তাছির আহমেদ: শুধু ফুলের সৌরভ কিম্বা রূপ নয়, তার পাতার সৌন্দর্য মুগ্ধ করার মতো। কামিনী পাতার অসাধারণ বিন্যাস সৌন্দর্য সৃষ্টিতে যোগ করে চলেছে ভিন্নমাত্রা। জনপ্রিয়তার মাঝে ব্যাপক বেড়েছে কামিনী পাতার ব্যবহার। তাই এর বাণিজ্যিক ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে কামিনী পাতার চাষ।
জানা গেছে, আমাদের দেশে যেসব ফুল ফোটে তার মধ্যে অন্যতম হলো কামিনী। বাগান সজ্জায় ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে প্রায় সব এলাকায় লক্ষ্য করা যায় তার উপস্থিতি। বসতবাড়ি, রাস্তার ধার, বাগান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সব জায়গাতেই চোখে পড়ে কামিনী গাছ। বিয়ের বাড়ি সাজাতে, গুণীজনদের বরণ ও শ্রদ্ধা জানাতে, জন্মদিনের অনুষ্ঠান, পূজা-পার্বণ, জাতীয় দিবস, সভা-সমিতি ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুলের সাথে ব্যাপক বেড়েছে কামিনী পাতার ব্যবহার। যা চোখে পড়ার মতো, অনেকটা যেখানেই ফুল সেখানেই কামিনী পাতার ব্যবহার। আর এই চাহিদার আলোকে বাণিজ্যিকভাবে কামিনী গাছ চাষ শুরু করেছেন উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের জয়রামপুর গ্রামের ঠাকুরপুর পাড়ার মৃত মোবারক হোসেনের ছেলে মহিদুর রহমান ও নজরুল মন্ডলের ছেলে কাজল।
কামিনী গাছ চাষি মহিদুর রহমান বলেন, কামিনীর ফুল নয়, শুধু ডালপাতা বিক্রির জন্য বাণিজ্যিকভাবে এ চাষ শুরু করেছি। নিজের ২ বিঘা জমিতে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলামের পরামর্শে চারা সংগ্রহ করে গেলো বছরের এপ্রিল মাস থেকে এ চাষ শুরু করি। এসব গাছের বয়স মাত্র ৯ মাস। ইতোমধ্যে গাছের অগ্রভাগের ডালপাতা কেটে, ছোট গোছা ২০ টাকা আটি দরে বিক্রি করা হয়েছে। এটি দীর্ঘমেয়াদি চাষ। অন্যান্য চাষের তুলনায় খরচ কম। রোগ বালাই নেই বললেই চলে, পরিচর্যা লাগে কম। বছরে গাছ থেকে কয়েকবার ডালপাতা সংগ্রহ করা যায়। এসব ডালপাতা ফুল ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন ফুল মার্কেটে সরবরাহ করে থাকে।
দামুড়হুদা বাজারের হাবিব ফুল ঘরের ফুল ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন লিটন বলেন, কামিনী পাতার সৌন্দর্য মুগ্ধ করার মতো। শাখা-প্রশাখায় ঠাসবুননে ছোট চিরসবুজ পাতাগুলি বেশ দৃষ্টিনন্দন। এর শাখা-প্রশাখা বেশ শক্ত। পুষ্পস্তবক তৈরি ও বিয়ের সজ্জায় কামিনী পাতার ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও ফুলের তোড়া সাজানো, ফুলদানি সাজানো, গাড়ী সাজানো, গেট সাজানো, মঞ্চ সাজানো, বাসর ঘর সাজানো, ফুলের মালা সাজানোসহ অন্যান্য ডেকোরেশনের কাজে কামিনীর ডালপাতা ব্যাপক ব্যবহৃত হচ্ছে। এর পত্রকগুলি লম্বাটে ডিম্বাকৃতি, উপরিতল চকচকে, গাঢ় সবুজ এবং লেবুগন্ধী। স্থান কালভেদে ১ গোছা পাতা বিক্রি হচ্ছে ২০-৪০ টাকায়।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কামিনী ফুল ও তার বাহারী ডাল-পাতার গুরুত্ব অনেক। কামিনী ফুল দ্রুত ঝরে যায় বলে এর বাণিজ্যিক ব্যবহার কম। তবে গাছের ডাল-পাতা বাহারী বলে এর চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। কামিনী গাছ চাষের জন্য খুব বেশী নয় এমন আর্দ্র মাটি প্রয়োজন। কামিনীর বীজ থেকে তৈরি চারা ও গুটি কলমের মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার করা যায়। কামিনী গাছ চাষে রোগ-বালাই বা পোকার আক্রমণ কম, বেশি পরিচর্যা লাগে না। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক গাছ থেকে বছরে দুই/তিন বার ডাল-পাতা সংগ্রহ করা যায়। এটি চিরসবুজ ক্ষুদ্র গুল্ম জাতীয় গাছ। ৩ থেকে ৭ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। ওপরের দিকে তেমন বাড়ে না। বাড়ে চারপাশে। দেখতে ঝোপের মতো লাগে। এটি লেবু গোত্রীয়।