স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকাসহ সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় অপারেশন ডেভিল হান্টে ৬০৭ জনসহ মোট এক হাজার ৭৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য জানান। তিনি জানান, অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেফতার করা হয়েছে ৬০৭ জনকে। এছাড়া এই বিশেষ অপারেশনসহ অন্যান্য অভিযানে গত সোমবার রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত এক হাজার ৭৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় ৯জন ও মেহেরপুরে ৩জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্টে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলো হলো, দুইটি বিদেশি পিস্তল, একটি এলএমজি, একটি ওয়ান শুটারগান, একটি পাইপগান, দুই রাউন্ড গুলি, ৫টি কার্তুজ, দুইটি চাপাতি, ৬টি দা/রামদা, ১৩টি চাকু/ছোরা, দুইটি কুড়াল, একটি করাত, তিনটি হাতুড়ি, দুইটি প্লাস, দুইটি বাটাল ও দুইটি লাঠি।
চুয়াডাঙ্গায় ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযানে ১ দিনে মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় তাদের গ্রেফতারের এ তথ্য জানায় পুলিশ। তাদের মধ্যে পাঁচজন আওয়ামী লীগ, তিনজন যুবলীগ ও একজন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সদস্য। গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কনক কুমার দাস। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তিনি বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সদর থানা-পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য ও সদর উপজেলার আকুন্দবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সাঈদ আহম্মেদ (উৎস)। এছাড়া গ্রেপ্তার অন্য ব্যক্তিরা হলেন আলমডাঙ্গার বারাদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শামসুজ্জামান, জামজামি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জামিরুল ইসলাম, ভাংবাড়িয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম, দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী, জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রাশেদ মিয়া। অন্যদিকে দর্শনা থানা-পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন নবগঠিত নেহালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মফিজুল ইসলাম, সহসম্পাদক জামাল উদ্দিন ও যুবলীগের সহসম্পাদক সালাউদ্দিন।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে সন্ত্রাস দমন আইনে সাবেক কাউন্সিলর মঞ্জুরুল কবির রিপনসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত সোমবার রাতে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশের একাধিক টিম শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতার কৃত মঞ্জুরুল কবির রিপন মেহেরপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন। বাকিরা হলেন- শিশু বাগানপাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে এনামুল হক বাবু, নতুনপাড়ার আব্দুল কাদেরের ছেলে হৃদয়। মেহেরপুর সদর থানার ওসি মেসবাহ উদ্দিন জানান, সারাদেশে অপরারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানের অংশ হিসেবে সন্ত্রাস দমন আইনে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে গাংনী উপজেলার নওয়াপাড়া থেকে দবির আলী নামের এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে গাংনী থানা পুলিশ।
মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় ডেভিল হান্ট অভিযানে ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের ২ নেতাকে আটক করেছে মহেশপুর থানা পুলিশ। সোমবার দিবাগত রাতে ডেভিল হান্ট অভিযান চালিয়ে উপজেলার ৪নং ওয়ার্ডের জলিলপুর গ্রামের হবিবুর রহমানে ছেলে ছাত্রলীগের নেতা সাব্বির রহমান (২৮) এবং নাটিমা ইউনিয়নের কাঞ্চন মোল্লার ছেলে ৩নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি রওশন আলী (৩৮) আটক করেছে মহেশপুর থানা পুলিশ। মহেশপুর থানার এসআই আসাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
উল্লেখ্য, ডেভিল অর্থ হচ্ছে ‘শয়তান’ আর হান্ট অর্থ ‘শিকার’। ডেভিল হান্ট, যার ইংরেজি শাব্দিক অর্থ গিয়ে দাঁড়ায় ‘শয়তান শিকার’ করা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত ডেভিল হান্ট বলতে, দেশবিরোধী চক্র, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় আনতে বুঝানো হয়েছে।
অপারেশন ডেভিল হান্ট একটি বিশেষ অভিযান। যা ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে একযোগে শুরু হয়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী হামলা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এই হামলায় নেতৃত্ব দেয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। হামলার ফলে বেশ কয়েকজন হতাহত হন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট’ নামক বিশেষ অভিযান শুরু হয়।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.