাদের পক্ষে আর বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। বাবার অপারেশনের টাকা ছিল না। বিভিন্নজনের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে অপারেশন করা হয়। এমন কোনো সম্পদ নেই যা বিক্রি করে তার চিকিৎসা করাবো।

তিনি বলেন, মেহেরপুর ক্লিনিকের ডা. মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো জবাব মেলেনি। বাধ্য হয়ে গত ২৫ মার্চ বাবাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি। তিনি এখন বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। এ বিষয়ে আমি ৩০ মার্চ মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছি।

গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ বলেন, কুদ্দুস আলী অত্যন্ত অসহায় মানুষ। স্থানীয়দের সহায়তা নিয়ে বাঁচার আশায় অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন করেছিলেন। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আমরা ডা. মিজানুর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সেইসঙ্গে ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি করছি।

মেহেরপুর ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী ডা. মিজানুর রহমান বলেন, অপারেশনের সময় ভুলবশত মলদ্বারের নালী কেটে গিয়েছিল। রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল। যেহেতু আমার কাছে ভুলক্রমে কেটে গেছে তাই এই দায়ভার সম্পূর্ণ আমার।

সিভিল সার্জন ডা. জওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। কমিটি গঠন করে তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More