স্ত্রীর কথায় নিঃশ্ব হয়ে হাতি কিনলেন দুলাল!
ভালোবাসার নির্দশন নাকি খোলা হচ্ছে প্রতারণার দোকান?
স্টাফ রিপোর্টার: বোকা? নাকি বড় বাণিজ্যেরই কৌশলী বিনিয়োগ? জমি-জামা গবাদি পশু গাছ-গাছালি বিক্রি করে হাতি কিনে বাড়ি ফেরা দুলালকে দেখে স্থানীয় সচেতনদের মধ্যে এরকমই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আর এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে দুলালের হাতি কেনাকে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন বলেই আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে। তারা বলেছেন, স্ত্রী তুলসী রানী দাসী আবদার করেছিলেন। স্বামী দুলাল চন্দ্র রায় তা পূরণে বিক্রি করেছেন নিজের প্রায় সব সম্পদ। কিনেছেন ১৭ লাখ টাকা দামের হাতি।
ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের দেউতির হাট রতিধর গ্রামে। ৪৫ বছর বয়সী দুলাল চন্দ্র রায় পেশায় কৃষক। দুলাল জানান, তার স্ত্রী তুলসী রানীর দেবযোগ রয়েছে। প্রায় ১০ বছর ধরে তুলসী বিভিন্ন দেব- দেবীর পূজা আর্চনা করেন। দুলালের দাবি, এক রাতে দেবতা পরমেশ্বর স্বপ্নে তার স্ত্রীকে হাতি কিনতে আদেশ করেন। ওই হাতি দিয়ে মানুষের চিকিৎসা ও পূজা আর্চনা করারও আদেশ করেন ওই দৈবশক্তি। তা না হলে তুলসীর অমঙ্গল হবে। দুলাল চন্দ্র এ কথা বললেও সচেতন অনেকেরই অভিমত, হাতি দিয়ে বাণিজ্যেরই দোকান খোলার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। অবশ্য স্থানীয় সাধারণ সরল সোজা মানুষগুলো তেমন মন্তব্য না করলেও বলেছেন, স্ত্রীর মুখে এমন কথা শুনে হাতি কেনার জন্য নিজের ৭২শতাংশ জমি, ২টি গরু ও বাড়ির গাছ-গাছালি বিক্রি করে দেন দুলাল। ২ বিঘা জমিও বন্ধক রাখেন টাকা জোগাড়ের জন্য। পরে গত ১৪ সেপ্টেম্বর মৌলভিবাজারের আব্দুল করিম নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকা মূল্যে বিশাল এক হাতি কিনে আনেন। হাতির দেখাশোনার সঙ্গে ১৫ হাজার টাকা বেতনের মাহুতও নিয়ে আসেন। হাতির খাওয়া বাবদ প্রতি মাসে ওই কৃষকের খরচ পড়বে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তবে এ নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন দুলাল চন্দ্র রায়। এর আগে একই ধরনের দৈব নির্দেশে ১ বিঘা আবাদি জমি বিক্রি করে একটি ঘোড়া কিনেছিলেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে গায়েবি নির্দেশে খরগোশ, রাজহাঁস, ও রাম ছাগল কিনেছেন দুলাল চন্দ্র রায়। তিনি জানান, দৈব আদেশ পালন ও স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা পালনে এমন করেছেন । তুলসী রানী দাসীর ভাষ্য, দেবতা পরমেশ্বর বিভিন্ন সময়ে তাকে আদেশ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বামীকে তিনি এটা-সেটা কেনার কথা বলেন। সর্বশেষ দেবতা হাতি কেনার নির্দেশ দেওয়ায় তারা জমি-জমা, গরু বিক্রি করে পরমেশ্বরের আদেশ পালন করেছেন। ওই দম্পতির প্রতিবেশীদের অনেকেই মুখের হাসি চেপে বলেছেন, আগে সার্কাসে হাতি দেখেছেন। এখন বাড়ির পাশে হাতি এনেছেন দুলাল চন্দ্র রায়। বিষয়টি তারা উপভোগ করছেন। দুলাল দম্পতির সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাদের বড় ছেলে দশম শ্রেনীর ছাত্র তন্ময় কুমার জানায়, স্বৃষ্টিকর্তার নির্দেশে বাবা হাতি কিনেছেন। হাতি দেখতে বাড়িতে প্রতিদিন লোক ভিড় করে। পঞ্চগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার কারণেই দুলাল হাতি কিনেছেন। স্ত্রীর কথামতো এর আগেও তিনি বিভিন্ন পশু পাখি কিনেছেন। তবে স্থানীয় সচেতন যুবসমাজের কয়েকজন বলেছেন, হাতি দিয়ে চিকিৎসার নামে প্রতারণারই দোকান খোলা হবে এখন। অবশ্য বিজ্ঞান যুগে হাতি দিয়ে চিকিৎসার নামে অর্থ বাণিজ্য শেষ পর্যন্ত ক’দিন টেকে তাই এখন দেখার বিষয়। লালমনিরহাট বনবিভাগের ফরেস্টার নূরুন্নবী বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে বন্যপ্রাণী বাড়িতে রাখতে হলে সরকারি অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।