নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সেই তিন জনের শেষ জনও গ্রেফতার
স্টাফ রিপোর্টার: নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় তিন জঙ্গিকে দীর্ঘদিন ধরেই খুঁজছিলেন গোয়েন্দারা। যারা পুলিশের খাতায় নিষিদ্ধ সংগঠনটির ‘ ৩ জনের শীর্ষস্থানীয় হিসেবে চিহ্নিত ছিলো। চলতি বছরের আগস্টে সেই তিনজনের দুইজনকে গ্রেফতারও করা হয়। বাকি ছিলো সক্রিয় গ্রুপটির প্রধান হাসিবুর রহমান ওরফে আযযাম আল গালিব। শেষ পর্যন্ত রোববার রাতে তাকেও গ্রেফতার করতে পেরেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা।
সিটিটিসি কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেফতার ২১ বছর বয়সী হাসিব সংগঠনের অনলাইন দাওয়াহ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। উগ্রবাদীদের রিক্রুটের পাশাপাশি কারাগারে থাকা জঙ্গিদের বের করতে সমমনাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে আসছিলেন তিনি। মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেলে তাদের অর্থের লেনদেন হতো। ‘আইনি লড়াইয়ে’ সেই অর্থ খরচের সঙ্গে কারাবন্দি জঙ্গিদের পরিবারের খরচেরও যোগান দেয়া হতো। এর আগে আনসার আল ইসলামের ত্রিরতœ গ্রুপের দুই জঙ্গি জোবায়দা সিদ্দিকী নাবিলা ও আল আমিন সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করা হয়। কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই তিনজনকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে অনলাইনে সংগঠনটির উগ্রবাদী প্রচার-প্রচারণা অন্তত ৮০ শতাংশ কমে যাবে।
সোমবার হাসিবকে গ্রেফতারের তথ্য জানিয়ে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন সিটিটিসি কর্মকর্তারা। সেখানে জঙ্গি দমনে যুক্ত ডিএমপির এই ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কয়েক বছর আগে হাসিব আনসার আল ইসলাম ও আল-কায়েদার মতাদর্শ সমর্থন করে লেখালেখি শুরু করেন। তিনি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, সংবিধান, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিবিরোধী ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার শুরু করেন। বিভিন্ন ব্যক্তিকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের সশস্ত্র জিহাদে উদ্বুদ্ধ করতেন।’
তিনি বলেন, ‘হাসিবের ত্রিরতœ গ্রুপটি সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আনসার আল ইসলামের মতাদর্শের বিভিন্ন বক্তব্য প্রচার করতেন। তিনি নিষিদ্ধ সংগঠনটির অনলাইন দাওয়াহ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।’
হাসিবের অনুপস্থিতিতে সংগঠনটির দাওয়াহ শাখার নেতৃত্ব দেবে কে- এমন প্রশ্নে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘হাসিব জঙ্গিবাদ বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করে নিজেকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ ধরনের বিশেষজ্ঞ আর কারা কারা রয়েছে সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেফতার হাসিব ২০১৯ সালের দিকে আল-কায়েদা ও আনসার আল ইসলামের মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। ‘আযযাম আল গালিব’ নামে ফেসবুক আইডি থেকে উগ্রবাদী লেখা প্রচার করতেন তিনি। ওই নামে তিনি একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলও খোলেন। পাশাপাশি ফেসবুকে ‘মুয়াহিদ মুসলিম’ নামে আরও একটি পেজ ছিলো তার। সেখানে তিনি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে সদস্য সংগ্রহ করতে থাকেন। এই পেজটি থেকে উগ্র মতবাদ ছড়ানোর অভিযোগে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সেটি বন্ধ করে দেয়।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, হাসিব মেধাবী শিক্ষার্থী। ২০১৬ সালে এসএসসি পাস করে ঢাকা অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়। এরপর থেকেই সহিংস উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদের আদর্শে দীক্ষিত হয়। তার বাড়ি পটুয়াখালীর মহিপুর এলাকায়। বাবার নাম হাবিবুর রহমান। বর্তমানে তিনি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এলএলবির শিক্ষার্থী।
আল-কায়েদার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে চলা জঙ্গি গ্রুপটি ২০১৩ সালে আলোচনায় আসে। ওই সময় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা এবিটি নামে তাদের অপতৎপরতা চালাতো। ভিন্ন চিন্তা ও মুক্তচিন্তার মানুষদের নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে এই গ্রুপটি আতঙ্ক ছড়ায়। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক অভিযানের মুখে তাদের কার্যক্রম কোনঠাসা হয়ে পড়ে। সংগঠনটিকে নিষিদ্ধও করা হয়। শেষ পর্যন্ত আনসার আল ইসলাম নামে নতুন করে তৎপরতা শুরু করে। পরে এটিও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়। বর্তমানে এই সংগঠনটি নানা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় রয়েছে। উগ্রবাদ ছড়ানোর পাশাপাশি সংগঠনের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমও চালিয়ে আসছে। মূলত হাসিবসহ ওই তিনজন নিজেদের অনলাইন চ্যানেলগুলোর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।