প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই বিতরণ উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, নতুনভাবে যাতে আবার সংক্রমিত না হয় তার ব্যবস্থা এখন থেকেই আমাদের নিতে হবে। কাজেই কেউ যেন টিকার বাইরে না থাকে, সবাইকে কিন্তু এই ভ্যাকসিন নিতে হবে। কেউই টিকা দেয়ার কাভারেজের বাইরে না থাকে। আর অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে শিক্ষার্থীদের ‘যা কিছু প্রয়োজন’ তার ব্যবস্থা করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই বিতরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের অনলাইন শিক্ষাটা, এটা চালু রাখতেই হবে। কারণ করোনা কখনও বাড়ছে, কখনও কমছে। আমরা সব সময় যেটা লক্ষ্য করছি, শীতের পরপর এর প্রাদুর্ভাবটা আবার বেড়ে যায়। তাই সবাইকে কোভিড-১৯ টিকা নিতে হবে। তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে টিকাদান অভিযান সহজলভ্য করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষার্থীদের কেবল ‘বকাঝকা’ না দিয়ে মানসিক অবস্থা বুঝে তাদের সামলানোর পাশাপাশি ‘এক গাদা’ পাঠ্যপুস্তকে আটকে না থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে দেশের শিক্ষক এবং অভিভাবকদের অনেকেই সচেতন নন। এ বিষয়ে দুই লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত শিক্ষার্থীদের একটা পরীক্ষা নেয়া দরকার মানসিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে, যে কার ভেতরে কী ধরনের সমস্যাটা আছে। শুধু ধমক দেয়া না বা তাদের বকাঝকা না, তাদের অবস্থাটা বুঝে তাদের সঙ্গে সেইভাবেই আচরণ করতে হবে। এটা বাবা, মা, শিক্ষক বা বন্ধু-বান্ধব সবাইকেই বিষয়টায় সচেতন হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী একই অনুষ্ঠানে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এবার করোনার কারণে ১ জানুয়ারি সারাদেশে পাঠ্যপুস্তক উৎসব না হলেও সেদিন থেকেই দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ শুরু হবে এবং ভিড় এড়াতে একেক দিন একেক শ্রেণীর বই প্রদান করা হবে। এবারে ৪ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি বই বিনামূল্যে প্রদান করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে ২০২১ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন। এর আগে মাদরাসা ও কারিগরিসহ ১১টি বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির হাতে ফলাফল তুলে দেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় কৃষকের ছেলে বড় কর্মকর্তা হয়ে যাবার পর বাবার পরিচয় দিতে লজ্জা পায়। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং খুব লজ্জার ব্যাপার। বরং সেই বাবাকে আরও বেশি সম্মান দেয়া উচিত যে বাবা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানকে শিক্ষা দিয়ে বড় করেছে। তাকেই সব থেকে সম্মান দেয়া উচিত, বরং তার সঙ্গে মাঠে নেমে কাজ করা উচিত।
কৃষকের সেই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আরও বেশি ফসল ফলানোর চেষ্টা করা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাহলে সেটা প্রকৃত শিক্ষা হবে। নিজে দুই পাতা পড়ে একটা ফুল প্যান্ট পড়ার পর আর মাঠে নামতে পারব না, এই মানসিক দৈন্যতাটা বাংলাদেশের মানুষের মাঝে থাকুক, সেটা আমরা চাই না। সেটা আমরা দেখতে চাই না। এটা একটা মানসিক দৈন্য, এটা মানসিক দারিদ্র্য। এটা যেন না থাকে। সমস্ত কাজকেই সম্মান দিতে হবে।