স্টাফ রিপোর্টার: এবার একজন ‘সার্বক্ষণিক’ সাধারণ সম্পাদক বেছে নিতে পারে আওয়ামী লীগ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন চিন্তা দলটির হাইকমান্ডের। টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় যেতে আওয়ামী লীগ নিবেদিতপ্রাণ একজন নেতার প্রয়োজন অনুভব করছে এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে। যিনি শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, বর্তমানে কোনো সরকারি পদে নেই এবং দলের জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করতে পারবেন। আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায় সূত্র সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছে।
আগামী বছর ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, প্রতিপক্ষ বিএনপির অংশগ্রহণে এই নির্বাচন হতে পারে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। তাই আওয়ামী লীগের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হবে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ রাখা। ঘর সামলাতে দলের বঞ্চিত নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে হবে। মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনপ্রীতি ও নানা কর্মকা-ে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের অনেকেই বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। তারা অভিমান করে দূরে সরে আছেন। আবার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ হয়ে পড়েছে বিভক্ত। অনুপ্রবেশকারীদের দাপটে অতিষ্ঠ দলের পুরোনো ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ ইস্যুগুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সেজন্যই আওয়ামী লীগের দরকার একজন সার্বক্ষণিক সাধারণ সম্পাদক। যিনি নিরলসভাবে কাজ করে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারবেন। এ বছর ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলমতনির্বিশেষে সবার কৌতূহল-কে হচ্ছেন পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক। দলের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য শুক্রবার সিঙ্গাপুর গেছেন। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে শিগগিরই তিনি ঢাকায় ফিরবেন। এর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি রুটিন চেকআপের জন্য ভারতের দিল্লি যান ওবায়দুল কাদের। দিল্লির মেজেন্টা হাসপাতালে তার শারীরিক চেকআপ করা হয়।
এ অবস্থায় সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের আর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। টানা তৃতীয় মেয়াদে আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকার নজিরও দলটিতে খুব কম। এছাড়া ছোট ভাই আব্দুল কাদের মির্জার একের পর এক অভিযোগে অনেকটা বিব্রত ওবায়দুল কাদের। সাধারণ সম্পাদকের এলাকায় রাজনৈতিক সহিংসতা ক্ষমতাসীন দলকে অনেকটা প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নেতা নির্বাচনের দায়িত্ব কাউন্সিলরদের। কিন্তু তারা কখনই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনে ভূমিকা রাখেন না। সব জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলররা এ দায়িত্ব তুলে দেন সভাপতি শেখ হাসিনার কাঁধে। পঁচাত্তরে নৃশংস হত্যাকা-ের পর এক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। এরপর সারা দেশের নেতাকর্মীদের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি। তাই শুরু থেকে সব কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে আসছেন নেতাকর্মীরা।
সূত্র জানিয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্পষ্ট ছাপ থাকবে আওয়ামী লীগের এবারের জাতীয় সম্মেলনে। দলের ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, সম্মেলন আয়োজন এবং নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চিন্তা থেকে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় পেতে তেমন একজনকেই বেছে নেওয়া হতে পারে, যিনি হবেন আওয়ামী লীগের সার্বক্ষণিক সাধারণ সম্পাদক। অর্থাৎ সরকারি কোনো পদে থাকবেন না। দল ও সরকারকে আলাদা করতে এমন চেষ্টা অনেক আগে থেকেই করে আসছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আব্দুর রহমান ও ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নাম আলোচনায় রয়েছে। নেতাকর্মীরা বিভিন্ন আড্ডা ও আলোচনায় তাদের পছন্দের নেতার নাম উল্লেখ করে তার গুরুত্ব তুলে ধরছেন। তবে তারা সবাই একমত-আগামী জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসবেন, তা পুরোপুরিভাবে নির্ভর করছে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিবেচনার ওপর। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগে একমাত্র অপরিহার্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এজন্য কে সাধারণ সম্পাদক হবেন বা হবেন না, এর চেয়ে প্রধান বিবেচ্য বিষয় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে কে কত বেশি তার কাজে সহযোগিতা করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘তাই আমি মনে করি, তেমনই একজন যোগ্য, দক্ষ ও দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি তার (শেখ হাসিনার) পাশে থেকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সার্বক্ষণিক সব কাজ করবেন।’
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এ বছর অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ সারা দেশে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির হাইকমান্ডের। এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা করা হচ্ছে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় নাগাদ সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের জাতীয় সম্মেলন শেষ করার।
২০১৯ সালে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেভাবে একই মঞ্চে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, এবারও সেভাবেই তাদের সম্মেলন হবে। এরপর অনুষ্ঠিত হবে মূল দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। দলটির সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর।