সংসদের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলছে : ড. ইউনূস

স্টাফ রিপোর্টার: বছর-দেড়েকের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা আগেই অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানালেন, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলা বিয়ার সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধান উপদেষ্টা এই কথা বলেন। অধ্যাপক ইউনূস পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত বলেন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারও একই সাথে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদেরও বরখাস্ত করে। এতে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলাসহ প্রায় সব স্থানীয় সরকারই প্রতিনিধিশূন্য রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের ঢামাডোলের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিএনপি চায় না বলে ইতোমধ্যে দলীয় অবস্থানের কথা জানানো হয়েছে। গত সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাতে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা এমন অভিমত দেন। লন্ডন থেকে বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে প্রতিনিধি না থাকায় স্থানীয় সরকারের সেবা বিঘিœত হওয়ায় সরকারের প্রতিও মানুষের ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো আগে অনুষ্ঠানের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই দেশের ১২টি সিটি করপোরেশেনর মেয়র-কাউন্সিলর, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানদের অব্যাহতি দেয়া হয়। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র শাহাদাত হোসেন মামলা করে এই পদ পান। কিন্তু সেখানে ওয়ার্ডগুলো কাউন্সিলরশূন্য। এছাড়া দেশের ৩৩১টি পৌরসভা, ১১টি সিটি করপোরশেন, ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ ও সবগুলো জেলা পরিষদই জনপ্রতিনিধিশূন্য। সরকারের কর্মকর্তা দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের সেবা কার্যক্রম চলছে। এছাড়া চার হাজার ৫৭৮টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে অনেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বার কর্মস্থলে অনুপস্থিত বা পলাতক। অনেকে উপস্থিত থাকলেও নিষ্ক্রিয়। কারণ তাদের বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বা অনুসারী। এসব কারণে নাগরিক সেবা বিঘিœত হচ্ছে। ‘ইআইবি অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের এজেন্ডা সমর্থন করেছে’। এদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা একটি খুব চ্যালেঞ্জিং সময়ে এসেছি; আমরা অন্তর্বর্তী সরকার এবং এর সংস্কারের এজেন্ডা সমর্থন করি। নিকোলা বিয়ার বলেন, ইইউ-র সমর্থন প্রদানের জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা আছে। আমরা যা করতে পারি, দয়া করে জিজ্ঞাসা করুন। এটা দৃশ্যমান করা জরুরি যে, বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকার শুধু কাজ করছে না, সরবরাহও করছে। বর্তমান সময়কালকে একটি উপযুক্ত সময় বলে অধ্যাপক ইউনূস দুর্নীতি মোকাবেলা, শক্তিতে সবুজ রূপান্তর এবং সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বন এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ও নদী ব্যবস্থার জন্য একটি বৃহত্তর পরিকল্পনা তৈরি করতে ইআইবির সাহায্য চেয়েছিলেন। তিনি পূর্ব বাংলাদেশের উন্নয়ন ও উত্তর বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে সুবিধা নির্মাণে ইআইবি সহায়তা কামনা করেন। তিনি বলেন, এই অঞ্চলের বৃহত্তম বন্দরে পূর্ব বাংলাদেশের উন্নয়ন পূর্ব ভারত ও মিয়ানমারকেও উপকৃত করবে। তিনি গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে ইউএনজিএ-র পাশে ইইউ প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েনের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা স্মরণ করেন, যখন তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্ভাব্য সমর্থনের জায়গা এবং জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে বাংলাদেশের বর্ধিত পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকি, বিডিএ চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ চৌধুরী, এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ, ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকি, ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More