অবসরে পাঠানো হলো ২২ সাবেক ডিসিকে

স্টাফ রিপোর্টার: ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিতর্কিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ২২ জন সাবেক জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে দুজন সচিব, ১৮ জন অতিরিক্ত সচিব, একজন যুগ্মসচিব এবং একজন উপসচিব রয়েছেন। তারা সবাই ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এসব কর্মকর্তার অবসর সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই দিন ওএসডি অবস্থায় থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব আবু হেনা মো. মোর্শেদ জামানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তিনি বিদায়ি হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে প্রশাসনের সর্বত্র ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতেন-এমন অভিযোগ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অবসরে পাঠানো কর্মকর্তারা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন, এ বিষয়ে সতর্ক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত ১২ জন সচিব, ৫ জন গ্রেড-১-সহ ২৯ জন অতিরিক্ত সচিব, একজন যুগ্মসচিব এবং একজন উপসচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার। এছাড়া অপর এক আদেশে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল খালেককে পদোন্নতি দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসাবে পদায়ন করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, যারা অবসরে চলে গেছেন, কিন্তু সার্ভিসে থাকা অবস্থায় যারা কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন-তাদের বিষয়ে আমরা দুদকে মামলা দিচ্ছি। অবসরে যাওয়া মানেই যে মুক্তি পেয়ে যাবেন, তা কিন্তু নয়। যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তারা অবসরে যাওয়ার পরও তাদের ফলোআপ করা হচ্ছে এবং হবে। জনস্বার্থে সরকার এখানে কাউকে ছাড় দেবে না। তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকবে, তাদের পুরো ‘কেস টু কেস’ দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে এবং দুদকে চিঠিপত্র চলে গেছে। জনপ্রশাসন সচিব আরও বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ডিসিসহ অন্যদের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাকে পুরো তালিকা দিয়েছি। তারা তদন্ত করে যে প্রতিবেদন দেবে, এর ওপর ভিত্তি করে যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম হবে তাদের ওএসডি এবং যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের বেশি তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে। সিনিয়র সচিব বলেন, জনগণের হয়ে সরকার অনেক শক্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং এগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জনপ্রশাসন সচিব বলেন, আপনারা জানেন, সম্প্রতি জনপ্রশাসন সম্পর্কিত একটি কমিটি হয়েছে। কমিটিতে চারজন উপদেষ্টা এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব রয়েছেন। কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রশাসনের বিষয়ে ওই কমিটিতে বেশ বড় কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রশাসন সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিনটি অগ্রহণযোগ্য ও দিনের ভোট রাতে করার নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ওই তিনটি ইলেকশনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় নির্বাচন সম্পন্ন করে স্বৈরাচারী সরকার। জোর-জবরদস্তি করে স্বেচ্ছাচারী সরকার ওই তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় আজ আমরা এ দুরবস্থায় পড়েছি। ওই সময় ডিসিরা অনেক বড় ধরনের নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছিলেন। কোনো একজন ডিসিও বলেননি আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করব, আমি রিটার্নিং অফিসার থাকব না, আমি রিজাইন করলাম এবং কাজ করব না। সিনিয়র সচিব বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময়ে ৪৩ জন সাবেক ডিসিকে ওএসডি করেছি। যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম, তাদের ওএসডি করা হয়েছে। আর যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের বেশি, তাদের বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে। মোখলেস উর রহমান বলেন, বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ২২ জনকে আজ (বৃহস্পতিবার) বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হলো। ইতোমধ্যে বিতর্কিত নির্বাচন করা সাবেক ডিসিরা সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এক প্রশ্নে সিনিয়র সচিব বলেন, শাস্তিমূলক এ ব্যবস্থা নেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিরা যেন প্রতিবাদ করতে পারেন। প্রতিবাদ না করলে কী পরিণতি হয়, তা এ ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। সামনে ভোট, আপনারা বর্তমানে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কী বার্তা দিতে যাচ্ছেন-এমন প্রশ্নে মোখলেস উর রহমান বলেন, সামনে নির্বাচন হবে। ডিসিরা তিনদিন (ডিসি সম্মেলনে অংশ নেয়া) থেকে গেলেন। আমরা ডিসিদের এ মেসেজ দিতে চাচ্ছি-আপনারা রিটার্নিং অফিসার হবেন, ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সাহসের সঙ্গে আইনকানুন মেনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। যারা আইন ও বিধি মোতাবেক দায়িত্ব পালন করবেন না, তারা এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে বার্তা পেয়ে যাবেন ফলাফল কী হবে। এখন যারা অতিরিক্ত সচিব, সচিব রয়েছেন; তাদের কারও কারও বিরুদ্ধেও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসাবে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধেও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত আসছে কি না-এমন প্রশ্নে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে যাদের নামে দুর্নীতি, অতিরঞ্জন, আইনের বাইরে থেকে অতিরঞ্জন হিসাবে যে কাজগুলো করেছেন, তাদের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। তারাও চাকরিবিধি অনুসারে সাজা পাবেন। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো দুই সচিবের মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া খানম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান রয়েছেন। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো অতিরিক্ত সচিবরা হলেন-এনামুল হাবীব, এসএম আলম, আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, মো. হামিদুল হক, সায়লা ফারজানা, তন্ময় দাস, মো. শওকত আলী, মো. তোফায়েল ইসলাম, মো. আব্দুল আওয়াল, ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির, ফয়েজ আহাম্মদ, মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, মো. মোখলেসুর রহমান সরকার, মো. রাব্বী মিয়া, ড. সুভাস চন্দ্র বিশ্বাস, কামরুন নাহার সিদ্দীকা, উম্মে সালমা তানজিয়া, মো. মাসুদ করিম। অবসরে পাঠানো যুগ্মসচিব মো. ওয়াহিদুল ইসলাম এবং উপসচিব আহমেদ কবির।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More