নিজ নিজ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব : প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলবে কীভাবে, পরিকল্পনা প্রস্তুত
স্টাফ রিপোর্টার : করোনাভাইরাস মহামারীকালে শিশু শিক্ষার্থীদের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা কেন্দ্রে না পাঠিয়ে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী নিয়ে সরকারপ্রধানের কাছে বুধবার চার/পাঁচটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলবে কীভাবে তার পরিকল্পনাও প্রস্তুত করা হয়েছে।
সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষাটা বিদ্যালয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি, আগে এটা কেন্দ্রভিত্তক নেয়া হত। এটা না করে স্ব স্ব বিদ্যালয়ে, যাতে করে জমায়েতটা বেশি না হয়, আমাদের ছেলেমেয়েরা আক্রান্ত না হয়, এ রকম চিন্তাভাবনা আমরা করছি।”
নিজ নিজ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি বিকল্প প্রস্তাবও প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী জাকির। অন্য বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিতে হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীদের। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কেন্দ্রীয়ভাবে এই পরীক্ষা আয়োজন করে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আগামী ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা আছে, তবে এরপরও স্বাভাবিক ক্লাসে ফেরার পরিবেশ হবে কি না, এখনও তার নিশ্চয়তা নেই। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সিলেবাস শেষ করা যায়নি জানিয়ে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এজন্য আমরা বলেছিলাম প্রয়োজনে হলে আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে সিলেবাস শেষ করে তখন পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তাভাবনা আছে।”
প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নেয়া না গেলে মেধার ভিত্তিতে পঞ্চমের সমাপনী উত্তীর্ণদের যে বৃত্তি দেয়া হয়, তা এবার দেয়া হবে না বলে জানান তিনি। তবে আগেই মতো প্রাথমিকের সব শিক্ষার্থীর জন্য উপবৃত্তি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির। চার-পাঁচটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী যেটি অনুমোদন দেন সেভাবে হবে । পাঁচটি প্রস্তাবের মধ্যে এবার প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা না নেয়ার প্রস্তাবও রয়েছে বলে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এর আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আকরাম-আল-হোসেন মঙ্গলবার বলেছিলেন, মুখ্য সচিবের সঙ্গে তিনজন সচিবের (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ) একটি সভা হয়েছে, সেখানে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই সভার প্রেক্ষিতে আমাদের এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে, আমরা সারসংক্ষেপ তৈরি করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও সারসংক্ষেপ তৈরি করছে। আগামী রবি-সোমবারের মধ্যে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। এবার যাতে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী এবং জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নিতে না হয় সেজন্য এই সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে জানিয়ে সচিব আকরাম বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে এবার আর এই পরীক্ষা হবে না। তবে অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে থেকে খোলা যায় তার উপর ভিত্তি করে এইচএসসি পরীক্ষার নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। অপরদিকে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কীভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চলবে, সেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিদ্যালয় খুলে দেওয়া অন্তত ১৫ দিন আগ থেকে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু করা হবে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন জানিয়েছেন। বুধবার রাতে তিনি বলেন, আমরা ‘স্কুল রি-ওপেনিং প্ল্যান’ তৈরি করেছি। স্কুল খোলার ১৫ দিন আগে শিক্ষকদের বলব, লোকজন দিয়ে বিদ্যালয় পরীষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ আছে। বিদ্যালয় খুলে দিলে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মেপে স্কুলে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে জানিয়ে জাকির হোসেন বলেন, যাদের শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকবে তাদের বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না। স্কুলে প্রবেশের আগে অবশ্যই হাত ধুতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে যেতে হবে। বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে একেকটি বেঞ্চে দুইজন করে শিক্ষার্থীকে বসানো হবে।