গান গাইতে গাইতে মঞ্চে লুটিয়ে পড়লেন সাবিনা ইয়াসমিন

স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘদিন পর গতকাল শুক্রবার মঞ্চে ফেরেন কিংবদন্তি শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। তবে মঞ্চে উঠে গান গাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসব তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন গায়িকার মেয়ে ইয়াসমিন ফায়রুজ বাঁধন। বাঁধন বলেন, দীর্ঘদিন পর আম্মু শুক্রবার মঞ্চে গান শুরু করেন। তবে গানের মাঝপথে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। আম্মুর মাথাব্যথা শুরু হয়। পরে তৎক্ষণাৎ তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই মায়ের চিকিৎসা চলছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে গানের মঞ্চের বাইরে কিংবদন্তি শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। এই দীর্ঘ সময়ে গায়িকা ব্যস্ত থেকেছেন বিদেশ বিভুঁইয়ে রোগব্যাধি ও চিকিৎসার সঙ্গে। কারণ শরীরে ক্যান্সার ফিরেছিলো তার। প্রথম দফায় ২০০৭ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন এই সংগীতশিল্পী। পরে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে এবং গানেও ফিরেছিলেন। মাঝের বছরগুলোয় কেবল দেশে নয়, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে স্টেজ শো করেছেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফের সাবিনার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। দেশের পাশাপাশি ভারতীয় গণমাধ্যমেও প্রকাশ হয়েছিলো এই খবর। পরে দেশবাসীর উদ্দেশে এক বার্তায় সিঙ্গাপুরে তার চিকিৎসা নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন সাবিনা। তিনি বলেছিলেন গত ৭ ফেব্রুয়ারি তার দাঁতে ছোট একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। তারপর পুরোপুরি সুস্থ হতে তাকে অনেকগুলো রেডিওথেরাপি নিতে হয়েছে। কিছুদিন আগে সাবিনা ফিরে এসেছেন ঢাকায়। এর মধ্যে গত ৪ জানুয়ারি ঢাকাই সিনেমার অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমানের মরদেহ চ্যানেল আই প্রাঙ্গনে নেয়া হলে, সেখানে এসেছিলেন সাবিনা। ছেলেবেলার বান্ধবী অঞ্জনাকে নিয়ে পুরনো স্মৃতি সেদিন সাবিনা তুলে ধরেন সংবাদকর্মীদের সামনে। সাবিনার জন্ম ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, ঢাকায়। পৈতৃক নিবাস সাতক্ষীরায়। বেড়ে উঠেছেন সংস্কৃতিমনা পরিবারে। বাবা লুতফর রহমান ও মা মৌলুদা খাতুনও গানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সাবিনার পাঁচ বোনের মধ্যে ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমিনও গানের জগতের মানুষ। সংগীতের সঙ্গে সাবিনার বসবাস ছয় দশকের বেশি সময় ধরে। মাত্র সাত বছর বয়সে প্রথমবার স্টেজে গান করেছেন সাবিনা; ১৯৬২ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম গান করেন। ১৯৬৭ সালে প্রথম প্লেব্যাক করেন আমজাদ হোসেন ও নুরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমায়। এরপরের ইতিহাস কবেল জয় এবং সাফল্যের। ভারতের প্রখ্যাত সুরকার আর ডি বর্মণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সত্য সাহা, সুবল দাস, আলম খান, বাপ্পি লাহিড়ী, আলী হোসেন, খন্দকার নুরুল আলম, আলাউদ্দিন আলী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মত সুরকারদের সুরে অসংখ্য চলচ্চিত্রের গান কণ্ঠে তুলেছেন তিনি। সহশিল্পী হিসেবে, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, কুমার শানু, আশা ভোঁসলের মত শিল্পীকে পেয়েছেন তিনি। দশ হাজারেও বেশি গান কণ্ঠে তুলেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। গীতিকার নয়ীম গহরের লেখা ও সুরকার আজাদ রহমানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া দেশাত্মবোধক গান ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ একাত্তরের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গানের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে সব শ্রেণির শ্রোতাদের মাঝে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার ও ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More