শিক্ষা বিভাগে শূন্য ২৭ শতাংশ পদ : সরকারি কলেজ-হাইস্কুলে সাড়ে ৫ হাজার খালি

দুই সংস্থায় নিয়োগে প্রশ্নপত্র কেলেঙ্কারির অভিযোগ : বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাওয়া যাচ্ছে না যোগ্য প্রার্থী

স্টাফ রিপোর্টার: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, দপ্তর ও সংস্থায় ২৭ শতাংশের বেশি পদ শূন্য আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ৪৯ হাজার ২৩৫ পদ আছে। কিন্তু এর মধ্যে ১৩ হাজার ৩৯৯ পদ দীর্ঘদিন শূন্য। এর বেশিরভাগই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সরকারি কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাড়ে ৫ হাজার পদে কোনো শিক্ষক নেই।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাসিক সমন্বয় সভায় এসব শূন্য পদের বিষয়ে আলোচনা হয়। পরে ওই সভা থেকে শূন্যপদ পূরণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান নির্দেশনা দিয়েছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উল্লিখিত শূন্যপদের সবই সরকারি প্রতিষ্ঠানে। এর বাইরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত ৭০ হাজার শিক্ষক ও কর্মচারীর পদ শূন্য আছে। জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি চতুর্থ শিক্ষক নিয়োগসংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও অন্তত অর্ধেক পদে প্রার্থীই পাওয়া যায়নি। মূলত যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না বিধায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসব পদে নিয়োগ দেয়া যায়নি।

সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সারা দেশে ১৩ হাজার ৩৯৯টি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে। তার মধ্যে সরকারি কলেজে শিক্ষক-কর্মকর্তার ১৬ হাজার ১৩২টি পদের মধ্যে ১৩ হাজার ১৮ জন জন কর্মরত আছেন। ৩ হাজার ৫২৯টি খালি রয়েছে। আর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১২ হাজার ৬০১টির মধ্যে ১ হাজার ৯৮২টি শূন্য আছে।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, সরকারি কলেজে বিসিএসের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। সর্বশেষ ৪০তম বিসিএসে নিয়োগ পেয়েছেন কিছু। এখন ৪১তম বিসিএসে আরও ৯শর মতো নিয়োগ পেতে পারে। এ ছাড়া আরও দু’তিনটি বিসিএস প্রক্রিয়াধীন আছে। তবে প্রতিদিনই অবসর-পদত্যাগ-মৃত্যুজনিত কারণে পদশূন্য হচ্চে। সুতরাং, বড় আকারে বা বিশেষ বিসিএস না হলে এসব পদ পূরণ হবে না। আর সরকারি হাইস্কুলে নিয়োগের জন্য সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে লেখা হয়েছে যেন বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়।

এছাড়া মাউশির অধীনে অন্তত ৬ হাজার কর্মচারীর পদ শূন্য আছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরেও বিভিন্ন পর্যায়ে ১ হাজার ৬৬১টি পদ শূন্য আছে। এর মধ্যে প্রথমটিতে ৪ হাজার পদে নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু এর একটি লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। সংস্থার সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর হালদারসহ কয়েকজন কর্মচারী ওই ঘটনায় জড়িত বলে চাউর হয়। একইভাবে প্রশ্ন কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে শিক্ষা প্রকৌশলের পরীক্ষা নিয়েও। ওই ঘটনায় সংস্থাটির উপ-পরিচালক যিনি এই নিয়োগ পরীক্ষায় সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন তার বিরুদ্ধে প্রকৌশলীরা অভিযোগ তোলেন। অভিযোগ আছে, ওই উপ-পরিচালক মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালীদের কাছের লোক। প্রভাবশালীদের নিয়োগ ও দরপত্রসংক্রান্ত তদবিরও তিনি তদারকি করেন। যে কারণে লিখিত অভিযোগের পরও মন্ত্রণালয় তা তদন্ত না করে সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর কাছ থেকে শুধু একটি প্রতিবেদন নিয়ে দায়িত্ব শেষ করে।

সূত্রমতে, এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে ১৪৪টি, ব্যানবেইসে ১৯৫টি, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলে ৪৩টি, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে ১৫৩টি, যশোর বোর্ডে ১৩৯টি, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ৫৩টি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে ৫২টি, জাতীয় শিক্ষা একাডেমিক (নায়েম) ৪৩টি, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে ৪৫ জনবল শূন্য রয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More