শিক্ষামন্ত্রীর কথায় সন্তুষ্ট নন শিক্ষকরা : আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ সম্ভব নয় : দীপু মনি

শিখনঘাটতি রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিতের নির্দেশ মাউশির : গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার: শিক্ষামন্ত্রীর কথায় সন্তুষ্ট নন শিক্ষকরা। ক্লাসে ফিরবেন না তারা। বরং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ৫ মিনিট সময় চেয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তিনি সময় না দেয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ এ ঘোষণা দেন। এর আগে দুপুর সাড়ে ৩টা থেকে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সেখান থেকে এসে সেগুনবাগিচার দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেন বিটিএ কেন্দ্রীয় নেতারা। এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষকদের নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে বৈঠকে চারটি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষকদের নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে বৈঠকে চারটি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সেগুলো হলো; বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ নিয়ে দুটি কমিটি করা হবে। নির্বাচনের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ সম্ভব নয়। গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল, শীতের ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। নভেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে বার্ষিক পরীক্ষা। অপরদিকে এ আন্দোলন চলা অবস্থায় করোনার শিখনঘাটতি রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীকরণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ সম্ভব নয়। একই সঙ্গে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ যাচাইয়ের জন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে দুটি কমিটি হওয়ারও কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, নির্বাচনের আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিটি পূরণ করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়া বিশেষভাবে এই মুহূর্তে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক এই অবস্থার মধ্যে আর্থিক বিরাট একটি বোঝা কাঁধে নেয়া কোনো সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, শিক্ষকরা যে জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছেন, এখানে যাতে কোনো বৈষম্য না থাকে, সেটি গবেষণা করে দেখার জন্য তাদের দায়িত্ব দেয়া হবে। আর এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর্থিক বিষয়টি গবেষণা করে দেখার জন্য আরেকটি কমিটি গঠন করে দেয়া হবে; তারা দেখবে এতে আমাদের আর্থিক সক্ষমতা অনুযায়ী কতদূর আগানো সম্ভব বা কত দ্রুত এটি আমরা দিতে পারব। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতনসহ অনেক খরচই সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানসমূহে দেয়া হয়, কিন্তু সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের আয় থেকে কোনো অর্থ নেয় না; এই পুরো বিষয়টি গবেষণা করে দেখা হবে।  শিক্ষামন্ত্রী জানান, এই দুটি কমিটি করার জন্য উপযুক্ত বিশেষজ্ঞ খুঁজে বের করা হবে। আমরা আশা করি, আগস্ট মাসের মধ্যে এই দুটি কমিটি গঠন করে দিতে পারবো। তারপর কমিটিকে তাদের কার্যপরিধি ঠিক করে দিতে হবে এবং কাজসমূহ সম্পন্ন করার জন্য কমিটিকে সময় দিতে হবে।

বিটিএ সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সভায় স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের নেতারা বলেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা নাকি স্বাধীনতাবিরোধী। আমরা এই মন্তব্যের তীব্র ধিক্কার জানাই। তবে শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার জন্য তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমরা বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে যে কমিটি গঠন করা হবে তাতে শিক্ষক প্রতিনিধিদের রাখার প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী তাতে রাজি হননি। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তিনি গ্রীষ্মের ছুটি বাতিল করেছেন। আমরা শিক্ষামন্ত্রীর এই সভায় সন্তুষ্ট হতে পারিনি। শিক্ষামন্ত্রীর বিভিন্ন আচরণেও আমরা কষ্ট পেয়েছি। তারপরও তিনি আমাদের অভিভাবক, তিনি যে কমিটি করে দিচ্ছেন এটিও আমাদের একটি বিজয়। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৫ মিনিট সময় চাই। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি সময় না দেবেন আমরা রাজপথ ছেড়ে ঘরে ফিরে যাব না। যতোক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে না বসবেন, যতো প্রকার পুলিশি নির্যাতন করা হোক, রক্ত ঝরুক, আমরা রাজপথ ছেড়ে যাব না।

এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষকদের নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে বৈঠকে চারটি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে গত সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ব্যানারে আন্দোলনে সরব রয়েছেন শিক্ষকরা। সারাদেশ থেকে কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এ আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিদিন কর্মসূচি পালন করছেন তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন শিক্ষকরা। দাবি আদায়ের জন্য মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন ইউনিটের শিক্ষকদের নেতাকর্মীরা। শিক্ষকদের অবস্থান ধর্মঘটের কারণে বন্ধ রয়েছে প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তা দিয়ে যান চলাচল। এতে তীব্র দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের।

শিক্ষকদের এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত রবি ও সোমবার সারা দেশে ক্লাস বন্ধ রেখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। গত সোমবার লাগাতার অবস্থানের একপর্যায়ে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাউশির মাধ্যমিক ও কলেজ শাখা পরিচালক, একজন উপপরিচালক ও পুলিশের কয়েকজন সদস্য।

টানা আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে শিক্ষক প্রতিনিধিদের দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা এবং আলোচনা করে সমাধানের আশ্বাস দেন মাউশি মহাপরিচালক। এ সময় তিনি চলমান আন্দোলন স্থগিতের জন্য শিক্ষক নেতাদের অনুরোধ করেন। তবে বৈঠক থেকে বের হয়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির নেতারা।

অন্যদিকে করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের শিখনঘাটতি রোধে ব্যবস্থা নেয়াসহ পাঁচ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা না মানলে ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার মাউশি পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল কবির স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ বলা হয়, দৈনন্দিন শিখন- শেখানো ও মূল্যায়ন কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে শিক্ষকদের ও তা পর্যবেক্ষণে প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিয়মিত উপস্থিতি অপরিহার্য। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও কোনো কোনো শিক্ষক নিয়মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত না থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করছেন। পাশাপাশি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডিরও কোনোরূপ নজরদারি না থাকায় নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

অফিস আদেশে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়। এগুলো হলো প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতে ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির সক্রিয় তদারকি, শিক্ষকদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের কার্যকর ভূমিকা, কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে শিক্ষার্থীদের শিখনঘাটতি পূরণে গৃহীত বিশেষ ব্যবস্থা কার্যকর, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে কোনোরূপ মিথ্যা ও উসকানিমূলক প্রচারণায় অংশগ্রহণ না করা, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More