ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানোর চিন্তা নির্বাচন কমিশনের
দেশের শিক্ষাবিদ বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে মতামত
স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে সিসিটিভি স্থাপনের চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়া আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অভিজ্ঞ বিশিষ্টজনদের সঙ্গে পর্যালোচনা করে ওই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিধি ও বিস্তৃতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। রোববার নির্বাচন কমিশন এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এ সময় ইসি আরও ছয়টি (মোট আটটি) মতামত জানিয়েছে। ১৩ মার্চ থেকে ১৮ এপ্রিল চার দফায় দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এসব মত জানালো প্রতিষ্ঠানটি।
মতামতে ইসি উল্লেখ করেছে, নির্বাচন কমিশন স্টেকহোল্ডারদের মতামত ও পরামর্শ গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে দেখেছে। এ পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রাখা হবে। সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী কমিশন যথাযথ করণীয় নির্ধারণ করে ব্যবস্থা নেবে।
ইসির আটটি মতামতের প্রথমটিতে বলা হয়-অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন-আকাক্সক্ষা ও গুরুত্ব নির্বাচন কমিশন সর্বদা অনুধাবন করে থাকে। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে কমিশন সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাবে। সব রাজনৈতিক দল বিশেষত প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলকে অচিরেই সংলাপে আহ্বান করা হবে।
দ্বিতীয়ত, ভোটকেন্দ্রে এবং ভোটাধিকার প্রয়োগে অর্থশক্তি ও পেশিশক্তির প্রভাব প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার, বিশেষত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সহায়তা প্রয়োজন হবে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদেরও এ লক্ষ্যে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অতন্দ্র ভূমিকা পালন করতে হবে। তৃতীয়ত, নির্বাচনে অর্থশক্তি ও পেশিশক্তির প্রভাব প্রতিরোধ করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের সজাগ দৃষ্টি রেখে প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা, মতৈক্য ও সমঝোতা-এসব সমস্যা নিরসনে প্রভূত ভূমিকা রাখতে পারে।
চতুর্থ, নির্বাচনে কারচুপির সুযোগ প্রতিরোধ করে অবাধ ও নিরপেক্ষ ফলাফল নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন সম্ভব সব ব্যবস্থা নেবে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের এ বিষয়ে সজাগ থেকে নজরদারিসহ সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। পঞ্চম, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপ্রতুলতা হলে নির্বাচন একাধিক দিনে কয়েকটি ভাগে সম্পন্ন করা যেতে পারে মর্মে প্রস্তাব বিষয়ে কমিশন সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বিষয়টির সম্ভাব্যতা, উপযোগিতা, সুবিধা-অসুবিধা প্রভৃতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
ষষ্ঠ, ভোটের সময় ভোটকেন্দ্রে ভোট কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য অনুমোদিত সাংবাদিক এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করতে কমিশন আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবে। সপ্তম, স্বচ্ছতার জন্য ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা প্রতিস্থাপন করে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরভাগের দৃশ্য বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করার বিষয়টি কমিশন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে। অষ্টম, ইভিএম-এর শুদ্ধতা ও অপপ্রয়োগ রোধ নিশ্চিত করতে কমিশন ইতোমধ্যে কয়েকটি সভা করেছে। পরীক্ষা ও পর্যালোচনা অব্যাহত রয়েছে। অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার নিমিত্ত আগামী দিনে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশিষ্টজনদের অংশগ্রহণে আরও পর্যালোচনাসভার আয়োজন করা হবে। অতঃপর কমিশন আগামী জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে ইভিএম-এর ব্যবহার বা ব্যবহারের পরিধি ও বিস্তৃতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত চারটি সংলাপের সুপারিশের সারসংক্ষেপও নির্ধারণ করেছে ইসি। ওই সারসংক্ষেপে রয়েছে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। অর্থাৎ নির্বাচনে সব দল, বিশেষত প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন অবাধ হতে হবে।
ভোটারদের স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগে সম্ভাব্য সব প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুকূল পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। নির্বাচনে সম্ভাব্য সব কারচুপির সুযোগ প্রতিরোধ করে শুদ্ধ ও নিরপেক্ষ ফলাফল নিশ্চিত করতে হবে।আরও রয়েছে-ভোটকেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগে অর্থশক্তি ও পেশিশক্তির ব্যবহার ও প্রভাব প্রতিরোধ করতে হবে। রিটার্নিং অফিসার হিসাবে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে বা তাদের পাশাপাশি যদ্দূর সম্ভব কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা বা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া সমীচীন হবে। ভোটের সময় ভোটকেন্দ্রে অনুমোদিত সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার দিতে হবে। ভোটগ্রহণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অবাধ সুযোগ দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠে দেশবাসীর কাছে আস্থাভাজন হতে হবে। নির্বাচন যে অবাধ, নিরপেক্ষ ও কারচুপিমুক্ত হচ্ছে, তা দৃশ্যমান হতে হবে।