আনোয়ার হোসেন: বয়স বায়ান্ন নাকি বত্রিশ? শাদা চোখে দেখে বোঝা ভার। মধ্যবয়সী নারীর শরীর জুড়ে দারিদ্র্যের ছাপ। অজানা আতঙ্কমাখা দু চোখ দিয়ে যেনো অনারগল বেরুচ্ছে ‘জনমভরা দুঃখ’। সত্যিই দুখিনী নারী। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের কবরী রোডের কলেজপ্রান্তের ফুটপাথে নিজের হাতে গড়া ঝুপড়িই তার ঠিকানা। ঝড় ঝাপটা বৃষ্টির মাঝেও দিব্যি কাটান দিন রাত্রি।
না নারীর নাম বলতে পারেন না তার আবস্থলের আশপাশের কেউ। স্থানীয়দের প্রায় সকলেরই অভিন্ন উক্তি, ওই নারী দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই বসবাস করছেন ফুটপাথে গড়ে তোলা ঝুপড়িতে। কুড়িয়ে আনা পলিথিন, কাঠি কুটিই ওই ঝুপড়ি নির্মাণের উপকরণ। অবাক হলেও ভয়াবহ আম্পান ঝড়ে তার ঝুপড়ি উড়াতে না পারলেও এর আগে পরে কয়েক দফা ঝড়ো বাতাসে পড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি গাছের গুড়ি তাকে যেনো ইচ্ছে করেই গুড়িয়ে দেয়নি। পড়েছে পাশে। অবশ্যই গাছের ছোট ডালে ঝুপড়ি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও ঝুপড়িবাসী দুখিনী ছিলেন অক্ষত। সর্বশেষ গত শনিবার সন্ধ্যারাতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মাঝে ফুরফুরে বাতাসে ভেঙে পড়া কৃষ্ণচুড়াও বাঁচিয়ে দিয়েছে তাকে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সীমানা পাঁচিল ঘেসে থাকা বুড়ো কৃষ্ণচুড়া ভেঙে ফুটপাথসহ বিদ্যুতের তার লণ্ড ভণ্ড তছনছ- করলেও দুখিনীর ঝুপড়ি রেখেছে অক্ষত। ঝুপড়িবাসীও দিব্যি সুস্থ। দৃশ্য দেখে পথচারির তৃপ্তিমাখা উক্তি, সত্যিই, বুড়ো কৃষ্ণচূড়াও বুঝলো দুঃখিনীর দুঃখ। দেখালো দরদ। গতকাল রোববার দুখিনীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালে তিনি পূর্বের মতোই অপলক দৃষ্টিতে তার ভেতরের কথাগুলো যেনো বোঝানোর চেষ্টা করেন। না, নাম ধাম ঠিকানা কিছুই বলেননি তিনি। কীভাবে চলে পেট? সেও এক রহস্য। মাঝে মাঝে নিউ মার্কেটের প্রধান ফোটকের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। যে যা দিলো তাই নিয়ে ফেরেন ফুটপাথের আপন কুঠিরে। ওই কুঠির ঘিরেই তার যেনো বেঁচে থাকা। যেভাবে বেঁচে আছেন তিনি, তাকে কি সত্যিই বেঁচে থাকা বলা যায়! অথচ ধরিত্রীর বুখে এরকম অসংখ্য মানুষ ধুকছে, ওরাও নিশ্চয় সুখি হওয়ার স্বপ্ন দেখে। ওভাবেই বেঁচে ওরা সুখি নাকি দুঃখি তাই বা কে জানে?