অনাবৃষ্টিতে কপালে চিন্তার ভাঁজ দামুড়হুদার পাট চাষিদের
পানির অভাবে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে পাট : বাম্পার ফলন হলেও লোকসানের আশঙ্কা
হাসমত আলী: দামুড়হুদার উপজেলায় পাটের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকদের মুখে হাসি নেই। কারণ পানির অভাবে পাট জাগ দেয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। এ বছর পাট জাগ দেয়ার সময় শুরু হয়েছে, এরপরও দামুড়হুদা উপজেলার অধিকাংশ কৃষক এখনো পাট কাটা শুরু করেননি। কারণ এরই মধ্যে যারা পাট কেটেছেন তারা জাগ দেয়ার জন্য পানি পাচ্ছেন না। পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি না হওয়ায় এবার নিচু এলাকাগুলোও রয়েছে পানিশূন্য। পানির অভাবে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে পাট। অনাবৃষ্টিতে জমির কাছাকাছি জলাশয়গুলোর পানি শুকিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রচ- খরতাপে জমিতে থাকা পাটগাছ একপ্রকার পুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। পাটচাষের সঙ্গে জড়িত কৃষক হাসান আলী, জালাল উদ্দীন, আব্দুল হালিম, মিজানুর রহমানসহ অনেকে জানান, খরতাপে পুড়ে যাওয়া পাটগাছ থেকে কোনো আঁশ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর যারা পাট জাগ দেয়ার জন্য জমি থেকে দূরে ভাগ্যক্রমে কোনো জলাশয় পেয়ে গেছেন, তাদের পরিবহণ খরচের পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরি খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ফলন ভালো হলেও তা হাসি ফোটাতে পারছে না কৃষকের মুখে। দামুড়হুদা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজামান জানান, চলতি বছর দামুড়হুদা উপজেলায় ৭ হাজার ৬শত ৬৩ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সময়মতো জাগ দিতে না পারলে কাক্সিক্ষত উৎপাদন পাওয়ার ব্যাপারে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন তিনি। কুড়–লগাছির ধান্যঘরা এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। কিন্তু আশপাশের কোথাও জাগ দেয়ার মতো পানি না থাকায় ২ বিঘা জমির পাট কেটে তা আরও প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরের একটি জলাশয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। এতে করে তার পরিবহণ খরচ বেড়ে গেছে। বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি খরচও। ইউসুফ আলী বলেন, ‘জাগ’ দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় ৩ বিঘা জমির পাট এখনো কাটতে পারিনি। কুড়–লগাছির জালাল বলেন, ‘আষাঢ় মাসের মধ্যেই পাট কেটে জাগ দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আশপাশের কোনো খাল-বিলে এখন পানি নেই। ১ বিঘা জমির পাট কেটে গাড়ি ভাড়া করে দূরের গ্রামে নিয়ে গিয়ে জাগ দেয়ার যে খরচ, তা দিয়ে উৎপাদন খরচ তোলা যাবে না।’ জালালের ভাষ্য, তার লাগানো পাট এখন খড়ি হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নেই। সিরাজুল ইসলাম বলেন, পাওয়ার ট্রলিতে ৪০০ টাকা প্রতি গাড়ি হিসেবে কুড়–লগাছির রায়সা বিলে নিয়ে আসছেন। তার ভাষ্যমতে, শ্রমিক, পাট পরিবহণ, পাট জাগ দেয়া, ছাড়ানো, ধোয়াসহ বাজারজাতকরণের উপযোগী করতে গিয়ে মূল টাকাই ওঠানো দায় হয়ে যাবে। কার্পাসডাঙ্গা বাজারের পাটের পাইকারি ব্যবসায়ী আমির হোসেনের কাছ থেকে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিমণ পাট ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাটের এই দর গত বছরের তুলনায় কম। দামুড়হুদা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজামান বলেন, পাট চাষ এবার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। মাঠে পাটের অবস্থাও ভালো। এখন পাট কাটার সময় চলছে। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে কৃষক পাট নিয়ে হতাশায় পড়েছে। এছাড়া বৃষ্টির অভাবে জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকায় পাট শুকিয়েও যাচ্ছে। ভারী বর্ষণ না হলে খাল-বিলে পানি জমবে না। সেক্ষেত্রে কৃষকদের সেচ দিয়ে জাগ দিতে হবে।