মনে পড়ে ডৌরি বা মাটির কোলার কথা
মো.শাহাবুদ্দিন: এক সময়ে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে থাকা মাটির তৈরি ডৌরি (কুটি) আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। গ্রামের মাটির তৈরি কাঁচা ঘরের সাথে সাথে এই পাত্রটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এক সময় এই ডৌরিতে (কুটিতে) বীজ সংরক্ষণ করতো কৃষকেরা। আধুনিক যুগের সাথে এরা পরাজিত হয়েছে। বীজ সংরক্ষণ করার জন্য কৃষি বিভাগ প্লাস্টিকের ছোট বড় ড্রাম সরবরাহ করায় তাতে বীজ সংরক্ষণ করা হয়।
জানা গেছে, এক সময়ে গ্রামে মাটির ৬-৮ চালা ঘর ছিলো। সে সময়ে গ্রামীণ পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণের জন্য কাদা দিয়ে মাটির ডৌরি (কুটি) তৈরি করতো। কোনো কোনো এলাকায় এটাকে কোলা বলা হয়। গাঁয়ের বধূরা এটেল মাটির সাথে ধানের কুড়া দিয়ে নিপুণ হাতে বাড়ির উঠোনে বসে এসব পাত্র তৈরি করতো। এ পাত্র তারা তৈরি করতো ধাপে ধাপে। আর রোদে শুকাতো আবার পরের ধাপ তৈরি করতো। যা শেষ করতে তাদের সময় লাগতো কয়েক মাস। সম্পূর্ণ ডৌরিটি তৈরি হয়ে গেলে ঘরের এক কোণে তুলে রাখতো। বীজধান, গম, ছোলা, মসুর, যব ডৌরির মধ্যে রেখে দিয়ে সুন্দর করে কাদা দিয়ে ডৌরির মুখ আটকে দেয়া হতো। এতে বীজ পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক থাকতো এবং পোকামাকড় থেকে নিরাপদ থাকতো। বীজ বোনার সময় ডৌরির মুখ খুলে সেসব বীজ বের করে বুনতো কৃষকরা। এ পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করার ফলে কোনো বীজ নষ্ট হতো না। আধুনিকতার যুগে আজ গ্রামীণ জনপদ থেকে মাটির তৈরি এসব ডৌরি বা কোলা বিলুপ্ত হতে চলেছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে মাটির ঘর ও মাটির কোলা। আধুনিকতার যুগে মাটির তৈরি ডৌরি দালান কোঠা ঘরে একেবারেই বেমানান লাগে বলে গ্রামের অনেকেই মনে করে। এক সময় প্রত্যেক কৃষকের বাড়িতে ২ থেকে ৫টা করে ডৌরি থাকতো। মাঝে মাঝে গৃহবধূরা মাটি গুলিয়ে এসব পাত্র আরো সুন্দর দেখার জন্য লেপে দিতো। আধুনিকতার যুগে বর্তমান প্রজন্ম ডৌরি (কুটি) কি তা অনেকেই জানে না বা দেখেনি। বর্তমান যুগে আধুনিক পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণের জন্য প্লাস্টিকের তৈরি ড্রাম বের হয়েছে। কৃষি বিভাগ চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ সংরক্ষণ করা ড্রাম দিলেও বীজ সংরক্ষণ কাজে ব্যবহার খুব একটা হয় না।