সাদা পোশাকে ডিবি কাউকে গ্রেফতার করবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, নির্ধারিত পোশাক ছাড়া ডিবি এখন থেকে সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেফতার করবে না। গ্রেফতারের আগে অবশ্যই ডিবিকে জ্যাকেট পরিধান ও আইডি কার্ড শো করতে হবে। সোমবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয় পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ডিবি কম্পাউন্ডে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, কে-৯ টিমসহ অন্যান্য টিমের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে আইজিপি বাহারুল আলম, ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) মো. মাসুদ করিমসহ ডিবি ও সিটিটিসির বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ সন্তোষজনক। তবে আরও উন্নতি কীভাবে করা যায়, সেটাই এখন মূল লক্ষ্য। ঢাকায় ছিনতাই বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ছিনতাই বেড়েছে, সেটা অস্বীকার করব না। কিন্তু ধরা হচ্ছে প্রচুর। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আইনের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করা যাবে না। বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সতর্কতার সাথে ও ধৈর্য ধরে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি বলেন, বাহিনীর দুই-একজনের অপকর্মের জন্য পুরো বাহিনীর সবাইকে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। তাই নিজেদের ইমেজ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত থাকতে হবে। পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্য শৃঙ্খলাবিরোধী কোনো কাজে জড়িত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। লিবিয়াতে আটকা পড়াদের ফিরিয়ে আনা হবে : লিবিয়াতে প্রায় এক হাজারের বেশি মানুষ বন্দি আছেন। সেখানে তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। বন্দিদের ফিরিয়ে আনতে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভুক্তভোগীরা যদি আমাদের কাছে আসে তাহলে অবশ্যই আমরা অ্যাকশন নেব, যারা এসব করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কোনো ভুক্তভোগী যদি থাকে তাহলে তাদের আমাদের কাছে পাঠান। ভুক্তভোগীদের পরিবার থানায় গেলেও মামলা নিচ্ছে না। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। তবে মামলা নিতে অনুমতির প্রয়োজন নেই। টেকনাফ বর্ডার মিয়ানমারের অংশ আরাকান আর্মির দখলে : আমাদের টেকনাফ বর্ডারে মিয়ানমারের অংশ আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে। সেখানে মিয়ানমার সরকারের কোনো আইনশৃঙ্খলা কোনো কিছুই নেই। এখন আমাদের মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে। আমাদের বর্ডার কিন্তু পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আমি যেদিন গিয়েছিলাম সেদিনও ১৮ জন অপহৃত হয়েছিল। পরে সবাই উদ্ধার হয়েছে। সারদা থেকে এসআইদের শৃঙ্খলাজনিত কারণে বের করা হয়েছে : ৩২১ এসআই সচিবালয়ে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের ব্যাপারে উদ্যোগ বা ব্যবস্থা কী হচ্ছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ একাডেমি থেকে শৃঙ্খলাজনিত কারণে যদি কেউ আউট হয় তাদের আর নেওয়া হয় না। এটা শুধু আমাদের পুলিশ একাডেমি বলে নয়। পুলিশ একাডেমি যদি সঠিকভাবে তাদের আউট না করত তাহলে সেটা লিখিতভাবে আইজিপিকে জানাত। এটাই তো প্রমাণ করে তারা উচ্ছৃঙ্খল ছিল। এ বছরই সব মিশনে ই-পাসপোর্ট : এদিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর (ডিআইপি) পরিদর্শন শেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোপুরি ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) চালু করা হবে। বিদেশে অবস্থিত সব বাংলাদেশ মিশন থেকে ই-পাসপোর্ট দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশিরা ভিসা না নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
সরকার সব পাসপোর্ট ইলেকট্রনিক পাসপোর্টে রূপান্তর করার চেষ্টা করছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, চলতি বছরই ই-পাসপোর্টের কাজ সম্পন্ন করা হবে। আমার দায়িত্বকালেই এ কাজ শেষ করে যেতে চাই। সেবার মান বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, পাসপোর্ট পেতে এখনো বেশি সময় লাগে। কাজ দ্রুত করার কথা বলেছি। তবে রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করার সুযোগ না পান সেটা নিয়েও সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
এ সময় পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাদ দেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবার সঙ্গে আলাপের মাধ্যমে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তুলে দিলে কী লাভ হবে, কী সমস্যায় পড়ব, সব কিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ভিসাবিহীনভাবে বিদেশি নাগরিক যারা এখনো বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তারা ভিসা সংগ্রহ করবেন। তা না হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে বৈধ ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিটবিহীন অবৈধ কর্মী রাখলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকেও জবাবদিহি করতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More