স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার মানুষের মর্যাদা, মানবতা ও নাগরিক স্বাধীনতাকে পদদলিত করছে শুধু একদলীয় কর্তৃত্ব চিরস্থায়ী করার জন্যই। তবে দুঃশাসনের অবসানের আলামত ইতোমধ্যেই ফুটে উঠতে শুরু করেছে। এই সরকার আর বেশিদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। জনগণের বিজয় হবেই। মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এবং বর্তমান সরকারের সব অপকর্ম ও দুঃশাসন রুখে দিতে জনগণ সাহসিকতার সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। বিবৃতিতে গত শুক্রবার ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম বেগ ও সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনসহ দলীয় নেতাকর্মীদের নামে পুলিশের ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ মামলা দায়েরের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা জোরজবরদখলকারী আওয়ামী সরকার দীর্ঘকাল দেশে স্বৈরাচারী শাসন কায়েম রাখতে চাইছে। এজন্য বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের মাধ্যমে গ্রেফতার করে কারান্তরীণ করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিরামহীন গতিতে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও কাল্পনিক কাহিনি তৈরি করে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে জনগণের ওপর শোষণ-নির্যাতন অব্যাহত রাখা। ময়মনসিংহ দক্ষিণে দলীয় নেতাকর্মীদের নামে পুলিশের মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়েরের ঘটনা বর্তমান অবৈধ সরকারের চলমান দমন-নিপীড়নেরই অংশ। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। এছাড়া পৃথক বিবৃতিতে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এ ঘটনার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, সরকারের পায়ের নিচের শেষ মাটিটুকুও এখন সরে গেছে। তাই হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম চালাতে উন্মাদ হয়ে গেছে।
‘গুম’ হওয়া নেতাকর্মীদের স্মরণে ঢাকা ও জেলা শহরে সভার সিদ্ধান্ত : এদিকে ইলিয়াস আলীসহ সব গুম হয়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের স্মরণে ঢাকা ও সংশ্লিষ্ট জেলা শহরে আলোচনা সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব দেয়া হয়। সোমবার দুপুরে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে স্থায়ী কমিটি। একই সঙ্গে সভায় অবিলম্বে এলপিজি গ্যাসের বর্ধিত মূল্য বাতিল করে সহনীয় পর্যায়ে মূল্য নির্ধারণের দাবি জানানো হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল সভায় আরও অংশ নেন-ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান. মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে মঙ্গলবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি মহাসচিব জানান, সভায় পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য লাগামহীন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের চরম ব্যর্থতায় তীব্র সমালোচনা করা হয়। সভা মনে করে, সরকারের প্রশ্রয়ে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কারসাজি, সড়ক-মহাসড়ককে পুলিশ ও সরকারি দলের চাঁদাবাজির কারণে দ্রব্যমূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেল, গ্যাসের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি করার ফলে পরিবহণ ব্যয় বাড়ার কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। জনগণের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। সরকার নিজস্ব ব্যবসায়ীদের লোভ ও দুর্নীতির কারণে চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, শাকসবজি, মাছ ও মাংসের ক্রমান্বয়ে মূল্যবৃদ্ধি ও গ্যাস, জ্বালানি তেল ও পানির মূল্য বৃদ্ধির ফলে কৃষক, শ্রমিক, নিম্নআয়ের চাকরিজীবী, ছোট ব্যবসায়ীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
তিনি জানান, সভায় সম্প্রতি বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের পানি না পাওয়ায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিম ঘুট গ্রামের দুই সাঁওতাল সম্প্রদায়ের দুই কৃষকের আত্মহত্যায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ইতঃপূর্বেও কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনায় প্রতীয়মান হয় যে, সরকার কৃষকদের কৃষি কাজের জন্য উপকরণ- সেচ, সার, বীজ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কারণে। এসব ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে তরলিকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম এক মাসের মধ্যে দুই কিস্তিতে ১৯৯ টাকা বাড়ানোর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। সভা মনে করে সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা পর্যায়ের ব্যক্তিদের ব্যবসায়িক সুবিধা ও মুনাফার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্যই অযৌক্তিকভাবে মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সভায় অবিলম্বে এলপিজি গ্যাসের বর্ধিত মূল্য বাতিল করে সহনীয় পর্যায়ে মূল্য নির্ধারণের দাবি জানানো হয়।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ