স্টাফ রিপোর্টার: থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে সারাদেশে শুরু হচ্ছে মাদক বিরোধী সম্মিলিত বিশেষ অভিযান। ঢাকার প্রবেশ পথে বসছে বিশেষ চেকপোস্ট। এসব চেকপোস্টে বাড়তি সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। যানবাহনের গতি বিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে গভীরভাবে। একই সঙ্গে মাদকবিরোধী নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, মাদকবিরোধী নিয়মিত অভিযানে গত ২৪ ডিসেম্বর রাতের্ যাব-১০ ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও যাত্রাবাড়ীতে অভিযান চালায়। অভিযানে জব্দ হয় প্রায় ৫ হাজার পিস ইয়াবা, প্রায় ২শ’ বোতল ফেনসিডিল, ২০ কেজি গাঁজা ও বিদেশি মদ। মাদক কারবারে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেপ্তার হয় আল আমিন বেপারী (২৫), সায়াদ হাসান শুভ (২৪), মোছা. রত্না আক্তার (২৭), মোছা. সুলতানা আক্তার (২৮), ফরিদ আহম্মেদ ওরফে ফরিদ শেখ (২৫) ও ইছহাক (৬০) নামের ছয় মাদক ব্যবসায়ী। গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ের্ যাব বলছে, কক্সবাজার থেকে ইয়াবাগুলো আসছে। একই সঙ্গে সম্প্রতি সীমান্ত এলাকার কয়েকটি জেলা থেকে ফেনসিডিল আসা শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটও আনছে চোরাকারবারিরা। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন যায়যায়দিনকে বলেন, নানা কারণে এবারের থার্টি ফাস্ট নাইটের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য ইস্যুকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে মাদক ও গুজবকে প্রাধান্য দিয়ে র্যাব কাজ করছে। বছরের শেষে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে গুজবকে কাজে লাগাতে পারে কুচক্রী মহল। এছাড়া থার্টি ফাস্ট নাইটে মাদকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে র্যাবের তরফ থেকে বিশেষ অভিযান শুরু হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাদকবিরোধী নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে শনিবার ভোর থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জব্দ হয়েছে প্রায় ২ হাজার পিস ইয়াবা, হেরোইন, ২৭৬ বোতল ফেনসিডিল, দেশি মদ ও প্রায় ২৬ কেজি গাঁজা। এ সংক্রান্ত ঘটনায় মাদক আইনে ৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, থার্টি ফাস্ট নাইটকে ঘিরে যেমন কড়া নিরাপত্তা থাকবে, তেমনি মাদকের ব্যবহার ঠেকাতেও থাকবে নানামুখী পদক্ষেপ। যার মধ্যে রয়েছে ঢাকার ভেতরে চেকপোস্ট পরিচালনা করা। ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে বিশেষ চেকপোস্ট বসানো হবে। এসব চেকপোস্টে যানবাহন স্ক্যানার বসানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে। যাতে কোনোভাবেই ঢাকার ভেতরে মাদক প্রবেশ করতে না পারে। গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রোর উত্তর বিভাগের পরিদর্শক তমিজ উদ্দিন মৃধার নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের সায়েদাবাদ টোল পস্নাজা এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে ৩৪ কেজি গাঁজা ও মাদক পরিবহণে ব্যবহৃত ১টি কাভার্ডভ্যানসহ দুইজন গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তাররা হচ্ছে, মঞ্জুর আলম (৩০) ও তরিকুল ইসলাম রাজন (২৯)। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উত্তর কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান জানান, কাভার্ড ভ্যানে করে বিভিন্ন কোম্পানির কোমল পানীয় পরিবহণ করা হতো। কোমল পানীয়র আড়ালে মাদক আনা হচ্ছিল। হবিগঞ্জ ও সিলেট থেকে জব্দকৃত গাঁজার বড় চালানটি আনছিল। এগুলো ঢাকা, গাজীপুর ও সাভারে ডিলারদের কাছে পাঠানো কথা ছিল। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক শেখ মুহাম্মদ খালেদুল করিম যায়যায়দিনকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। সেই নীতি অনুসারে দেশকে মাদকমুক্ত করতে কাজ চলছে। একই সঙ্গে মাদকবিরোধী পৃথক ও সম্মিলিত অভিযানও পরিচালিত হচ্ছে। থার্টি ফাস্ট নাইটকে সামনে রেখে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হচ্ছে। আগ থেকেই যাতে মাদক ঢাকায় এনে মজুত করতে না পারে, এজন্য মাদকের উৎসস্থলে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, থার্টি ফাস্ট নাইটকে সামনে রেখে মহাসড়কে নিয়মিত চেকপোস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। যানবাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে বাড়তি সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। যাতে যানবাহনের গতি বিধি পর্যবেক্ষণ করে চালক মাদকাসক্ত বা যানবাহনে অবৈধ কোনো মালামাল আছে কি না, সে সম্পর্কে অনুমান করা যায়। যানবাহনে অবৈধ মালামাল পরিবহণ শনাক্ত করতে ভেহিক্যাল স্ক্যানার বসানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে। যাতে কোনো যানবাহনে মাদক আছে কিনা তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরেই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। এসব বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের মুখপাত্র অ্যাডিশনাল ডিআইজি শামসুল আলম বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুযায়ী কাজ চলছে। রাস্তায় রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে নিয়মিত তল্লাশি করা হচ্ছে। চালক মাদক সেবন করে গাড়ি চালাচ্ছেন কিনা তা নিশ্চিত হতে অ্যালকোহল ডিটেক্টর দিয়ে চালকদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। যানবাহনে মাদক আসছে কি না সে বিষয়ে নিয়মিতভাবে তলস্নাশি অব্যাহত আছে। বিশেষ বিশেষ স্থানে বাড়তি সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। যাতে মাদক সম্পর্কে আগাম তথ্য পাওয়া যায়।