স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন আইনের খসড়া অনুমোদন : প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও আরপিওতে রাখা হচ্ছে
স্টাফ রিপোর্টার: সমালোচনার মুখে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) থেকে প্রার্থিতা বাতিলে ইসির ক্ষমতা সরিয়ে নেয়া থেকে পিছু হটেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ ও এসব প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের বিদ্যমান নাম বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এসব প্রতিষ্ঠান ও পদবির নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয়েছে। সোমবার নির্বাচন ভবনে দুই দফায় অনুষ্ঠিত কমিশনের মুলতবি সভায় তিনজন কমিশনার নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে অনড় অবস্থান নেয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় বিদ্যমান নাম বহাল রেখে ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন আইন-২০২০’ এর খসড়া অনুমোদন করা হয়। ওই খসড়া মতামতের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে আইন মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিলে ইসির ক্ষমতাসংক্রান্ত ধারা ৯১(ই) আরপিও থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকেও সরে এসেছে ইসি। এ ধারাটি আরপিওতে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব মৌলিক বিধি আরপিও থেকে বাদ দেয়া হয়েছে সেগুলোও অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে ইসি।
স্থানীয় সরকারের নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ও পদবিতে প্রচলিত শব্দগুলোই রাখা হবে। এক্ষেত্রে বর্তমানে ব্যবহৃত নাম ও পদবিতে কোনো পরিবর্তন হবে না। তিনি বলেন, সরকারের অন্যান্য আইনে যেভাবে শব্দগুলো রয়েছে, সেভাবেই খসড়া আইনে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসাটা কমিশনের দুর্বলতার পরিচয় কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি প্রস্তাবনা তার উপরেই আলোচনা হচ্ছে। আইন যতক্ষণ না সংসদে পাস হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি পরিবর্তন, পরিবর্ধন হতে পারে।
ইসির সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আইন-২০২০’ এবং ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন আইন-২০২০’ এর খসড়ায় ইউনিয়ন পরিষদের নাম পরিবর্তন করে ‘পল্লি পরিষদ’, পৌরসভার নাম পরিবর্তন করে ‘নগরসভা’ ও মেয়রের পদবি পরিবর্তন করে ‘পুরাধ্যক্ষ’ রাখার প্রস্তাব করে ইসি। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের নাম ‘মহানগর সভা’ ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের পদবি পরিবর্তন করে ‘মহানগর আধিকারিক’ এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে ‘উপজেলা পরিষদপ্রধান ও উপপ্রধান’ প্রস্তাব করে ইসি। এ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন তীব্র আপত্তি জানায়। এমনকি তিনজন নির্বাচন কমিশনারও বিভিন্ন মিটিংয়ে নাম সংশোধনের বিপক্ষে তাদের মত দেন। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার কমিশন সভায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন আইনের খসড়া থেকে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব থেকে সরে এলো কমিশন। এ সিদ্ধান্তের ফলে আরেক খসড়া আইন ‘রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আইন’ থেকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন হচ্ছে না।
কমিশন সভা সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল ১১টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশনের মুলতবি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় সিইসি ও তিনজন কমিশনার অংশ নেন। অপর নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার আগেই এ আইনের খসড়ার বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট দেয়ায় তিনি এ সভায় অংশ নেননি। আরও জানা গেছে, সভার শুরুতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের বিপক্ষে অবস্থান নেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। কিন্তু সিইসি প্রস্তাবিত নামের পক্ষে অবস্থান নেন। এ নিয়ে বক্তব্য পাল্টা বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নাম পরিবর্তন থেকে সরে আসে কমিশন। কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব বলেন, খসড়া আইনটি শিগগিরই মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এছাড়া রাজনৈতিকগুলোকেও খসড়ার ওপর মতামত দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হবে। আবার স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংগঠনের কাছেও খসড়াটির ওপর মতামত দেয়ার জন্য পাঠানো হবে। তাদের সবার মতামতের ভিত্তিতেই খসড়া চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা আরপিওতে রাখা হচ্ছে : সমালোচনার মুখে প্রার্থিতা বাতিলে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতাসংক্রান্ত বিধান ৯১ই আবারও আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত করে প্রস্তাব পাঠাতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। যদিও ওই ধারাটিসহ মোট ১০টি মৌলিক বিধান বাদ দিয়ে আরপিও আইনে রূপান্তরের প্রস্তাব করেছিল ইসি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, আরপিও থেকে কোনো মৌলিক বিষয়ই বাদ যাচ্ছে না। তিনি বলেন, নিজের ক্ষমতা নিজে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কমিশনের কোনো ক্ষমতাই খর্ব করা নয়, বরং মৌলিক সবই ঠিক থাকবে। আরপিওতে মৌলিক পরিবর্তন হচ্ছে না, শুধু বাংলায় রূপান্তর হচ্ছে। ইসির অবস্থান ব্যাখ্যা করে সচিব বলেন, আরপিও অনেক বড় আইন। এটাকে ছোট করার প্রস্তাব এসেছে। বলা হয়েছে, যেসব বিষয় আইনে রাখার দরকার নেই, সেগুলো বিধিমালায় রাখা হবে। তিনি বলেন, প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা বিধিতে রাখতে গিয়ে হয়তো কমিশন আইন থেকে ভুল করে হোক বা বোঝাপড়ার মাধ্যমে হোক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওই ধারাটি আইনে থাকবে না, বিধিমালা থাকবে। আর আইন মন্ত্রণালয় বলেছে এটা বিধিতে নয়, আইনে রাখতে হবে।