সিনহার মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দাবি
স্টাফ রিপোর্টার: অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনা নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় নানা ‘অপপ্রচার’ চালিয়ে সেনা-পুলিশ মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে দাবি করেছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত এ সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনাটিকে অনাকাক্সিক্ষত উল্লেখ করে পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠনটি বলেছে, অপকর্মের জন্য দায়ী ব্যক্তির শাস্তি হবে, ব্যক্তির কোনো অপকর্মের দায় পুলিশ নেবে না। গত ৩১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা, যা ব্যাপক আলোড়ন তোলে। সিনহা গুলি করতে উদ্যত হলে পাল্টা গুলি চালানো হয় বলে প্রথমে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সাবেক সেনা কর্মকর্তারা সরাসরি পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়ী করেন। এ প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে সিনহার বোন নয়জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যামামলা করলে আদালতের নির্দেশে র্যাব তার তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে আসামি পুলিশ সদস্যদের রিমান্ডে নেন। এদিকে এ পরিস্থিতিতে গত ৫ অগাস্ট কক্সবাজারে যান সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ। সেখানে দায়িত্বরত নিজ নিজ বাহিনীর কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি একসঙ্গে বিরল এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন সেনাপ্রধান ও পুলিশপ্রধান। সিনহা নিহতের ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার কথা জানিয়ে তারা বলেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উসকানি দিয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে সম্পর্কে যেনো কেউ চিড় ধরাতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তারা বলেন, সিনহা নিহতের ঘটনায় দায়ী হিসেবে যে বা যারা চিহ্নিত হবে, তারাই শাস্তি পাবে। এর দায় বাহিনীর ওপর পড়বে না। তবে তারপরও সোশাল মিডিয়ায় নানা উসকানি দেখার কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বিবৃতি পাঠান। এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গভীর বিস্ময় ও উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, এ ঘটনাকে উপজীব্য করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ফেইসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কিছু কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে ব্যবহার করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নানামুখী অপপ্রচার চালিয়ে চলমান আইনি কার্যক্রমকে প্রভাবিত ও বাধাগ্রস্ত করার জন্য তৎপর রয়েছে। ‘উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটি পেশাদার বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর এ অপচেষ্টা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত।” বিবৃতিতে বলা হয়, সিনহার মৃত্যুতে পুলিশ বাহিনী ‘অত্যন্ত দুঃখিত ও মর্মাহত’। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইনি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মামলা হয়েছে এবং তা তদন্তাধীন রয়েছে। “এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ও বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, কোনো ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলে, তার জন্য ব্যক্তিই দায়ী থাকবেন; প্রতিষ্ঠান দায় নেবে না। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন উক্ত যৌথ প্রেস ব্রিফিং এর বক্তব্যকে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে সাধুবাদ জানাচ্ছে।” বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ পুলিশ এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। “অ্যাসোসিয়েশন বিশ্বাস করে যে, অতীতের ন্যায় বাংলাদেশ পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যকার বিদ্যমান আস্থা, বিশ্বাস এবং আন্তরিক ও শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকবে এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ভবিষ্যতে তা আরও দৃঢ় ও সংহত হবে।” পুলিশ কর্মকর্তাদের এই সংগঠনটি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছে, “ব্যক্তির কোনো অপকর্মের দায় বাংলাদেশ পুলিশ বহন করে না। বাংলাদেশ পুলিশ অপরাধীকে কঠোর শাস্তি প্রদানে সবসময় সর্বাত্মক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।”