নিয়ম মেনেই চুয়াডাঙ্গার মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি হয়েছে বলে দাবি দুই মন্ত্রীর
স্টাফ রিপোর্টার: আপিল বিভাগের শুনানি নিষ্পত্তি হওয়ায় আগেই কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে-তা হত্যাকাণ্ড বলে গণ্য হবে। এমনটাই বলছেন আইন বিশেষজ্ঞ। সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল শুনানি চলাকালীন হাইকোর্টের রায় স্থগিত হয়ে থাকলে শুনানি শেষ হওয়ার আগে দ- কার্যকরের কোনো সুযোগ আইনে নেই বলে জানান সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে এ কথা জানান তিনি। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে চুয়াডাঙ্গার ২ আসামি মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি কার্যকরে কার গাফিলতি আছে তা তদন্ত করার পরামর্শ দেন সাবেক এই বিচারপতি।
অন্যদিকে, অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিনের দাবি, ডিজিটাইজেশনের অভাবে মোকিম-ঝড়ুর শুনানি নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে। এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যথাযোগ্য নিয়ম অনুসারে প্রতিটি ধাপ মেনেই তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। তাদের কোনো আপিল আমাদের কাছে বা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পেনডিং ছিল বলে জানা ছিল না। অপরদিকে, আপিল নিষ্পত্তির আগে ফাঁসি কার্যকরের ঘটনা সঠিক নয় দাবি করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, জেল আপিল শুনানি ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা নাকচের পরই তাদের দ- কার্যকর করা হয়েছে।
অপরাধ করলে আছে সাজার বিধান। তবে আসামির ন্যায় বিচার পাওয়ার বিধান রাখা হয়েছে বাংলাদেশ সংবিধানসহ দেশের প্রচলিত আইনে। যেখানে বিচারিক আদালত কারও বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করলে উচ্চ আদালতে আপিল করার অধিকার পান অভিযুক্ত ব্যক্তি। হাইকোর্টের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগে আপিল করেন। এরপর রিভিউ আবেদন সুযোগ থাকে। তবে এমন নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে চুয়াডাঙ্গার একটি হত্যা মামলার ২ আসামি মোকিম ও ঝড়ুর ক্ষেত্রে। আপিল বিভাগে শুনানি শুরুর ৪ বছর আগেই মোকিম-ঝড়ুকে ফাঁসি কার্যকর করে যশোর কারাকর্তৃপক্ষ। আর এ ঘটনার কঠোর নিন্দা জানিয়ে আইন বিশেষজ্ঞ বলছেন, এটি একটি হত্যাকা-। সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদের সুষ্পষ্ট নির্দেশ থাকার পরও মোকিম-ঝড়ুর আপিল শুনানি নিষ্পত্তির আগে তাদের মৃত্যুদ- দেয়ায় দোষীদের তদন্ত করে সাজা দেয়ার দাবি জানান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
ঘটনা ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন। চুয়াডাঙ্গায় খুন হন ইউপি মেম্বার মনোয়ার হোসেন। এ ঘটনায় ২০০৮ সালে ১৭ এপ্রিল মোকিম, ঝডুসহ তিনজনের মৃত্যুদ-ের রায় হয়। ২০১৩ সালে মোকিম ও ঝড়–র ফাঁসি বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এরপর আপিল করে তাদের পরিবার। গত ৩ নভেম্বর মামলাটি শুনানির জন্য আসে আপিল বিভাগের কার্যতালিকায়। আসামির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন মামলার আইনজীবী হুমায়ুন কবীর। তখনই জানা যায় চারবছর আগে ফাঁসির দ- কার্যকর হয়েছে তাদের।
এদিকে, মোকিম-ঝড়ুর ঘটনার জন্য কার্যতালিকার অ্যানালগ সিস্টেমকে দায়ী করে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেছেন, ডিজিটাইলাইজেশন হলে বিষয়টি নিয়ে বির্তকের সৃষ্টি হতো না। এ দুই আসামির ক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি বলেও দাবি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, একদম যথাযোগ্য নিয়ম অনুসারে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। প্রতিটি ধাপ মেনেই কাজ করা হয়েছে। আমাদের জানামতে তাদের কোনো আপিল আমাদের কাছে বা কারাকর্তৃপক্ষের কাছে পেনডিং ছিল বলে জানা ছিল না। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি জানান, আপিল নিষ্পত্তির আগে ফাঁসি কার্যকরের তথ্য সঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, আমার কাছে যে তথ্যাদি আছে সেটার সঙ্গে যে খবর প্রকাশ হয়েছে তার কিন্তু কোনো মিল নেই। মন্ত্রী বলেন, জেল আপিল শুনানির পর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা নাকচ করার পরই দ- কার্যকর করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জেল আপিলটা আপিল বিভাগে শুনানির পরে তাদের যে বিচারিক আদালতে এবং হাইকোর্টের দ-াদেশ পরে সেটা বহাল রাখা হয় এবং বহাল রাখার পরে আসামিদ্বয় রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চান। সেটাও নাকচ করার পর রায় কার্যকর করা হয়।
এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত চান ভুক্তভোগীদের পরিবার। আগামী সপ্তাহে হবে নিয়মিত আপিল আবেদনের শুনানি।